Advertisement
E-Paper

উর্দিতে রক্তের দাগ, খুনে ধৃত এনভিএফ কর্মী

খাঁকি সোয়েটারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কালচে দাগটা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিল সে। শীতের সকালে আধ ভেজা সেই সোয়েটারই কপালে ভাঁজ ফেলেছিল পুলিশের। জেরার মুখে ভেঙে পড়েছিল সেই উর্দিধারী। স্বীকার করেছিল, ৬ লক্ষ টাকা ‘সুপারি’ নিয়ে খুনটা সেই করেছে। থানার মধ্যেই কর্তব্যরত এনভিএফ কর্মী দুলাল মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩০
মালদহ আদালত চত্বরে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় ধৃত এনভিএফ কর্মী দুলাল মণ্ডল (বাঁ দিকে)। জেরায় সে জানিয়েছে, তাকে ‘সুপারি’ দিয়েছিল নিমাই চৌধুরী (ডান দিকে)। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

মালদহ আদালত চত্বরে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় ধৃত এনভিএফ কর্মী দুলাল মণ্ডল (বাঁ দিকে)। জেরায় সে জানিয়েছে, তাকে ‘সুপারি’ দিয়েছিল নিমাই চৌধুরী (ডান দিকে)। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

খাঁকি সোয়েটারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কালচে দাগটা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিল সে। শীতের সকালে আধ ভেজা সেই সোয়েটারই কপালে ভাঁজ ফেলেছিল পুলিশের।

জেরার মুখে ভেঙে পড়েছিল সেই উর্দিধারী। স্বীকার করেছিল, ৬ লক্ষ টাকা ‘সুপারি’ নিয়ে খুনটা সেই করেছে। থানার মধ্যেই কর্তব্যরত এনভিএফ কর্মী দুলাল মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মঙ্গলবার সকালে, মালদহের মানিকচকের মথুরাপুরে আম বাগানে পাওয়া গিয়েছিল স্থানীয় ব্যবসায়ী উজ্জ্বল পান্ডের রক্তাক্ত দেহ। নিপুন হাতে কাটা গলার নলি, খুনের ধরন দেখেই পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল পাকা হাতের কাজ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সোমবার রাতে ওই ব্যবসায়ীকে দেখা গিয়েছিল এক উর্দিধারীর সঙ্গেই। পরের দিন, মানিকচক থানায় রক্তের ছিটে লেগে থাকা আধ-ভেজা সোয়েটারের দুলাল মণ্ডলকে দেখে সেই হারানো সুতো গুটিয়ে ফেলে পুলিশ। থানার এক পুলিশ কর্মীর কথায়, “খুনি যে থানার মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে তা কে জানত, তদন্তের আগেই যেন খুনের কিনারা হয়ে গেল!”

কিন্তু পুলিশের উর্দি পরেই খুন করার সাহস দেখাল কেন সে?

জেরার মুখে ওই এনভিএফ কর্মী জানায়, মানিকচকের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নিমাই চৌধুরীর ‘টোপে’ পা দিয়েই উজ্জ্বলবাবুকে খুন করেছে সে। এক পুলিশ কর্তা বলেন, “জেরার করার সময়ে দু’তালুতে মুখ ঢেকে ওই এনভিএফ কর্মী জানিয়ে দেয়, ‘টাকাটা বড় দরকার ছিল স্যার, ৬ লক্ষ টাকার টোপটা না গিলে পারিনি।” পুলিশ মানিকচকের ধর্মটোলার বাসিন্দা নিমাই চৌধুরীকেও গ্রেফতার করেছে। বুধবার আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিন পুলিশ হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, নিমাই-উজ্জ্বলের ব্যবসায়িক রেষারেষি নতুন নয়। টাকা পয়সার লেনদেন নিয়েও তাদের মধ্যে চাপা ‘অসন্তোষ’ ছিল। উজ্জ্বলের পরিবারও সে কথা আড়াল করছেন না। তাঁরা জানান, ব্যবসায়িক ‘মন্দা’ কাটাতে নিমাইয়ের কাছে ১৫ লক্ষ টাকা ধারও নিয়েছিলেন উজ্জ্বল। কিন্তু তা আর শোধ দেওয়া হয়ে ওঠেনি। তা নিয়ে দু’জনের ‘সম্পর্ক’ তলানিতে ঠেকেছিল বলেই পুলিশের অনুমান। আর সে কাজেই দুলালকে ‘ব্যবহার’ করেছিল নিমাই।

মথুরাপুরের ধর্মটোলার বাসিন্দা দুলালের প্রতিবেশী নিমাই চৌধুরী। পুরনো গাড়ি কেনাবেচার কারবারি সে। পাশের এলাকা কর্মতলার জমি-বাড়ির দালাল উজ্জ্বলও ছিল তার মুখ চেনা। সেই পরিচয় সূত্রই কাজে লাগিয়েই দুলালকে সুপারি দিয়েছিল নিমাই বলে মনে করছে পুলিশ।

কিছু দিন ধরেই জেলা সদরের পুলিশ লাইনে কর্মরত দুলালের সামনে মানিকচকে যাওয়ার সুযোগ এসে গিয়েছিল গত রবিবার। এলাকায় বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতে অনাস্থা ভোটের জেরে পুলিশ লাইন থেকে দশ এনভিএফ কর্মীকে মানিকচকে পাঠানো হয়। সেই তালিকায় ছিল দুলাল। পুলিশের অনুমান, রবিবার মানিকচক পৌঁছেই খুনের সুপারি পেয়েছিল সে। পরের রাতেই নিপুণ হাতে ‘কাজ’ সেরে ফেলেছিল ওই এনভিএফ কর্মী। কিন্তু পুলিশের উর্দি পরেই সে খুন করতে গেল কেন? তারই উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

তবে জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ‘পুলিশ’ হিসেবে নিজেকে বরাবরই জাহির করতে চাইত দুলাল। ফোর্সে ‘ডাকাবুকো’ হিসেবে পরিচয় ছিল তার। ২০০৮ সালে ইংরেজ বাজারের কাজিগ্রামে একটি রাজনৈতিক গোলমালের ঘটনায় উর্ধ্বতনের নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই গুলিও চালিয়েছিল সে বলে অভিযোগ।

malda nvf worker arrest murder case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy