Advertisement
E-Paper

তৃণমূল প্রার্থীই সরকারি, এ বার ঘোষণা রবির

নির্বাচন কমিশন শো-কজ করার পরেও যেন বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষের। এ বার, রবিবার, ছুটির দিন বাড়ি-বাড়ি ঘুরে দলীয় প্রার্থীদের ‘সরকারি প্রার্থী’ হিসেবে দাবি করে তাঁদের হয়ে ভোট চেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ঠিক যে সুর শোনা গিয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। যা দেখেশুনে বিরোধীরা বলছেন, নেত্রীর মনের কথাই তো বলেছেন রবীন্দ্রনাথবাবু।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৯
রবীন্দ্রনাথ ঘোষ

রবীন্দ্রনাথ ঘোষ

নির্বাচন কমিশন শো-কজ করার পরেও যেন বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষের। এ বার, রবিবার, ছুটির দিন বাড়ি-বাড়ি ঘুরে দলীয় প্রার্থীদের ‘সরকারি প্রার্থী’ হিসেবে দাবি করে তাঁদের হয়ে ভোট চেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ঠিক যে সুর শোনা গিয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। যা দেখেশুনে বিরোধীরা বলছেন, নেত্রীর মনের কথাই তো বলেছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। আর রবিবাবুর নিজের দলের লোকেদের মধ্যে আলোচনা, মুকুল-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয়ের ফলে ক্রমে কোণঠাসা হয়েই কি তিনি শেষে আর এক অনুব্রত মণ্ডল হওয়ার চেষ্টা করছেন?

ক’দিন আগে বাগডোগরা বিমানবন্দরে মমতা বলেছিলেন, ‘‘সরকারে ও স্থানীয় ক্ষেত্রে একই দল থাকলে উন্নয়নে সুবিধে হয়। না হলে উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে।’’ রবিবার রবিবাবুর গলাতেও সেই সুর শোনার পরে বিরোধীদের একাংশ এর মধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, এ বার কি তা হলে বিরোধীদের পুরবোর্ড হলে উন্নয়নের টাকা মিলবে না?

রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য এই প্রথম বেফাঁস মুখ খুললেন না। গত শুক্রবার কোচবিহারে দলের কর্মিসভায় মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনেই তিনি বলেন, ‘‘জোড়া ফুল চিহ্নে ভোটটা করাবেন। প্রশাসনিক এবং অন্য যে মদত প্রয়োজন হবে, প্রত্যেকটা করব।’’ এই কথা বলার জন্য তাঁকে শো-কজ করে নির্বাচন কমিশন। রবীন্দ্রনাথবাবু এখনও সেই জবাব জমা দেননি। তার আগেই আরও এক বার মুখ খুলে নতুন বিতর্ক তৈরি করলেন।

কিন্তু কেন? তৃণমূলের অন্দরের খবর, একদা মুকুল-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্রনাথবাবুকে পুরভোটের পরে দলের জেলা সভাপতি পদ থেকে সরানো হতে পারে। আর সে কথা আঁচ করেই তিনি শিরোনামে থাকতে মরিয়া। কারণ, মুকুল রায় ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে জেলা তৃণমূলে রবিবাবুর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী বলে পরিচিত জলিল আহমেদকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। বনমন্ত্রী বিনয় বর্মনকে জেলার কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে। এ বারের পুরভোটে কোচবিহারের ৪ পুরসভার প্রার্থী তালিকা বাছার সময়ে রবিবাবুর পছন্দের বহু নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য তৃণমূলের এক নেতার ধারণা, এই পরিস্থিতিতে জেলা সভাপতি পদও চলে যেতে পারে আশঙ্কা করে হয়তো ‘অনুব্রত মণ্ডল, মনিরুল ইসলাম’-এর মতো ডাকাবুকো মন্তব্য করে ঘরে-বাইরে নজরে আসতে চাইছেন রবিবাবু। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, অনুব্রত বা মনিরুলরা একাধিক বার বিতর্কিত মন্তব্য করেও ছাড় পেয়ে গিয়েছেন। উল্টে অনুব্রতর পাশে দাঁড়িয়েছেন দলনেত্রী। এই সব দেখেই সম্ভবত মুখ খুলতে শুরু করেছেন রবিবাবু। দলের নেতাদের একাংশ বলছে, কোচবিহার জেলা সভাপতির কিন্তু অতীতে এমন কথা বলার নজির নেই। গত লোকসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় বিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে ‘হাড় হিম করা চাপা সন্ত্রাস’ চালানোর অভিযোগ তুললেও জনসমক্ষে রবিবাবু নিজের ‘মৃদুভাষী’ ও ‘নরম মনের মানুষ’ জাতীয় ভাবমূর্তি ধরে রাখতেই সচেষ্ট ছিলেন।

এখন রবিবাবুর আচমকা চড়া সুরে দলের একাংশ অবাক। বিষয়টি নজরে এসেছে পার্থবাবুরও। ঘটনাচক্রে, পুরভোটের কাজে পার্থবাবু এখন শিলিগুড়িতে। তিনি বলেন, ‘‘গত শুক্রবারই তো রবিকে সাবধান করেছি। কোথায় বুঝতে ভুল হয়েছে, সেটা ও বুঝতে পেরেছে। এ বার কোন প্রেক্ষাপটে কী উদ্দেশ্য নিয়ে বলেছে, খোঁজ নিয়ে দেখি। তার পরে প্রয়োজন হলে পদক্ষেপ করব।’’

বিরোধীরা কিন্তু আঙুল তুলেছেন সরাসরি দলনেত্রীর দিকে। বাগডোগরায় মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছিলেন, সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল নেত্রীর মনের কথাই কোচবিহারে তাঁদের দলের জেলা সভাপতি বলছেন।’’ কোচবিহারের সিপিএম নেতাদেরও আক্ষেপ, খোদ মুখ্যমন্ত্রী সরকার ও দল মিশিয়ে ফেললে তো পারিষদেরা কয়েক ধাপ এগোবেই। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “তবুও কমিশন কোনও কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে মনে হয় না।” যে ওয়ার্ড থেকে এ দিন সকালে তৃণমূল জেলা সভাপতি প্রচার করেছেন, সেখানকার সিপিএম প্রার্থী মহানন্দ সাহার দাবি, ‘‘রবীন্দ্রনাথবাবুকে ভোট-বিধি ভঙ্গের জন্য গ্রেফতার করা উচিত।’’

পার্থবাবু অবশ্য মমতার বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, এই ব্যাপারে কোনও সংশয় থাকা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তার ব্যাখ্যা স্পষ্ট। রাজ্য ও স্থানীয় ক্ষেত্রে একই দল ক্ষমতায় থাকলে নীতিগত সিদ্ধান্ত রূপায়ণ মসৃণ হয়। বিরোধীরা সেটার অপব্যাখ্যা করছেন। দলের কেউ ভুল ব্যাখ্যা করলে তাঁকে শুধরে দেওয়া হবে।’’

অবশ্য রবীন্দ্রনাথবাবু ‘ভুল-ঠিক’ নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন। তাঁর সাফ কথা, ‘‘রাজ্য সরকার পুরসভার উন্নয়নে টাকা দেয়। সেই সরকারের প্রার্থীকে জোড়া ফুল চিহ্নে ভোট দিতে বলায় অন্যায় নেই। ভোটে জিততে হবে।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘লোকসভা, বিধানসভার ভোট আলাদা। যে দলের কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে, যে দল রাজ্যে সরকারে রয়েছে, যে দলের পুরমন্ত্রী রয়েছে, সেই দলের প্রার্থীকেই ভোটটা দেওয়া উচিত। অন্য কাউকে দিলে ভোটটা নষ্ট হবে।”

ঘটনা হল, রবীন্দ্রনাথবাবুর ওই বক্তব্যের পরে কোচবিহার তো বটেই, মালদহ, উত্তর ২৪ পরগনা এবং কলকাতাতেও সন্ত্রাসের অভিযোগ বেড়েছে। তা ‘রবীন্দ্রনাথ এফেক্ট’ বলেই বিরোধীরা কটাক্ষ করেছেন। কোচবিহার সদর মহকুমাশাসক তথা মহকুমা নির্বাচনী আধিকারিক বিকাশ সাহা বলেন, “রবীন্দ্রনাথবাবুর এ দিনের বক্তব্যের ভিত্তিতে ফের নোটিস পাঠানো হয়েছে। দু’দিনের মধ্যে উত্তর চাওয়া হয়েছে।’’

trinamool municipal election Rabindranath Ghosh Coochbehar bjp congress election campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy