Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Death

পণ চেয়ে বধূ খুনের অভিযোগ

রাতেই ফোন করে মাকে বলেছিলেন মেয়ে হাসিনা। আগে থেকেই তাঁর উপর নির্যাতন চলছিল।

ভেঙে পড়েছেন হাসিনার মা। নিজস্ব চিত্র

ভেঙে পড়েছেন হাসিনার মা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হরিশ্চন্দ্রপুর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:১১
Share: Save:

‘‘ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’’

রাতেই ফোন করে মাকে বলেছিলেন মেয়ে হাসিনা। আগে থেকেই তাঁর উপর নির্যাতন চলছিল। এ কথা শোনার পর থেকে আরও চিন্তায় পড়েন মা। ভেবেছিলেন এ নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে কথা বলতে হবে।

কিন্তু মিলল না সে সময়টুকুও। তারপর দিনই সকালে শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার হল হাসিনা খাতুনের (২২) দেহ। শ্বশুরবাড়ির লোকজন আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও বধূর পরিবারের অভিযোগ, পণের টাকা না পেয়েই তাঁকে খুন করা হয়েছে। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের সাহাপুরে সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটে। দুপুরে পুলিশ তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করে।

মাঝরাতে ওই বধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে বলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি। তবে পুলিশ জানায়, প্রতিবেশীরা বিষয়টি মানতে চাননি। আর পুলিশ গিয়েও বধূকে শোওয়ার ঘরে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। তবে স্বামী গ্রেফতার হলেও ঘটনায় অভিযুক্ত বধূর শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যেরা পালিয়ে গিয়েছেন। হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ময়নাতদন্তেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ওই ঘটনায় স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

বধূর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন বছর আগে রতুয়ার হরগোবিন্দপুর এলাকার হাসিনার বিয়ে হয় সাহাপুরের শেখ কলিমুদ্দিনের সঙ্গে। কলিমুদ্দিন ভিন্‌রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। বধূর পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের কিছুদিন বাদেই কলিমুদ্দিন অন্য রাজ্যে যাবেন বলে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা দেওয়াও হয় বলে খবর। কিন্তু ঠিকাদার সেই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ফের ৬০ হাজার টাকা চায় কলিমুদ্দিনরা। হাসিনার পরিবার জানায়, সেই টাকাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বছরখানেক আগে নিজে আলাদা জায়গায় বাড়ি করবে বলে কলিমুদ্দিন শ্বশুরবাড়ি থেকে ফের মোটা টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ। সেই টাকা দিতে না পারায় হাসিনার উপরে নির্যাতন শুরু হয়। আরও অভিযোগ, টাকা না পেয়ে গত বছর তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হাসিনার পেটে লাথি মারায় তাঁর গর্ভপাত হয়ে যায়। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকার পর সুস্থ হয়ে বাপের বাড়িতেই ছিলেন হাসিনা। তা নিয়ে এলাকায় সালিশি সভাও বসে। সেখানে নির্যাতন করা হবে না বলে আশ্বাস দেওয়ার পর শ্বশুরবাড়িতে ফেরেন ওই বধূ।

বধূর বাবা তাজামুল সাই এ দিন বলেন, ‘‘রাতেই মেয়েটা মাকে ফোন করে বলেছিল যে ওরা ওকে বাঁচতে দেবে না। সকালে এলাকারই এক আত্মীয়ের ফোনে জানতে পারি যে, মেয়ে আর বেঁচে নেই। মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। ওরাই ওকে খুন করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Dowry Harishchandrapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE