২১ নম্বর ওয়ার্ডে জল পড়ছে সুতোর মত ধারায়। —নিজস্ব চিত্র।
গরমের আঁচ যত বাড়ছে, ততই তীব্র হচ্ছে জলের আকাল। পাড়ায়-পাড়ায় জলের কলের সামনে লাইনও দীর্ঘায়িত হচ্ছে ক্রমশ। অবশ্য নলবাহিত পানীয় জল প্রকল্পের সুবিধে এখনও পৌঁছয়নি সর্বত্র। এ সব জায়গায় ভরসা সেই নলকূপ। গরম বাড়লেই জলস্তর তলানিতে পৌঁছায়। ফলে, জল মেলাই ভার হয় তখন। সংক্ষেপে বলতে গেলে মালদহ জেলার ইংরেজবাজার শহরের জল-ছবিটা এমনই। পুরভোটের আগে তা-ই পানীয় জলের সমস্যা ও সমাধানের উপায় নিয়ে চাপানউতোরও শুরু হয়ে গিয়েছে ফের। শুরু হয়ে গিয়েছে জল যন্ত্রণায় নাকাল শহরবাসীর জন্যে প্রতিশ্রুতির ফোয়ারাও।
বছরের পর বছর ধরে পানীয় জলের সমস্যায় ভুগতে থাকা শহরবাসী কিন্তু আর এই সমস্ত আশ্বাসের উপরে পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারছেন না। কারণ, ভোট ফুরোলেই যে প্রতিশ্রুতি পালনের দায়-দায়িত্ব বেশি কেউ মনে রাখেন না, তা দেখার অভ্যেস রয়েছে শহরের মানুষের। যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের জন্য কেউই সব রকম চেষ্টা করে না বলেও অভিযোগ বাসিন্দাদেরা। যেমন, মৃণাল চৌধুরী, অংশুমান ঝাঁ-এর মতো অনেক বাসিন্দাই বলেন, “জলের কষ্ট আমাদের শহরে নতুন কিছু নয়। ভোট এলেই নেতা-নেত্রীরা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তবে সমস্যার সুরাহা খুব বেশি কিছু হয় না। এবার নেতা নেত্রীদের বলে দেব, প্রতিশ্রুতি নয়, পানীয় জলের সমস্যার সমাধান করতে হবে।”
মালদহের জল-সমস্যার শিকড় অনেকটাই গভীরে। ইংরেজ আমলে শহর তৈরির পরে পানীয় জলের কিছু ব্যবস্থা হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে ছ’দশক গড়িয়ে গেলেও শহরের বহু ওয়ার্ডে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছয়নি এখনও। ইংরেজবাজার পুরসভার ২৩ নম্বর ওর্য়াডের কুলদীপ মিশ্র কলোনি, নেতাজি কলোনি, জাহাজ ফিল্ড, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সানি পার্ক, এয়ারভিউ কমপ্লেক্স ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কুলিপাড়া, কৃষ্ণপল্লি, সিংপাড়া এলাকায় নলবাহিত পানীয় জল না পৌঁছানোয় বাধ্য হয়েই নলকূপের জল খেতে হয় ওই সব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।
পুরসভার ২০, ২১, ২২, ২৩, ৩, ২, ১ নম্বর ওয়ার্ডে নলবাহিত জল পৌঁছলেও জলের চাপ এতটাই কম থাকে যে এই এলাকাগুলিতেও বাসিন্দাদের ভোগান্তির রোজনামচায় হেরফের হয় না কোনও। পর্যাপ্ত জলের অভাবে ভুগতে হচ্ছে গয়েশপুর, চুনিয়াপাড়া, বিদ্যাসাগর পল্লি, গয়েশপুর, সর্বমঙ্গলা পল্লি, সুভাষপল্লি, মহানন্দা পল্লি, মাধবনগর, বিশ্বনাথ মোড় এলাকার বাসিন্দাদের। অনেক সময়েই জলের জন্য ছুটতে হচ্ছে অন্য এলাকায়। অনেক সময়েই পড়শিরা একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন বচসায়। ঘটছে মারপিটের ঘটনাও। এলাকার বাসিন্দা মীরা সাহা, রানি হালদার বলেন, “সুতোর মতো জল পড়ে কলে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে জল নিতে হয়। সে জন্য প্রায়ই গোলমাল হয়।” একে তো জলের চাপ কম, তার উপরে আগের তুলনায় জল সরবরাহের সময়সীমাও কমানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
একটা সময় পর্যন্ত ইংরেজবাজার পুরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা ছিল ২৫টি। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২৯টি। ফি বছর গরমের সময় জল-সমস্যা তীব্র হলে শাসক দলকেই দূষে থাকেন বিরোধীরা। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নন ইংরেজবাজার পুরসভার বিদায়ী বিরোধী দলনেতা তথা ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএমের প্রার্থী শুভদীপ সান্যাল। তিনি অভিযোগ করেন, “বিদায়ী পুরবোর্ড যে জলসঙ্কট দূর করতে যে পারেনি, সেটা বাসিন্দারা বুঝতে পারছেন। বছরের পর বছর ধরে শহরের জল সমস্যা সমাধানের জন্য টাকা পড়ে থাকলেও তা খরচ হয়নি।” তাঁর দাবি, “এবার আমরা পুরবাসীদের কাছে বিষয়টি জোরদার ভাবে তুলে ধরছি। আগামী দিনে আমরা কী ভাবে জল সমস্যার সমাধান করব তাও স্পষ্ট করে বলছি।”
পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেসের প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিরও আশা, এ বার পানীয় জলের সমস্যার সমাধান করতে না পারার দায়টা শাসক দলকে নিতেই হবে। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মানবেন্দ্র চক্রবর্তী এবারের পুরভোটে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, “বাম আমলে যেমন শহরে পানীয় জলের সমস্যা ছিল, তৃণমূল জমানাতেও তা থেকে গিয়েছে। মানুষ এসবের জবাব দেবেন।”
ইংরেজবাজার পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবারও ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি দাবি করেচেন, “পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে জলাধার হয়েছে। পাইপ লাইন বাড়ানো হয়েছে। জল পরিশোধন প্রকল্পের জন্য জমিও কেনা হয়ে গিয়েছে। বিরোধীরা উন্নয়নে সাহায্য না করে অহেতুক হইচই করে চলেছেন।”
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy