সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন থেকে নেমে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাওয়া বৃদ্ধের পা হারানোর পরে প্রশ্ন উঠেছে লোকাল বা মেমু ট্রেনে শৌচাগার না থাকার সমস্যা নিয়ে। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের ঘটনার পরে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে রেল। অনেক প্যাসেঞ্জার ট্রেনে শৌচাগার ব্যবহারের অযোগ্য বলে অভিযোগ উঠেছে। যাত্রীরা ক্ষুব্ধ ট্রেনের নিরাপত্তা নিয়েও।
উত্তরবঙ্গের একাধিক ট্রেনে দেখা গিয়েছে এই ছবি। কোনও শৌচাগারের দরজার উপরের অংশ ভাঙা। কোথাও দরজাই নেই। কামরার বেশির ভাগ আলো জ্বলে না। নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। মহিলার পক্ষে শৌচাগার ব্যবহার অসম্ভব। প্রতিটি ট্রেনের বেহাল অবস্থা। তার উপরে প্রতিটি ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে চলে বলে অভিযোগ বারবার নিউ জলপাইগুড়ির এরিয়া ম্যানেজার, নিউ জলপাইগুড়ির স্টেশন ম্যানেজারকে জানানো হলেও কোনও কাজ হয়নি। রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অভিযোগ স্বীকার করা হয়নি। এজেপি-র এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথি শীল বলেন, “এমন অভিযোগ নেই। ট্রেন যা আসে সব ঠিকঠাক করে পাঠানো হয়। কোনও ট্রেনে সমস্যা আছে বলে আমি জানি না।” তবে দু-একটিতে দরজার অংশ ভাঙা থাকতে পারে, মালপত্র গাদাগাদি করে তোলার কারণেই তা হতে পারে বলে মনে করছেন পার্থবাবু। আলো নেই বলে তাঁর কাছে এখনও অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
শিলিগুড়ি-হলদিবাড়ি প্যাসেঞ্জারের নিত্যযাত্রীদের অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলছে। পাণ্ডাপাড়ার বাসিন্দা সরকারি কর্মী গৌতম দেব রোজই ওই ট্রেনে যাতায়াত করেন। তাঁর কথায়, ট্রেনের কামরায় উঠলেই নাকে রুমাল চাপা দিতে হয়। আর বাথরুমে তো যাওয়াই যায় না, অন্ধকার, জানলা উধাও হয়ে গিয়েছে। টিটি, রেলকর্তাদের কতবার বলেছি। তবু নরক-যন্ত্রণা কমেনি।”
আর এক যাত্রী সুভাষ বসু বলেন, সন্ধ্যার পর ট্রেনে বসতে গা ছমছম করে। কারণ, বেশির ভাগ আলো জ্বলে না।” অন্য এক যাত্রী নির্মলা সরকার বলেন, “আমরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করি। আমাদের কিছু হয়ে গেলে কে দায়িত্ব নেবে?” মালদহ-কোচবিহার প্যাসেঞ্জারের যাত্রী দিনহাটার রবিন রায় বলেন, “ট্রেনের একটিও কামরার শৌচাগারে দরজা আস্ত নেই। মহিলারা লম্বা সময় ট্রেনে থাকলেও তা ব্যবহার করতে পারে না। তা হলে শৌচাগার থাকলেও কি লাভ?” নিউ জলপাইগুড়ি যাত্রী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দীপক মহান্তির দাবি, তাঁরাও বহু বার অফিসারদের জানিয়েছেন।
শিলিগুড়ি জংশন-হলদিবাড়ি প্যাসেঞ্জারের বিকেলের ট্রেনটি শিলিগুড়ি জংশন থেকে ছাড়ে ৪ টে ৫০ এ। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে যায়। বেশিরভাগ কামরাতেই আলো না থাকায় প্রায়ই নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের মধ্যে বসে থাকতে হয় সকলকে। যেখানে আলো রয়েছে তা জ্বলে না। ফলে যাত্রীদের ক্ষোভ বাড়ছে উত্তরোত্তর। গার্ড বলেন, “ওটা আমাদের কাজ নয়। আমরা অভিযোগ পেয়ে জানাই। কিন্তু তারপরের কাজ যাঁদের, তাঁদেরই করতে হবে।”
মালদহ-কোচবিহার প্যাসেঞ্জার ট্রেনে মোট আটটি কামরা রয়েছে। কোচবিহারগামী ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়ে দুপুর ২ টো ৩০ মিনিটে। এই ট্রেনের কোনওটিতেই শৌচাগারের ওপরের অংশ কে বা কারা ভেঙে ফেলেছে। একাধিক শৌচাগারে দরজা হাতল ভাঙা। একটির দরজাই নেই। বেশির ভাগ শৌচাগারেরই দরজার বাকি অংশটুকুও শোচনীয়। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। অসংখ্য আলো নেই। যে কটি আছে তার মধ্যে অনেক আলো খারাপ। পরিষেবা প্রায় নেই। গার্ডের বক্তব্য, “আমরা এই বিষয়ে অভিযোগ করি নিয়মিত। কিন্তু যাঁদের দায়িত্ব তাঁর যদি গা না করেন আমরা কী করতে পারি। অসুবিধা হয় কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।”
এনজেপি-রাধিকাপুর এক্সপ্রেস নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়ার সময় দুপুর ৩টে। এই ট্রেনে একাধিক দরজার ওপরের ঘুলঘুলি নেই। ফলে মহিলাদের পক্ষে শৌচাগার ব্যবহার করা অসম্ভব। আলো নেই একাধিক কামরায়। ট্রেনের কর্তব্যরত গার্ড বলেন, “আমরা অনেক বার বিভিন্ন কারশেডে গোটা বিষয়টি জানিয়েছি। তা ছাড়া এই কথা বিভিন্ন স্টেশন ম্যানেজারকেও বলেছি। কাজ হয়নি। আমাদের কিছু করার নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy