Advertisement
E-Paper

খরা, পাতা তোলা বন্ধ ডুয়ার্সের বাগানে

বৃষ্টির অভাবে চা উৎপাদন তলানিতে ঠেকায় সোমবার থেকে ডুয়ার্সের বেশ কিছু চা বাগানে পাতা তোলার কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। ২০০৯ সালে ডু্য়ার্সে যে খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, এ বার সে পরিস্থিতি ছাপিয়ে যাওয়ার জোগাড় বলে চা বাগান মালিকরা জানিয়েছেন। গত বছর এ সময় চা বাগানগুলিতে যে পরিমাণ পাতা মিলেছে, এ বার তার ১০ শতাংশ উৎপাদন হয়নি বলে দাবি করেছে চা বাগান কর্তৃপক্ষগুলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩৭
চা গাছ বাঁচাতে সেচ। ডুয়ার্সের একটি বাগানে রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

চা গাছ বাঁচাতে সেচ। ডুয়ার্সের একটি বাগানে রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

বৃষ্টির অভাবে চা উৎপাদন তলানিতে ঠেকায় সোমবার থেকে ডুয়ার্সের বেশ কিছু চা বাগানে পাতা তোলার কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। ২০০৯ সালে ডু্য়ার্সে যে খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, এ বার সে পরিস্থিতি ছাপিয়ে যাওয়ার জোগাড় বলে চা বাগান মালিকরা জানিয়েছেন। গত বছর এ সময় চা বাগানগুলিতে যে পরিমাণ পাতা মিলেছে, এ বার তার ১০ শতাংশ উৎপাদন হয়নি বলে দাবি করেছে চা বাগান কর্তৃপক্ষগুলি। খরার কারণে একে চা পাতা মিলছে না, তার পাশাপাশি একের পর এক বাগানে পোকার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে বাগান কর্তৃপক্ষের।

চা বাগান মালিক সংগঠন ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনর উপসচিব সঞ্জয় বাগচী বলেন, “আমার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় এ ধরনের খরা দেখিনি। জল না পাওয়ায় গাছগুলি থেকে নতুন পাতা মিলছে না। পোকা ছেয়ে গিয়েছে। বাগানগুলিতে উৎপাদন কমার ফলে নিজেদের কারখানা বন্ধ রেখে তিন-চারটি বাগান মিলে একটি বাগানের কারখানায় চা তৈরি সোমবার থেকে অনেক বাগানে পাতা তোলার কাজ বন্ধ করে দেবেন কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া উপায় নেই।” ভারত সরকারের অধীন নাগরাকাটার চা গবেষণা কেন্দ্রে বৈজ্ঞানিকরা ডুয়ার্সের চা উৎপাদন তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় উদ্বেগপ্রকাশ করেন। সরকারি ওই সংস্থার থেকে জানানো হয়েছে, গত বার ডুয়ার্সের চা বাগানগুলিতে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৬০ মিলিয়ন কিলোগ্রাম চা উৎপাদিত হয়েছিল। যা সারা বছরের উৎপাদনের ৩০ শতাংশ। তবে এবার এ পর্যন্ত কমে ১০ মিলিয়ন কেজিতে ঠেকেছে। আগামী সাত দিনে বৃষ্টি না হলে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গাছ থেকে নতুন পাতা মিলবে না বলে গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য উপদেষ্টা শ্যাম ভার্গিস দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, “চা শিল্প এখন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে। অনাবৃষ্টির ফলে গাছে ওষুধ ছিটিয়ে পোকার থেকে নিষ্কৃতি মিলছে না। এর আগে ডুয়ার্সে এমন খরা পরিস্থিতির নজির নেই। বৃষ্টি ছাড়া এ অবস্থা থেকে বেরনো প্রায় অসম্ভব।” আলিপুর আবহাওয়া দফতরে ডিরেক্টর গোকুল চন্দ্র দেবনাথ অবশ্য বলেছেন, “উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি বেশি। তবে উত্তরবঙ্গের আকাশে ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। জলীয় বাষ্প রয়েছে। আগামী দু’দিনে অল্প হলেও বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।”

তবে ওই বৃষ্টিতে আখেরে চাষের তেমন লাভ হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ডুয়ার্সের চা বাগানের চায়ের দাম মেলে প্রথম এবং দ্বিতীয় ফ্ল্যাশের পাতা থেকে। গাছের প্রথম পাতা থেকে যে চা তৈরি তার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এই দুই ফ্ল্যাশে উৎপাদন সে ভাবে না হওয়ায় মাথায় হাত চা শিল্প মহলের। বাগান কর্তৃপক্ষ জানান, ফি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে চা বাগানের শ্রমিকদের ১৫ দিনের ‘সাল’ ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে। এবার খরার কারণে আগামী বছরের সেই ‘সাল’ ছুটি আগাম দেওয়ার কথা ভাবছেন অনেক মালিক। এমনকী, এ ভাবে খরা পরিস্থিতি চললে বহু বাগান শ্রমিকদের ঠিক মত বেতন দিতে পারবে না বলে জানিয়েছেন মালিকপক্ষ। গয়েরকাটা চা বাগানের ম্যানেজার মানস ভট্টাচার্য বলেন, “বাগানে ১৫০০ জন শ্রমিকের জায়গায় ৩০০ জনকে পাতা তোলার কাজ দেওয়া হচ্ছে। দু’এক দিনের মধ্যে তাও বন্ধ হবে। গত বার বাগানে এ সময় ১০ হাজার কেজি পাতা উপাদন হলেও এ বার হাজার কেজি। পরিস্থিতি যে কী ভয়াবহ তা আমরা বুঝছি।”

tea garden dooars
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy