কাঁটাতার-ঘেঁষা পিচ রাস্তা। সে রাস্তার পাশেই টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরের বারান্দায় বাড়ির নথি দেখতে ব্যস্ত সারিফ শেখ ও তাঁর ভাই। ২০০২ সালের ভোটের তালিকায় নিজের ও বাবা-মায়ের নাম দেখে আশ্বস্ত হয়ে তাঁরা ছুটলেন দশটি বাড়ি দূরে সমীক্ষার কাজে থাকা বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)-এর কাছে। বিএলও-কে ঘিরে দাঁড়িয়ে এনুমারেশন ফর্ম না পাওয়া এক দল মহিলা-পুরুষ। বুধবার দুপুরে এনুমারেশন ফর্ম বিলির দ্বিতীয় দিনে এমনই ছবি দেখা গেল পুরাতন মালদহের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা মুচিয়ার গোলাপট্টিতে।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর কাজ শুরু হতেই উদ্বেগে দিন কাটছে মুচিয়ার মহাদেবপুর, মোহনবাগানের মতো সীমান্ত-ঘেঁষা একাধিক গ্রামে। স্থানীয়দের দাবি, দেশ ভাগের পরে সীমান্তের গ্রামগুলিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মানুষের সংখ্যা। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে ২০০২ সালে গোলাপট্টি গ্রামের ১৮১ নম্বর বুথে ভোটার সংখ্যা ছিল ৬৩৮। পরে, ১৮১ নম্বর বুথের সঙ্গে মিশে যায় ১৭৭ নম্বর বুথের একাংশ ভোটার। ২০২৫ সালে ১৮১ নম্বর বুথে ভোটার বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৪০ জন। জানা গিয়েছে, ম্যাপিংয়ে ২০০২ এর সঙ্গে ২০২৫ সালের ভোটার সংখ্যা মিলেছে ৭২ শতাংশ। ফলে বাকি ২৮ শতাংশ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিএলও সনৎকুমার গুপ্ত বলেন, “বাড়ি-বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম বিলি করছি। নথি দেখার কাজ বিএলও-র নয়। স্কুল করে ফর্ম বিলির কাজে সমস্যা হচ্ছে। তিনশো ফর্ম পেয়েছি। তার মধ্যে দু’দিনে দুই শতাধিক ফর্ম বিলি করে দিয়েছি।”
গ্রামগুলির সঙ্গে ও-পার বাংলার মধ্যে সীমান্ত হয়ে বয়ছে মহানন্দা নদী। দেড় দশক আগে পড়েছে কাঁটাতার বেড়াও। গ্রামবাসী সারিফ শেখ বলেন, “আমার বাবা, ঠাকুরদার জন্মও গোলাপট্টিতে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় আমাদের পরিবারের নাম আছে। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখে ভয় হচ্ছে।” পড়শি দুলালি ঘোষ বলেন, “স্বামী ফর্ম পেলেও আমায় দেয়নি। ফর্ম পূরণ না করলে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে অনেকে প্রচার করছে। তাই চিন্তা থেকে যাচ্ছে।”
১৯৭৮-৮৩ পর্যন্ত বাবা হরেকৃষ্ণ শেঠ প্রধান ছিলেন। সিপিএমের প্রতীকে জয়ী হয়ে ১৯৯৩-৯৮ মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন ছেলে অশোক শেঠ। অশোক বলেন, “সীমান্ত ঘেঁষা হলেও আমাদের গ্রাম বহু পুরোনো। তবে আশপাশে নতুন কিছু গ্রাম হয়েছে। নাগরিকদের এসআইআর নিয়ে সঠিক দিশা দেখানো হচ্ছে না।” গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের রেখা মহালদার বলেন, “নির্বিঘ্নেই গ্রামে এনুমারেশন ফর্ম বিলি করা হচ্ছে। বুথের কোনও নাগরিকেরই চিন্তার কোনও কারণ নেই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)