Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা কুমারগঞ্জে

আবার একটি ধর্ষণ এবং আবার সে অভিযোগকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ। এ বার মুখ বন্ধ রাখার প্রস্তাব দু’বিঘা জমি এবং কিছু টাকা নিয়ে। বীরভূমে ভিন্-রাজ্যের নিগৃহীতা ছাত্রীর বাবাকে পুলিশে অভিযোগ জানাতে বাধা দেওয়ায় অভিযুক্ত হয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জে জমি ও টাকার বিনিময়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত তৃণমূলের ব্লক সভাপতির এক ছেলে। সেই ঘটনা চেপে দিতে চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত আজিজুর রহমান সরকার।

অভিযুক্ত আজিজুর রহমান সরকার।

অনুপরতন মোহান্ত
কুমারগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২৩
Share: Save:

আবার একটি ধর্ষণ এবং আবার সে অভিযোগকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ। এ বার মুখ বন্ধ রাখার প্রস্তাব দু’বিঘা জমি এবং কিছু টাকা নিয়ে।

বীরভূমে ভিন্-রাজ্যের নিগৃহীতা ছাত্রীর বাবাকে পুলিশে অভিযোগ জানাতে বাধা দেওয়ায় অভিযুক্ত হয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জে জমি ও টাকার বিনিময়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত তৃণমূলের ব্লক সভাপতির এক ছেলে। সেই ঘটনা চেপে দিতে চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি রবিবার বিকেলের। ছাত্রীটি আশঙ্কাজনক অবস্থায় মালদহ মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। তার পরিবারের ক্ষোভ, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার ছেলে বলেই পুলিশ-হাসপাতাল-সহ নানা স্তরে তাদের নানা অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। এমনকী, অনেকটা ধূপগুড়ির ঢঙেই ওই পরিবারটির গতিবিধির উপরে শাসক দলের তরফে নজর রাখা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র অবশ্য বলেছেন, “ধর্ষণ বা অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা প্রমাণ হলে, পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেবে। দলের তরফেও দেখা হবে অভিযোগ ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল কি না। প্রমাণ মিললে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”

এই আশ্বাসে অবশ্য ভরসা নেই বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের। এ দিন বালুরঘাটে দলীয় অনুষ্ঠানে তাঁর মন্তব্য, “ধূপগুড়ি থেকে কুমারগঞ্জ যা ঘটে চলেছে, ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। যত ভাবেই চেষ্টা হোক না কেন, দোষীরা পার পাবে না। শেষ দেখে ছাড়ব।” দক্ষিণ দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস সালভে মুরুগন বলেন, “অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছে। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর বারোর ওই ছাত্রী অনাথ। মামাবাড়িতে থাকে। কয়েকটি বাড়ি পরেই থাকে তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আলি আজম সরকারের ছোট ছেলে আজিজুর রহমান সরকার। মেয়েটির দিদিমা জানান, রবিবার বিকেল ৩টে নাগাদ অভিযুক্তের স্ত্রী মেয়েটিকে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যায়। স্ত্রী এবং দুই ছেলের অনুপস্থিতিতে বছর পঁচিশের আজিজুর ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েটি বাড়ি ফিরতেই শুরু হয় হইচই। মেয়েটির মামাবাড়ির দাবি, সেই সময়েই দু’বিঘা জমি এবং টাকা নিয়ে তাদের মুখ বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় ‘পুলিশ-প্রশাসন আমাদের হাতে’ বলে অভিযুক্তের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ হুমকি দেন বলেও অভিযোগ। এ দিন গ্রামে গিয়ে একাধিক পড়শির মুখে শোনা গেল, “যা হয়েছে, খারাপ হয়েছে।”

মেয়েটির এক মামার অভিজ্ঞতা, “ধর্ষণের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বা হাসপাতালের যে ভূমিকা হওয়ার কথা তার কোনওটাই দেখিনি।” তাঁর দাবি, পুলিশ বাড়িতে এসেছিল। কিন্তু অভিযোগ নথিভুক্ত না করে আগে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। বালুরঘাট হাসপাতালে ‘ভাগ্নি’র প্রাথমিক চিকিৎসা হলেও, সেখান থেকে পুলিশকে ব্যাপারটি জানানো হয়নি। পরে শারীরিক অবস্থা ‘গুরুতর’ বলে মেয়েটিকে মালদহ মেডিক্যালে পাঠানো হয়। সেখানে ভর্তির সময়ে ‘পুলিশ কেস’ বলে উল্লেখ করা হলেও ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি পুলিশকে জানাননি। ছাত্রীটির মামা বলেন, “অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার ছেলে। তাই হয়তো এমনটা ঘটছে।”

কুমারগঞ্জের ওসি গণেশ শর্মার অবশ্য দাবি, কিশোরীর বাড়ি থেকে রক্তমাখা কাপড় জোগাড় করা থেকে শুরু করে, তালা খুলে অভিযুক্তের বাড়িতে ঢোকাসব কিছু তিনি নিজের উদ্যোগে করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “মেয়েটি অত্যন্ত অসুস্থ ছিল বলেই ওকে আগে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলাম।” বালুরঘাট হাসপাতাল এবং মালদহ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, কেন সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনা পুলিশকে জানানো হয়নি, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। অভিযুক্তের বাবা এ দিন কথা বলতে চাননি। তবে তাঁর মেজো ছেলে আনিসুর আলি সরকার বলেন, “জমি-টাকা দিয়ে অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। ভাই ধরা পড়লে, পুলিশ যা করার করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE