Advertisement
E-Paper

চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তা

চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো নিয়ে টালবাহানার ‘ট্র্যাডিশন’ যেন চলছেই। বাম আমলেও যা ছিল, তৃণমূল আমলেও খানিকটা যেন তা-ইই বলে মনে করছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই। কারণ, আগামী সোমবার, ৩১ মার্চ রাজ্যের চা বাগিচা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি শেষ হতে চলছে।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩১

চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো নিয়ে টালবাহানার ‘ট্র্যাডিশন’ যেন চলছেই। বাম আমলেও যা ছিল, তৃণমূল আমলেও খানিকটা যেন তা-ইই বলে মনে করছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই। কারণ, আগামী সোমবার, ৩১ মার্চ রাজ্যের চা বাগিচা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি শেষ হতে চলছে। ইতিমধ্যে দু’টি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান সূত্র মেলেনি। ফলে, কবে নতুন মজুরি চুক্তি হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সরকারি সূত্রের খবর, গত ২০০৮ সালে প্রায় দেড় বছর এবং ২০১১ সালে নির্দিষ্ট সময়, অর্থাত্‌ ৩১ মার্চের চেয়ে প্রায় ছ’মাস পর রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় চা বাগানের শ্রমিকদের নতুন হারে মজুরি ঠিক হয়। এ বার মার্চের গোড়ায় বৈঠক শুরু হলেও শ্রমিক, মালিক বা সরকারপক্ষ কোনও অবস্থানেই পৌঁছতে পারেননি। আপাতত ঠিক হয়েছে, আগামী ১৬ মে, লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর ওই প্রক্রিয়া শুরু হবে। উল্লেখ্য, প্রতি তিন বছর অন্তর ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে রাজ্যের সমস্ত চা শ্রমিকদের নতুন হারে মজুরি ঠিক হয়।

চা বাগানের শ্রমিকদের ক্ষোভ, “দীর্ঘদিন ধরেই প্রতি তিন বছর অন্তর সঠিক সময়ের আগে নতুন হারে মজুরি চুক্তি হয় না। বাম আমলেও যা অবস্থা ছিল, নতুন রাজ্য সরকারের আমলেও একই অবস্থা রয়েছে। এতে বকেয়া মজুরি কিছু বাগান সঠিকভাবে দিয়ে দিলেও বেশ কিছু বাগানে সমস্যা দেখা দেয়। নির্দিষ্ট বছরের মার্চ মাসের আগে থেকেই ওই আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করলে সমাধানসূত্র বার হতে পারে। যা কোনও সময়ই হচ্ছে না।”

এ প্রসঙ্গে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “আমরা উদ্যোগী হয়ে মার্চ মাসের শুরুতেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক শুরু করে দিয়েছিলাম। প্রাথমিকভাবে দু’টি বৈঠক হয়েছে। তবে আরও বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তাই ঠিক করা হয়েছে লোকসভা ভোটের পরেই ফের বৈঠক হবে। আর বাম আমলে তো সঠিকভাবে শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি শুধু নয়, বৈঠক নিয়ে নানা গড়িমসির অভিযোগও রয়েছে।” শ্রমমন্ত্রী জানান, মজুরি-সহ অন্য সুযোগ সুবিধা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত বৃদ্ধি করাটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ভোটের পর বৈঠকে তা জোর দেওয়া হবে।

রাজ্য শ্রম দফতরের কয়েকজন অফিসার জানিয়েছেন, প্রতিটি শ্রমিক সংগঠন, মালিকপক্ষ-সংগঠন এবং সরকারি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ওই বৈঠক হয়। তিনপক্ষকে একত্রে এক জায়গায় বসাতেই সময় লেগে যায়। তাছাড়া এই বৈঠকগুলি এর আগে কলকাতায় হওয়ায় উত্তরবঙ্গ-সহ বিভিনন এলাকায় থেকে প্রতিনিধিদের যাতায়াত, ট্রেন-বিমানের টিকিট পাওয়ার মত নানা বিষয়ও জড়িত থাকত। এ বার সেটা অনেকটাই মেটানো গিয়েছে। ঠিক হয়েছে, শিলিগুড়িতেই বৈঠক হবে। গত ৫ মার্চ ও ১২ মার্চ শিলিগুড়িতে দু’দফায় বৈঠকও হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া মজুরি বাড়ানো নিয়ে শ্রমিক সংগঠন এবং মালিকপক্ষের নানা বক্তব্য থাকে, সেখানে কম করে ১০-১২টি বৈঠক না হলে সমাধানসূত্র সামনে আসেনা। সরকার এ ক্ষেত্রে কেবলমাত্র মধ্যস্থতার ভূমিকায় থাকে।

বৈঠকের নিষ্পত্তি নিয়ে বাম-ডান দু’পক্ষ অবশ্য দুই মেরুতে। আরএসপি-র শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি বিনয় চক্রবর্তী বলেন, “বামফ্রন্ট আমলে কয়েকবার দেরি হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু চা শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান, মজুরি বাড়াতে সরকার কার্যকরী ভূমিকা নিত।” আর রাজ্যের শাসক দলের চা শ্রমিক সংগঠন তৃণমূল টি প্লান্টেশন ওয়াকার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি অলোক চক্রবতী বলেন, “আমরাই তো এ বার মার্চের আগে বৈঠক শুরু করেছি। বাম আমলে তো তা কোনও সময়ই হয়নি।” যত দ্রুত বৈঠক হয়ে মজুরি নিষ্পত্তি হলে তা শ্রমিকদেরই লাভ বলে মনে করেন মোর্চার দার্জিলিং-তরাই-ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন লেবার ইউনিয়নের সম্পাদক সুরজ সুব্বাও। যদিও তা কোনও সময়ই হচ্ছে না বলে তিনি জানিয়েছেন।

সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে যে দু’টি বৈঠক হয়েছে সেখানে শ্রমিক সংগঠনগুলি মূল্যবৃদ্ধির কথা জানিয়ে মজুরি রোজ ২৮৫-৩২২ টাকা’র মত দাবি করেছে। যদিও মালিকপক্ষ তা মানতে চায়নি। তাঁরা জানান, গতবার ৬৭ টাকা থেকে দফায় দফায় বেড়ে মজুরি ৯৫ টাকা হয়েছে। শ্রমিকেরা রেশন, জ্বালানি, আবাসন, ছুটির টাকা, শিশুদের স্কুল যাতায়াতের ব্যবস্থা, চিকিত্‌সা’র মত সুবিধাও বাগানের তরফে পান। যা অঙ্কের হিসাবে ধরলে একজন শ্রমিক রোজ ১৫০ টাকার মত মজুরি পান। বছরে ২৯০টি কর্মদিবসের মধ্যে ২৫০ দিনের মত কাজ হয়। বাকি ৪০ দিনের জঞ্জাল সাফাই, নালা নর্দমা ঠিক, গাছ ছাঁটা’র মত কাজ শ্রমিকদের দিয়ে করানো হলেও পুরো মজুরি ও সুবিধা দেওয়া হয়।

ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মনোজিত্‌ দাশগুপ্ত বলেন, “ ভোটের পরেই বৈঠক হবে। সবপক্ষই তাতে সম্মত হয়েছে। সেখানেই আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব।”

tea-estate workers wages kaushik choudhury siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy