Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কিশোরীর অপমৃত্যু, আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ

প্রেমিকের বাড়ির লোকজনের হাতে মার খেয়ে এক কিশোরী আত্মঘাতী হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আশরফনগরে ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকালে। অভিযোগ, ওই দিন সকালে প্রেমিক মহম্মদ রাজুর মা হালেমা বেগম ওই কিশোরীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেন। কিশোরীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত রাজুকে পুলিশ মঙ্গলবার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৪ ০১:১৮
Share: Save:

প্রেমিকের বাড়ির লোকজনের হাতে মার খেয়ে এক কিশোরী আত্মঘাতী হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আশরফনগরে ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকালে। অভিযোগ, ওই দিন সকালে প্রেমিক মহম্মদ রাজুর মা হালেমা বেগম ওই কিশোরীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেন। কিশোরীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত রাজুকে পুলিশ মঙ্গলবার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। তবে অভিযুক্ত যুবকের মা-সহ ওই যুবকের বাবা মহম্মদ সাজিম ও তাঁর মেয়ে চাঁদনি খাতুনকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, তারা পলাতক।

মঙ্গলবার বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে আদর্শনগর এলাকা। কিশোরীর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর এলাকায় দেহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বাসিন্দারা। জোর করে মৃতদেহটি অভিযুক্তের বাড়িতে ঢুকিয়ে দেয় জনতা। পুলিশ তাঁদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। উত্তেজিত জনতা ঢিল ছুঁড়তে থাকে বাড়ি লক্ষ করে। বাড়িতে ভাঙচুরের চেষ্টাও করা হয়। তাঁদের সামাল দিতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসি কে সাভারি রাজকুমার অবশ্য লাঠিচার্জের কথা স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জেরা করে বাকিদের ধরার চেষ্টা হবে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করা হয়েছে।” তবে থানায় লিখিত অভিযোগে ওই যুবকের মাকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা সত্ত্বেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও পুলিশ ওই যুবককেই মূল অভিযুক্ত হিসেবে মনে করে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে বলে এডিসি জানিয়েছেন। তিনি জানান, পরে প্রয়োজন হলে তার মা হালেমা বেগমকে গ্রেফতার করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার এক যুবকের সঙ্গে দু’বছর থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এক কিশোরীর। কিশোরীর বাবা নেই। মা কাগজ, লোহা কুড়িয়ে বিক্রি করেন। তাঁর চার ছেলে ও দুই মেয়ে। দুই ছেলে বাইরে কাজ করেন। দুই ছেলে ছোট। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ওই কিশোরীই ছোট। সেও মায়ের সঙ্গে কাজ কর্ম করত ছোট থেকেই। রাজুই তাঁকে কাজে যুক্ত করেছিল। ছোট থেকেই পরিচয় থাকলেও দুই বছর ধরে তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানিয়েছেন ওই কিশোরীর মা। তিনি বলেন, “আমি সম্পর্কের কথা জানতে পেরে মেয়েকে বারণ করেছিলাম। কিন্তু ওই ছেলেটিই মেয়েকে ফুঁসলে নিয়ে যেত। গতকাল হালেমা বেগম সকালে আমার মেয়েকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তার পরে আমার অনুপস্থিতিতে সে ঘরের দরজা আটকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঘরের ছাদের সঙ্গে ঝুলে পড়ে। পরে জানতে পারি মেয়েকে মারধরও করা হয়েছিল।” ওই দিন সকালে হুমকির পরেই ওই কিশোরীকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওই যুবক ও তার পরিবারের লোকেরা মারধর করে বলে অভিযোগ। এক পড়শি হামিদা খাতুন বলেন, “সকাল ৯টা নাগাদ মেয়েটিকে মারধর করে রাজুর বাড়ির লোকজন। আমিই তাঁকে বাড়িতে যেতে বলি। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই এই ঘটনা।”

গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। ঘটনায় অভিযুক্ত ওই পরিবার এলাকায় চুরি-সহ নানা রকম অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত বলে বাসিন্দাদের দাবি। একই অভিযোগ তুলেছেন এলাকার কাউন্সিলর স্বপন চন্দও। তাঁর অভিযোগ, “ওই পরিবারটি বিভিন্ন রকম অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। আমরা এর আগেও বহুবার পুলিশকে জানিয়েছি, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। আমরা চাইছি অভিযুক্তদের সাজা হোক। তাহলে এলাকায় অসামাজিক কাজকর্ম অনেকটাই কমবে।” এলাকার গরিব বাচ্চাদের অর্থের লোভ দেখিয়ে লোহা কুড়োনো ও চুরিতে উৎসাহ দেয় মহম্মদ সাজিম, মহম্মদ রাজুরা বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা আশরফ আলি। তিনি বলেন, “এলাকার বাচ্চাদের চুরি ও নেশায় উৎসাহ দেয় রাজু। নেশাগ্রস্ত হলে তাঁদের অর্থের প্রয়োজন হয়। তখন তাঁদের দিয়ে এই সব কাজ করাতে সুবিধা হয়।” যদিও এ ধরণের কোনও অভিযোগ আগে হয়নি বলে জানিয়েছেন এডিসি। তিনি বলেন, “এ দিনই এই বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

siliguri suicidal attempt teenager death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE