Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
শহরে জনতা পুলিশ ধুন্ধুমার

ওয়ার্ড ‘দখল’ নিয়েই উত্তপ্ত রামঘাট

রামঘাটে শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি হোক, এই দাবিতে সহমত লাগোয়া অন্তত ৮টি ওয়ার্ডের বহু বাসিন্দা। তাই চুল্লির কাজটি দ্রুত করানো গেলে আগামী পুরভোটে ওই সব ওয়ার্ডে বাড়তি প্রভাব বিস্তারের সুযোগ মিলবে বলে আশাবাদী শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। পক্ষান্তরে, বাসিন্দাদের অন্য অংশ ওই শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি হোক তা চাইছেন না।

রণক্ষেত্র শিলিগুড়ির রামঘাট এলাকা। বুধবার দুপুরে বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

রণক্ষেত্র শিলিগুড়ির রামঘাট এলাকা। বুধবার দুপুরে বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩০
Share: Save:

রামঘাটে শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি হোক, এই দাবিতে সহমত লাগোয়া অন্তত ৮টি ওয়ার্ডের বহু বাসিন্দা। তাই চুল্লির কাজটি দ্রুত করানো গেলে আগামী পুরভোটে ওই সব ওয়ার্ডে বাড়তি প্রভাব বিস্তারের সুযোগ মিলবে বলে আশাবাদী শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। পক্ষান্তরে, বাসিন্দাদের অন্য অংশ ওই শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি হোক তা চাইছেন না। তাঁদের সমর্থন করছেন সিপিএম, কংগ্রেস, ফরওয়ার্ড ব্লক সহ অনেক দলই। ফলে, দু-তরফের টানাপড়েনে পরিস্থিতি নিত্যনতুন মাত্রা পাচ্ছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। ওই এলাকার নবীন-প্রবীণ বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, ৮টি ওয়ার্ডে কর্তৃত্ব কায়েম করা নিয়ে তৃণমূল ও বিরোধীদের লড়াইয়ের জেরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

এলাকা দখলের রাজনীতির অভিযোগ তৃণমূল ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। দলের জেলার নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল বলেন, “শিলিগুড়ি ১০ লক্ষ বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখে নতুন চুল্লির কাজ করা হচ্ছে। ওই সব দখলের রাজনীতি বিরোধীরা করে। যা হচ্ছে, পুরোটাই কংগ্রেস, সিপিএম আর বিজেপি’র চক্রান্ত।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “এলাকার জমি মাফিয়া, দুষ্কৃতীদের বিরোধীরা মদত দিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পুলিশকে তো লক্ষ্য করে বোমাও মারা হয়েছে বলে শুনেছি।”

পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে রামঘাট শ্মশানটি রয়েছে। গত নির্বাচনে ওয়ার্ডটি ফরওয়ার্ড ব্লক জিতেছিল। এই ওয়ার্ডটি ছাড়া রামঘাট লাগোয়া ১, ৪, ৬, ৭, ৮, ৯ এবং ২৫ নম্বরের মত ওয়ার্ডগুলি বরবার বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের শক্তি ঘাঁটি বলে পরিচিত। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আবার বিজেপি’ও শক্তিশালী। এক দফায় কংগ্রেসের সাহায্যে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে জেতা ছাড়া রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে তৃণমূল ওয়ার্ডগুলিতে নিজেদের উপস্থিতি প্রমাণই দিতে পারেনি। এমনকী, ২০০৯ সালের পুরসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল জোট করলেও ওই প্রতিটি ওয়ার্ডই তথ্য এবং সংগঠনের ভিত্তিতে কংগ্রেসকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল তৃণমূল। এরমধ্যে ১, ৪, ৬, ৯, ২৫ নম্বর কংগ্রেস জিতে যায়। জোটের বিরুদ্ধে লড়েও বাকি ৫, ৭ এবং ৮ ওয়ার্ড বামেরা দখল করে নেয়।

তৃণমূল সূত্রের খবর, গত বছর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার পর শহরের সর্বত্র একাই পুরভোটে লড়াই-এর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সম্মেলন, কর্মিসভাও হয়েছে। সেখানে অবাঙালি অধ্যুষিত বর্ধমান রোড ওই এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেও দলের নজরে রয়েছে। বর্তমানেও এলাকাগুলিতে শহরের অন্য এলাকার মত দলের সংগঠন নেই। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, “বৈদ্যুতিক শ্মশান হলে স্থানীয় মানুষকে আর হিলকার্ট রোড লাগোয়া জংশন এলাকার শ্মশানে যেতে হবে না, এটা তৃণমূল প্রচার করছিল। আদতে ছিল তা পর পর ওয়ার্ড দখলের রাজনীতি। তা স্পষ্ট হতেই সকলে একজোট হয়।”

শাসক দলের কয়েকজন নেতা জানান, প্রকল্পকে সামনে রেখে এগোলেও বিরোধিরা যে এমনভাবে রামঘাটে জোটবদ্ধ হয়ে নাগরিক মঞ্চ পর্যন্ত গড়ে ফেলবে তা আগে টের পাওয়া যায়নি। এমনকি, প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে অনশন মঞ্চ সর্বত্র তিন দলের জেলার প্রথম সারির নেতারা যোগ দিয়ে নিজেদের ‘ঘাঁটি’তে সক্রিয় উপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়েছেন। তা মোকাবিলা করার মত সংগঠন তৃণমূলের ছিল না। এদিন পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের জন্য পুরো বিষয়টি হাতের নাগলে বাইরে চলে যায়।

তৃণমূলের কয়েকজন প্রাক্তন কাউন্সিলর জানান, স্বাভাবিকভাবেই এদিন সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য, জীবেশ সরকার থেকে কংগ্রেসের শঙ্কর মালাকার, সুবীন ভৌমিকের ঘটনার পর এলাকায় পৌঁছে যান। বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন বসুরাও যান। পরিস্থিতি সামাল দিতে কৃষ্ণবাবুর নেতৃত্বে দলের কয়েকজন নেতাকে পাঠানো হয়।

সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবুর অভিযোগ, “পুলিশ দিয়ে গুন্ডামি করিয়ে এলাকার দখল নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা রুখে দাঁড়ানো মানুষগুলির পাশে আছি। এতে কোনও রাজনীতি নেই।” দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারের দাবি, “কংগ্রেস দখলের রাজনীতি করে না। আমরা শাসকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষের পাশে আছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

firing fighting police-public siliguri ramghat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE