Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

করোনার জেরে স্থগিত পরীক্ষা, ছেঁড়া জুতোর অপেক্ষায় ফার্স্টবয় 

অভাবের সঙ্গে সঞ্জয়ের লড়াই নতুন নয়। তার যখন দেড় বছর, তখনই মারা যান বাবা জগদীশ রবিদাস।

সংগ্রামী: সঞ্জয় রবিদাস। নিজস্ব চিত্র

সংগ্রামী: সঞ্জয় রবিদাস। নিজস্ব চিত্র

বাপি মজুমদার
চাঁচল শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ০৭:০২
Share: Save:

করোনার জেরে মাঝপথে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। সে ভেবেছিল, পরীক্ষার পরে ফল বের না হওয়া পর্যন্ত দিনরাত পরিশ্রম করে টাকা জোগাড় করবে। কলেজে ভর্তি হতে হবে যে। কিন্তু লকডাউনের জেরে সেই টাকা জোগাড়ের সঙ্গে জুড়েছে সংসারের অনটন।

সব পরীক্ষা শেষ না হলেও, পড়াশোনা ফেলে বাড়ির সামনে জাতীয় সড়কের পাশে সকাল হলেই কাঠের একটা বাক্স নিয়ে বসে পড়তে হচ্ছে। সেই বাক্স থেকে একে একে জুতো সেলাইয়ের সরঞ্জাম বের করে খদ্দেরের আশায় থাকে সঞ্জয় রবিদাস। কোনও দিন জোটে, কোনও দিন কেউ আসে না। এখনও ভূগোল পরীক্ষা বাকি। কিন্তু কলেজে ভর্তির টাকা আর সংসার টানতে এ ভাবেই লড়াইয়ে নেমেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে কনুয়া হাইস্কুলের ‘ফার্স্টবয়’ সঞ্জয়।

অভাবের সঙ্গে সঞ্জয়ের লড়াই নতুন নয়। তার যখন দেড় বছর, তখনই মারা যান বাবা জগদীশ রবিদাস। অন্যের জমির ধান কেটে, দিনমজুরি করে কোনও রকমে সংসারের হাল ধরেন মা। একটু বড় হতেই, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় মায়ের কষ্ট দেখে জুতো সেলাই শুরু করে সঞ্জয় ও তার দাদা সাগর। দু’বছরের বড় দাদা সাগর মাধ্যমিক পাশ করার পরে পড়াশোনা ছেড়ে চলে যান ভিন্‌ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে। সঞ্জয় স্থানীয় বাজারে নিয়মিত জুতো সেলাই করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকে। সেই লড়াইয়ের মধ্যেই দু’বছর আগে ৬৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করে সে। তার পর নিজের স্কুলেই একাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগে ভর্তি হয়। একাদশ থেকে দ্বাদশে ওঠার সময়েও সে ফার্স্ট হয়েছিল। দ্বাদশের টেস্ট পরীক্ষাতেও সঞ্জয় ফার্স্ট হয়েছিল।

আরও পড়ুন: ঘরে সতর্ক থাকুন, শহরে ঘুরে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

সঞ্জয়ের বাড়ি চাঁচলের কনুয়ায় হলেও তার স্কুল হরিশ্চন্দ্রপুরের কনুয়ায়। মা কল্যাণী বলেন, ‘‘বিধবা ভাতা মেলেনি। বড় ছেলে আপাতত বাড়িতে, আমি বা ছেলে চাইলেও কাজ মিলছে না। ঘরে খাবার নেই।’’ লকডাউনে রেশন বা ত্রাণ পাননি? কল্যাণী বলেন, ‘‘রেশন পেয়েছিলাম। তা তো তিন দিনেই ফুরিয়েছে।’’

অলিহণ্ডা পঞ্চায়েতের প্রধান মনোয়ারা বিবি বলেন, ‘‘উনি যাতে বিধবা ভাতা পান তা দেখব।’’ এত দিন কেন ভাতা বা সরকারি সুবিধা পাননি? উত্তর মেলেনি প্রধানের।

আরও পড়ুন: অসম বহুদূর, ফারুকের আশ্রয়েই দম্পতি

‘‘লকডাউন না হলে এত দিনে পরীক্ষাও হয়ে যেত, ভর্তির টাকাও জোগাড় হয়ে যেত। কিন্তু এখন কী যে হবে। ঘরে খাবারও নেই’’— জাতীয় সড়কের পাশে বসে গলা বুঁজে আসে সঞ্জয়ের।

কনুয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজা চৌধুরী সাহায্যের আশ্বাস দেন।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Student Harishchandrapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE