শোকাহত: মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর সঞ্জয়ের পরিবার। নিজস্ব চিত্র
পাড়া জুড়ে সেদিন শোকের কালো ছায়া। পাড়ার কোনও বাড়িতে জ্বলেনি উনুন৷ দিনভর অভুক্ত থেকে শুধু চোখ মুছে চললেন বাসিন্দারা৷ দেশের জন্য কাজ করতে গিয়েছিলেন পাড়ারই ছেলে৷ আগামী সোমবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার৷ কথা ছিল, বাড়ি ফিরে এখনও বাকি থাকা ঘর তৈরির কাজ এবার শেষ করবেনই৷ তার আগেই ছেলে ফিরল। কিন্তু কফিনবন্দী হয়ে। প্রিয় সঞ্জয়কে যে এইভাবে দেখতে হবে তা যেন মানতে পারছেন না কালচিনির মেচপাড়া চা বাগানের বাসিন্দারা৷
ওই বাগানেরই লোদো লাইনে বাড়ি বিএসএফ জওয়ান সঞ্জয় তিরকির (২৯)৷ ২০১২সালে বিএসএফের চাকরিতে যোগ দেন তিনি৷ শুরু থেকেই তিনি কাজ করছিলেন মণিপুরের ইম্ফলে৷ বিএসএফ ক্যাম্পের পাশেই একটি বাড়ি ভাড়া করে স্ত্রীকে নিয়ে থাকছিলেন৷
সঞ্জয়ের বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন, বুধবার ডিউটি শেষ করে ক্যাম্প থেকে ভাড়া বাড়িতে ফিরছিলেন সঞ্জয় সহ আরও এক বিএসএফ জওয়ান৷ আচমকা বৃষ্টি নামায় ছুটে পাশের একটি দোকানের সামনে দাড়ান তারা৷ তখনি সেখানে বোমা বিস্ফোরনে সঞ্জয় ও তার সঙ্গীর মৃত্যু হয়েছে বলে বিএসএফ কর্তাদের থেকে তার পরিবারের লোকেরা জানতে পেরেছেন৷
বাড়ির সামনে লোকজনের ভিড় দেখে কিছু একটা হয়েছে তা সন্দেহ করছিলেন সঞ্জয়ের বাবা আর দিদি। অবসরপ্রাপ্ত চা শ্রমিক সঞ্জয়ের বাবা বিষ্ণু তিরকি বলেন,‘‘রাতে ভাল করে ঘুম হয়নি৷ এদিন সকালে বাড়ির সামনে ভিড় আরও বেড়ে যেতে দেখে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করি৷ তখন ও কান্নায় ভেঙে পড়ে৷” আর বুঝতে অসুবিধা হয়নি ওই বৃদ্ধের৷ বাড়ির লোকেরা জানান, বিষ্ণুবাবুর স্ত্রীর মৃত্যুর সময় তার তিন ছেলে-মেয়ে একেবারেই ছোট ছিল৷ পড়াশোনা করে নিজেরাই নিজেদের পায়ে দাঁড়ান৷
সঞ্জয়ের দিদি রীণা তিরকিরকথায় জানান ছোটবেলা থেকেই আমরা কাঠের ঘরে মানুষ তারা। দুই বছর আগে সঞ্জয় পাকা ঘর তৈরি শুরু করে৷ যার কাজ কিছুটা বাকি৷ ১৪মে কিছুদিনের জন্য ছুটিতে বাড়িতে আসার কথা ছিল ওর৷ তখনই ঘর তৈরির বাকি কাজ শেষ করবে বলে দিন দুয়েক আগে ফোনেও জানিয়েছিল৷ সে স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল।
বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে সঞ্জয়ের কফিনবন্দী দেহ পৌঁছানোর কথা৷ তাই সকাল থেকেই তার বাড়িতে পাড়ার লোকেদের ভিড়৷ দুপুরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় সঞ্জয়ের বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে সমবেদনা জানিয়ে আসেন৷ সঞ্জয়ের বন্ধু গোবিন্দ লামা, কিষাণ লামারা বলেন,‘‘এমন একটি ঘটনায় খুবই খারাপ লাগছে৷’’ পাশাপাশি দেশের কাজে গিয়ে বন্ধু শহীদ হয়েছে ভেবে গর্বিত তারা। গর্বিত সঞ্জয়ের বাড়ির লোকেরাও৷ চোখের জল মুছে ব বিষ্ণুবাবু বললেন, ‘‘আমার যদি বয়স থাকত, তবে আমিও ছেলেদর মতই দেশের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতাম৷’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy