Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Siliguri Municipal Corporation

Siliguri municipal election 2022: অশোক ‘স্তম্ভ’ নড়বড়ে হয়েছে আগেই, এ বার গেরুয়া উত্থানও থামিয়ে শিলিগুড়ি তৃণমূলের

বিপুল জয়ের পর গৌতম দেব বলেন, ‘‘আজ আমরা দিদিকে অর্ঘ্য নিবেদন করব। প্রথমেই বলেছিলাম, ৪০ আসনে জিতব। শিলিগুড়ি জয়ে বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।’’

সবুজ ঝড়ে দীর্ঘ দিনের বাম ঘাঁটি শিলিগুড়ি পুরনিগমও তৃণমূলের দখলে চলে এল।

সবুজ ঝড়ে দীর্ঘ দিনের বাম ঘাঁটি শিলিগুড়ি পুরনিগমও তৃণমূলের দখলে চলে এল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:৩৯
Share: Save:

সবুজ ঝড়ে দীর্ঘ দিনের বাম ঘাঁটি শিলিগুড়ি পুরনিগমও তৃণমূলের দখলে চলে এল। রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য শিলিগুড়ি পুরসভায় বিজেপি-র প্রভাব দেখা গিয়েছিল। কিন্তু পুরনির্বাচনে ৪৭ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে গত ২৭ বছরে এই প্রথম বার পুর বোর্ড গঠন করতে চলেছে জোড়াফুল শিবির। সোমবার সকালে ভোটগণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই ছবিটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। জয় ঘোষণা ছিল সময়ের অপেক্ষা। তার মাঝেই তৃণমূলের সর্বময়নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, শিলিগুড়ির পরবর্তী মেয়র হতে চলেছেন গৌতম দেব।

৪৭ ওয়ার্ডের শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৩৭টি ওয়ার্ডে জয়লাভ করেছে রাজ্যের শাসক দল। পাঁচটি ওয়ার্ডে জিতেছে বিজেপি এবং তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা বামেদের দখলে রইল মাত্র চারটি ওয়ার্ড। আর কংগ্রেসের দখলে একটি। ঘটনাচক্রে, সোমবারই উত্তরবঙ্গে সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। রওনা হওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘‘আমি খুশি। শিলিগুড়িতে জয়ের খবর নিয়ে যাচ্ছি। এটা আমার কাছে বড় ব্যাপার। গৌতম দেব মেয়র হবে শিলিগুড়ির। কারণ ও প্রবীণ নেতা। অন্য জায়গাগুলিতে দল সিদ্ধান্ত নেবে।’’

গত লোকসভায় উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের ভরাডুবির পর বিধানসভা নির্বাচনেও শিলিগুড়িতে দলকে জয় এনে দিতে পারেননি গৌতম। নিজেও প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন। কিন্তু তার পরেও গৌতমেই ভরসা রেখেছিলেন দলনেত্রী মমতা। বিপুল জয়ের পর গৌতম বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির মানুষের হয়ে আজ আমরা দিদিকে অর্ঘ্য নিবেদন করব। এই জয় শিলিগুড়ির মানুষকে উৎসর্গ করছি। প্রথমেই বলেছিলাম, ৪০ আসনে জিতব। শিলিগুড়ি জয়ে বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।’’

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে গৌতম বিজেপি প্রার্থী শিখা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে হেরে যান। তার পর গত আট মাস ধরে তিনি শিলিগুড়ি পুরনিগমে প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ছিলেন। যে আসন থেকে বিধানসভায় হেরেছিলেন, সেই ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত শিলিগুড়ি পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন গৌতম।

গত বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে এই পুরভোটে শিলিগুড়িতে বিজেপি-র ভোট শতাংশ অনেক কমেছে। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের কাছে বড় ‘আশঙ্কা’-র কারণ, বিধানসভা নির্বাচনের সময় সিপিএম থেকে বিজেপি-তে যাওয়া শঙ্কর ঘোষের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে হেরে যাওয়া। বিধানসভায় প্রায় ৩৫ হাজার ভোটে জেতা শঙ্কর নিজের পাড়াতেই হেরে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ বারের ভোটে তৃণমূলের পক্ষে হাওয়া দেখলাম। আমিও হেরেছি। আমি মনে করি, পাড়ার জন্য যতটা করার ততটা করেছি। আমি গত ৬ বছর পাড়াকে সাজিয়েছি অক্লান্ত ভাবে। সেই জায়গায় এই ফল অপ্রত্যাশিত। মানুষ আমাকে গ্রহণ করেননি, এটা আমার কাছে আঘাত। ফল নিয়ে সাংগঠনিক ভাবে আলোচনা দরকার। এটা সেট ব্যাক। হেরে গিয়ে কাউকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না।’’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, গত লোকসভা এবং বিধানসভায় বিজেপি-তে যাওয়া বামেদের ভোটব্যাঙ্ক এ বার তৃণমূলের ঘরে এসেছে। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা শিলিগুড়ি পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘একটা বিপর্যয় হয়েছে। আমাদের যে ভোট বিজেপি-তে গিয়েছিল, সেই ভোট আমাদের কাছে ফেরত আসার বদলে তৃণমূলের বাক্সে ঢুকেছে। আমাদের পলিটিক্যাল রিজেকশন হয়েছে। তবে কমিউনিস্ট পার্টি করি, হতাশায় ডুবে গিয়ে, ঘরে বসে গেলে হবে না।’’ ৫১০ ভোটে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী মহম্মদ আলম খানের কাছে নিজেও হেরে গিয়েছেন অশোক।

২০১৫-য় শিলিগুড়িতে পুরসভা ভোটে অশোক প্রণীত শিলিগুড়ি মডেল বিরোধীদের আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্ত হয়ে উঠেছিল। প্রথমে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে পরে নির্দলের সমর্থনে সে বার শিলিগুড়িতে পুরবোর্ড গড়েছিলেন অশোক। সেই বোর্ড পুরো মেয়াদ টিকে যায়। এ বার এই প্রথম শিলিগুড়ি শহরের বুকে উ়ড়ল তৃণমূলের সবুজ পতাকা। পরাজয়ের পর অশোক বলেন, ‘‘হারের সমস্ত কারণ পর্যালোচনা করা হবে। এটা রাজনৈতিক ভাবে আমার বিপর্যয়। ব্যক্তিগত বিপর্যয় ঘটেছিল কিছু দিন আগে। তবে ভোটে তো হার-জিৎ থাকবেই। মেনে নিতে হবে।’’

অন্য দিকে, শিলিগুড়িতে তৃণমূলের বিপুল জয়ের জন্য বামেদেরই দায়ী করেছেন কংগ্রেস নেতা শঙ্কর মালাকার। তিনি বলেন, ‘‘বামফ্রন্টের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও অশোক ভট্টাচার্যের অহঙ্কারই ডুবিয়েছে। বার বার জোটের কথা বলেও তারা আগেভাগে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলেছে। জোট বেঁধে কংগ্রেস-বাম লড়াই করলে ভোটারদের আস্থার অর্জন করতে পারা যেত।’’

তৃণমূলের জয় নিয়ে শিলিগুড়ির প্রবীণ বাসিন্দা গৌরী শঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজনৈতিক জ্যোতিষীদের কোনও কথাই মেলেনি। তাবড় তাবড় রাজনীতিবিদেরা হেরে গেলেন। তবে যাঁরা ক্ষমতায় এলেন, তাদের যেন কথা এবং কাজের মধ্যে মিল থাকে। মানুষ অনেক আশা করে তাঁদের নিয়ে এসেছে।’’

২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক প্রবীর বর্মণ বলছেন, ‘‘শাসকদল নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকলেও লক্ষী ভান্ডার, কন্যাশ্রী, যুবশ্রীর মতো প্রকল্পের কারণেই মানুষ তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছে। সাধারণ মানুষকে যেন ফের ঠকতে না হয়। শিলিগুড়িকে আগে যানজট মুক্ত করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE