গৌরী মিত্রকে দেখতে নার্সিংহোমে গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র।
বম্ব স্কোয়াড নিয়ে পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালানোর পরেই রামঘাটের বাসিন্দা গৌরী মিত্র অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ উঠেছিল। বুধবার গৌরী দেবীকে দেখতে সেবক রোড লাগোয়া বেসরকারি নার্সিংহোমে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। এ দিন সকালে গৌতমবাবু যখন নার্সিংহোমে গিয়েছিলে সে সময় অবশ্য গৌরীদেবী ঘুমোচ্ছিলেন। মন্ত্রী তাঁর বিছানার পাশের টেবিলে ফুলের তোড়া রেখে দেন। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের থেকে গৌরীদেবীর শারীরিক পরিস্থিতিরও খোঁজখবর নেন তিনি।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর জলপাইমোড় লাগোয়া রামঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মন্ত্রী গৌতমবাবুর উপর হামলার অভিযোগ ওঠে। হামলায় মূল অভিযুক্ত মহানন্দ মণ্ডলের সঙ্গে ঘটনার সময়ে গৌরী দেবী ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ না হলেও, গৌরী দেবী নিজেই তৃণমূলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছিলেন। এরপরে গত শনিবার গৌরী দেবী এলাকার কয়েকটি বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালায় বলে অভিযোগ ওঠে, তারপরই গৌরীদেবী অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর পরই বিরোধী দলগুলি পুলিশ প্রশাসন সহ উত্তরবঙ্গ মন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়। এর ২৪ ঘণ্টা পরেই অসুস্থ গৌরীদেবীকে দেখতে মন্ত্রীর নার্সিংহোমে চলে যাওয়া পাল্টা কৌশল বলেই মনে করা হচ্ছে।
যদিও, এ দিন নার্সিংহোম থেকে বেরিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সৌজন্যের কারণেই গৌরী দেবীকে দেখতে এসেছি। এর পেছনে কোনও রাজনীতি নেই। গৌরীদেবীর অসুস্থতা নিয়ে যাঁরা একের পর এক অভিযোগ তুলেছিলেন, রাজনীতির বিষয়টি তারাই ভাল বলতে পারবেন।” মন্ত্রীর দাবি, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ গৌরী দেবীর শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন। তাঁর চিকিত্সায় সহায়তার কোনরকম প্রস্তাব এলে, পদক্ষেপ নেবেন বলেও মন্ত্রী দাবি করেছেন।
গত শনিবার পুলিশি তল্লাশির পর থেকেই গৌরী দেবী আতঙ্কে ভুগছিলেন বলে স্বামী চিত্তরঞ্জনবাবু গত মঙ্গলবার অভিযোগ তুলেছিলেন। এ দিন মন্ত্রী যখন নার্সিংহোমে আসেন, তখন তিনি ছিলেন না। পরে তিনি বলেন, “আমি শুনেছি মন্ত্রী গৌরীকে দেখতে গিয়েছিসেন। তবে এখন ওর অসুস্থতা নিয়েই ব্যস্ত রয়েছি। পরে এ বিষয়ে জানাব।” বুধবার মন্ত্রী হাসপাতালে ঢোকার সময়ে মহানন্দ মণ্ডলও নার্সিংহোমে উপস্থিত ছিলেন। মহানন্দবাবুর পাশ দিয়েই মন্ত্রী দু’বার হেঁটেও গিয়েছেন। মহানন্দবাবু বলেন, “মন্ত্রী সৌজন্য দেখিয়ে এসেছেন বলে শুনেছি। ভাল লাগল। তবে গতকাল এলে ভাল হতো, শ্মশানের ঘটনার পরে এলাকার কয়েকজনকে যখন মারধর করা হয়েছিল, তখনও মন্ত্রী সৌজন্য দেখালে এলাকাবাসীর আরও ভাল লাগত।”
বিরোধী ডান-বাম সব দলগুলি এ দিনও গৌতমবাবুর সৌজন্যতা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলেছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, “যে কোনও রাজনৈতিক নেতৃত্বেরই সৌজন্যবোধ থাকা প্রয়োজন। তবে মন্ত্রী কতটা আন্তরিকতা নিয়ে গিয়েছিলেন সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মন্ত্রীর জায়গায় আমি থাকলে সব মামলা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করতাম।” কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকেরর প্রশ্ন, “যে দিন ঘটনা ঘটল, সে দিন মন্ত্রীর সৌজন্যবোধ কোথায় ছিল।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অনিরূদ্ধ বসুর কটাক্ষ, “এ দিনের ঘটনাই প্রমাণ করল, গৌতমবাবু চাপে রয়েছেন।”
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রামঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির শিলান্যাসের সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ আপত্তি জানায়। সরকারি অনুষ্ঠানের প্রতিবাদে বিক্ষোভও হয়। সে সময়ে মহানন্দবাবু আঙুল তুলে ‘আমরাই শেষ কথা বলে’ মন্ত্রীর দিকে তেড়ে গিয়ে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তখনই তাঁকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। এর পরে তৃণমূল নেতারা মহানন্দবাবুকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। গৌরীদেবীকেও ধাক্কা মারা হয় বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy