এক নববধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে মালদহের চাঁচলের নতুন কান্ডারণ এলাকায় রহস্য দেখা দিয়েছে। পুলিশ জানায়, স্বামীকে নিয়ে অষ্টমঙ্গলায় বাপের বাড়িতে আসার পর রেললাইন থেকে রবিবার সকালে ওই বধূর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। বাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ঝাড়খড়িয়া রেল সেতুর কাছে রেললাইনে পড়ে ছিল পিঙ্কি ওঁরাও (২০) নামে ওই বধূর দেহ। সকালে পিঙ্কির দেহ উদ্ধারের পরেই এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পিঙ্কিকে খুন করার পর তাঁর দেহ রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর পরিবারের তরফে অভিযোগ তুলে এক আত্মীয় তথা প্রতিবেশী যুবককে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারধরে গুরুতর জখম সুশান্ত ওঁরাও নামে ওই যুবককে মালতিপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে আহত যুবকের সঙ্গে কথা বললেও সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও তরফেই অভিযোগ জানায়নি। ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে বলে রেল পুলিশ জানায়।
মালদহের পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনায় কোনও পক্ষেই অভিযোগ জানায়নি। বধূ আত্মহত্যা করেছেন না কি খুন হয়েছেন ময়নাতদন্তেই তা জানা যাবে। অভিযোগ পেলে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মালদহ টাউন স্টেশনের জিআরপির আইসি কৃষ্ণগোপাল দত্ত বলেন, “রেল পুলিশের কাছেও কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।” পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দিনকয়েক আগে বালুরঘাটে বিয়ে হয় অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মীর মেয়ে পিঙ্কিদেবীর। পেশায় চাষি স্বামী রমেশ ওঁরাওয়ের সঙ্গে শনিবার অষ্টমঙ্গলায় তিনি বাপের বাড়িতে আসেন। রাতে পাশেই একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর তাঁর আর খোঁজ মেলেনি। ঘটনার পর পরিবারের সন্দেহ গিয়ে পড়ে আত্মীয় সুশান্তের উপরে। সামসি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুশান্ত দিনকয়েক আগে আবগারি দফতরে কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন। আত্মীয়তা থাকলেও সুশান্তর সঙ্গে পিঙ্কিদেবীর ৩ বছর আগে একটা সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু কয়েকমাস আগে সুশান্ত বিয়ের প্রস্তাব দিলেও তাতে পিঙ্কিদেবীর পরিবার রাজি হয়নি। ফের বিয়ের কথাবার্তা হলেও তা আর এগোয়নি। পিঙ্কিদেবীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। পিঙ্কির দাদা সঞ্জয়বাবুর অভিযোগ, “সন্ধ্যার পর সুশান্ত বোনের মোবাইলে ফোন করেছিল বলে জানতে পেরেছি। বোন কোথায় তা রাতেই ওঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়। বেশ কয়েক জায়গায় ও আমাদের নিয়ে গেলেও বোনের হদিস মেলেনি। আক্রোশের বশে ও বোনকে খুন করে দেহ রেল লাইনে ফেলে দিয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ। পুলিশে অভিযোগ জানাব।” যদিও সুশান্ত হাসপাতালে শুয়ে দাবি করেন, “পিঙ্কির সঙ্গে আমার সম্পর্ক থাকলেও কিছুদিন ধরেই আমাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল না। শনিবার রাতে ওই আমার মোবাইলে ফোন করেছিল। আমি ওকে সুখে সংসার করতে বলি। তখন জানায়, ও আর স্বামীর ঘরেও ফিরবে না। নিজের পথ দেখে নেবে। কী হয়েছে জানি না। আমি ওকে খুন করতে যাব কেন?”
সুশান্তবাবুর কাকা নীরেন ওঁরাও বলেছেন, “দুই পরিবারে আত্মীয়তা রয়েছে। তাই আমরা দুই পক্ষকেই পুলিশের কাছে অভিযোগ না জানিয়ে নিজেদের সমাজে বসে এই বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy