Advertisement
E-Paper

বদলে গিয়েছে ভোটের ছবি, উদ্বেগ তৃণমূলে

এক সময় বামেদের দাপট চলত। শাসন ক্ষমতা পরিবর্তন হওয়ার পরে গত পাঁচ বছরে ধরে চলেছে তৃণমূলের দাপট। ক্যাম্প অফিস থেকে বুথ সর্বত্রই শাসকের ডাকাবুকো নেতারা ঘুরতেন।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০২:৪৯
তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর।

তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর।

এক সময় বামেদের দাপট চলত। শাসন ক্ষমতা পরিবর্তন হওয়ার পরে গত পাঁচ বছরে ধরে চলেছে তৃণমূলের দাপট। ক্যাম্প অফিস থেকে বুথ সর্বত্রই শাসকের ডাকাবুকো নেতারা ঘুরতেন। বিরোধী কাউকে দেখলে প্রথমে চোখ রাঙানো পরে লাঠির দুই-চার ঘা পড়ে যেত। পুলিশ গিয়ে হাত জোড় করে কাকুতি-মিনতি করে বিরোধীদের সরে যাওয়ার পরামর্শ দিত। তাতেও কাজ না হলে শাসকের হয়ে লাঠি ধরত পুলিশ। এর পরে বুথের ভিতরে চলত অবাধে ছাপ্পা।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে একাধিক বুথে ওই ছাপ্পার ঘটনা চায়ের দোকানে বসে গর্ব করে বলতে শোনা গিয়েছে তৃণমূলের অনেক মারকুটে নেতা কর্মীকে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে এক তৃণমূল কর্মী বলেন, “পঞ্চাশটি ভোট দিলাম।” এ বারে ওই কর্মীই বলেন, “নিজের ভোট দিয়েছি। ছাপ্পা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না।”

এই পরিস্থিতিতে পুলিশের একাংশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে দলের শতাধিক নির্বাচনী ক্যাম্প অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ তুলল তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, শুধুমাত্র নাটাবাড়ি বিধানসভা এলাকাতেই মোট ৪০টি নির্বাচনী ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করা হয়। জেলার দিনহাটা থেকে মেখলিগঞ্জ বাকি ৮টি বিধানসভাতেও গড়ে ৮-১০টি করে নির্বাচনী ক্যাম্প অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। নাটাবাড়ি বিধানসভা এলাকায় ক্যাম্প অফিস ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের অভিযোগ, পরিকল্পিত ভাবে পুলিশের একাংশ, প্রশাসনের কিছু কর্মীর মদতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা সকাল থেকে জেলা জুড়ে তাণ্ডব শুরু করে। ভোটের দিন আতঙ্ক ছড়ানোর পাশাপাশি সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপিকে সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। যার জেরেই সমস্যা তৈরি হয়। বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “জেলা জুড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ, প্রশাসনের বাম মনোভাবাপন্ন কিছু লোক তাণ্ডব চালায়। নিয়ম মেনে তৈরি আমাদের শতাধিক ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করা হয়। বাড়িতে ঢুকেও বেপরোয়া পেটানো হয়। আতঙ্কের বাতাবরণ করে বিরোধীদের সুবিধে করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছি। শেষ পর্যন্ত মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পেরেছেন। তৃণমূলের জয় স্রেফ ঘোষণার অপেক্ষা।”

বিরোধীরা অবশ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় খুশি। তাদের বক্তব্য, পুলিশ ও বাহিনীর তৎপরতায় জেলাজুড়ে তৃণমূলের ভোট লুঠের ছক পুরো ভেস্তে গিয়েছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, কোচবিহার জেলা জুড়েই কিছু সংখ্যক বুথকে টার্গেট করে ভোট জেতার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছিল তৃণমূল। বুথ জ্যাম করে ছাপ্পা দেওয়া থেকে বিরোধী ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার নানা ছক করা হয়। বহু এলাকাতেই বিধি ভেঙে ভোট কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে ক্যাম্প অফিস তৈরি করে ওই কাজে নজরদারি চালানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল। বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টরা যাতে সর্বত্র পৌঁছতে না পারেন, সেই ছকও ছিল। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্তদের তৎপরতায় সকাল থেকেই জেলা জুড়ে অলিগলিতে নজরদারি শুরু হয়। ভোট কেন্দ্র চত্বরেও কড়া নজরদারি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। বিরোধীরা বেশ কিছু ব্যাপারে অভিযোগও জানায়। পুলিশ ও বাহিনীর তৎপরতায় এ সব ছক ভেস্তে গিয়েছে। কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা তুফানগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী শ্যামল চৌধুরী বলেন, “এ বারের ভোটে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তৃণমূলের ভোট লুঠের ছক সফল হয়নি। তাই ভোট কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়।”

বিরোধীরা জানাচ্ছেন, পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল বুথে থেকে একশো মিটারের মধ্যেই তৃণমূলের একাধিক ক্যাম্প অফিস। বামেদের বেশিরভাগ জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। বুথের সামনে থেকে রাস্তায় অন্তত পক্ষে গোটা ৫০ জন দাঁড়িয়ে ভোট নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি, অনেকে ইভিএম মেশিনে উঁকি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন, কে কোথায় ভোট দিচ্ছে।

এবারে একদম উল্টো চিত্র। বুথের থেকে দুশো মিটার দূরে ক্যাম্প অফিস। সেখানেও হাতে গোনা লোক ছিল।

TMC election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy