জীবন: বেলুন বিক্রি করতে পথে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র
কেউ স্কুলে পড়ে। কেউ আবার পেটের দায়ে স্কুলছুট। দশ থেকে বারো বছরের ওই শিশুদের আরও একটা পরিচয় রয়েছে। ওরা সবাই খেলনা বিক্রেতা।
শিশুদিবস কী, কেন পালিত হয় সেসব কিছুই তারা জানে না। ছোটু, দিলীপরা জানে সংসারের জন্য দিন গেলে অন্তত একশো-দেড়শো টাকা রোজগার করতে হবে তাদের। তাই সকাল হতেই শিশুদের প্লাস্টিকের খেলনা নিয়ে বিক্রির জন্য তারা চলে যায় ইংরেজবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় থাকা শিশু চিকিত্সকদের প্রাইভেট চেম্বারের সামনে। শিশুদিবসের দিনেও ছবিটা একই ছিল।
মঙ্গলবার সকাল দশটা। ইংরেজবাজার শহরের কেজে স্যান্যাল রোডে রাজধানী মোড়ের কাছে শহরের এক শিশু বিশেষজ্ঞের চেম্বারের সামনে শিশুদের খেলনা নিয়ে দাঁড়িয়ে বালুচরের বছর বারোর দিলীপ দাস ও ছোটু চৌধুরী। দিলীপ এখন শিবচন্দ্র স্মৃতি জুনিয়র হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোটু একবছর আগেই ওই স্কুলেই ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে লেখাপড়ায় ইতি দিয়েছে। দু’জনেরই বাবা ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে। দিলীপ জানালো, বাড়িতে মা রয়েছে। আরও তিন ভাই-বোন রয়েছে। সে সবার চেয়ে বড়। বাবার পাঠানো টাকায় সংসার চলে না বলে এই বয়সেই রোজগারে নামতে হয়েছে দিলীপকে। এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্লাস্টিকের ওই খেলনা নিয়ে তা বিক্রি করে সে। চারশো-পাঁচশো টাকা বিক্রি হয় দিনভর। সেই টাকা মালিকের কাছে দিলে দিলীপের পাওনা বড়জোর একশো থেকে দেড়শো টাকা। আর স্কুল? কাজের জন্য সেখানে যে রোজ যাওয়া হয় না তাও জানাতে ভুলল না ছোট দিলীপ। বিক্রিবাট্টা করে সন্ধেয় রোজগারের টাকা মায়ের হাতে তুলে দেওয়াতেই তৃপ্তি খুঁজে নিতে হয়েছে এই খুদেদের।
শুধু ছোটু, দিলীপরাই নয়। আনন্দ, মোজাম্মেল, বুবাই, ইমন নামের তালিকা আরও বড়। এরা সবাই ঘুরে ঘুরে দিনভর খেলনা বিক্রি করে। জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে এ দিন ঘটা করে শিশুদিবস পালন করা হলেও তার বাইরে থেকে যায় ছোটুরা। স্কুলছুটদের ভর্তি করতে বছরভর জেলাজুড়ে অভিযান চলে। কিন্তু পেটের টানের কাছে বারবার হেরে যেতে বাধ্য হয় স্কুলের টান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy