Advertisement
E-Paper

চা শিল্পের মন্দায় পতন শহরের অর্থনীতিরও

নব্বইয়ের দশকে সার্কিট বেঞ্চের দাবিতে জলপাইগুড়ি শহরের উত্তাল হয়ে হয়ে ওঠার কথা এখনও শহরবাসীর স্মৃতিতে টাটকা। সর্ব স্তরের বাসিন্দারা আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন বলে সেই আন্দোলনের নেতারা এখনও নানা আলোচনায় গর্ব করে থাকেন।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০১:১১
জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।

জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।

নব্বইয়ের দশকে সার্কিট বেঞ্চের দাবিতে জলপাইগুড়ি শহরের উত্তাল হয়ে হয়ে ওঠার কথা এখনও শহরবাসীর স্মৃতিতে টাটকা। সর্ব স্তরের বাসিন্দারা আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন বলে সেই আন্দোলনের নেতারা এখনও নানা আলোচনায় গর্ব করে থাকেন। যদিও শহরের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা এক প্রবীণের কথায়, সে আন্দোলনে যতটা দাবি ছিল তার থেকেও বেশি ছিল হাহাকার আর শত বছর পেরোনো এক শহরের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার আর্তি।

১৮৬৯ সালে ব্রিটিশরা জলপাইগুড়ি জেলা গঠন করার সময়েই কিছু এলাকাকে বাদ দিয়েছিল। পরে স্বাধীনতার সময় জলপাইগুড়ি জেলা থেকে ৫টি থানা এলাকা কেটে নিয়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। সে হিসেবে, ভৌগোলিক এবং প্রশাসনিক নানা কারণে জন্মলগ্ন থেকেই জলপাইগুড়ি জেলার ‘অঙ্গচ্ছেদে’র ইতিহাস রয়েছে। জলপাইগুড়ি শহরের ইতিহাস অবশ্য জেলার থেকেও প্রাচীন।

জলপাইগুড়ি

• পুরসভা গঠন ১-৪-১৮৮৫

• জনসংখ্যা ৭৯৩৬ বর্তমান জনসংখ্যা ৩ লক্ষ ৪ হাজার (২০১১-র সুমারি)

শহরের ইতিহাস অন্তত আড়াইশো বছর পুরোনো। ১৭৭৩ সালে বৈকুন্ঠপুরের রাজধানী সরিয়ে আনা হয় জলপাইগুড়ি শহরে। এর প্রায় একশো বছর পরে গঠিত এক নতুন জেলার নামকরণ হল এই রাজধানী শহরের নামে। জেলা গঠনের পরেই রাজস্ব বাড়ানোর জন্য ইংরেজরা জেলা জুড়ে চা বাগান পত্তন করেন। চা বাগানগুলির সদর দফতর তৈরি হল জেলা সদরেই। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলও শুরু হল সে সময়ে। তার আগেই অবশ্য শহরে মেয়েদের স্কুল তৈরি হয়ে গিয়েছিল। প্রশাসনিক কাজের সুবিধের জন্য ১৮৮৫ সালে বড়লাটের নির্দেশে জলপাইগুড়ি পুরসভা গঠিত হয়। জলপাইগুড়ি শুধু জেলা সদরই নয়, বিভাগীয় সদরও। বিভাগীয় কমিশনারের অফিস থেকে শুরু করে তাবড় সরকারি অফিস তৈরি হল জলপাইগুড়িতে। তত দিনে, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলা সব কিছুতেই তখন জলপাইগুড়ি শহর বাংলার মানচিত্রে অন্যতম উজ্জ্বল স্থান দখল করেছে। ইতিহাসবিদদের মতে, দেশভাগের আগের সময়কাল পর্যন্ত জলপাইগুড়ির ‘সুবর্ণ’ অধ্যায় বলা যায়।

দেশভাগের সময়ে ৫টি থানা এলাকা জলপাইগুড়ি থেকে পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরে তৈরি হল যোগাযোগের সমস্যা। যে ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে এক দিকে সরাসরি কলকাতা, অন্য দিকে উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে জলপাইগুড়ি শহরের যোগাযোগ ছিল, তা চলে গেল পূর্ব পাকিস্তানে। কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল জলপাইগুড়ি শহর। পরবর্তীতে অবশ্য চিন যুদ্ধের সময় জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তা সেতু তৈরি হলেও, গবেষকদের মতে তত দিনে যথেষ্ট দেরি হয়ে গিয়েছে।

এক ঝলকে সমস্যা

• আয়তন ১৩ বর্গ কিমি

• বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের অভাব।

• অপ্রশস্ত রাস্তার কারণে সকালে বিকেলে শহরের মূল রাস্তাগুলিতে যানজট।

• নিকাশি উন্নত নয়।

• শহর বা সংলগ্ন এলাকায় ক্ষুদ্র-বা মাঝারি শিল্প হয়নি।

• বেশির ভাগ চা বাগানের সদর দফতর জলপাইগুড়ি থেকে স্থানান্তরিত।

• কাঁচা পাতার সঙ্কটে জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রে লেনদেনের পরিমাণ কম।

• সার্কিট বেঞ্চ চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা।

• দীর্ঘ দিন ধরে জলপাইগুড়ি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কাজ অসমাপ্ত পড়ে।

সত্তরের দশকের গোড়া থেকেই চা বাগানের সদর দফতরগুলি জলপাইগুড়ি থেকে সরতে শুরু করে। আশির দশকের শেষের দিকে এই প্রবণতা আরও বেড়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। কোনও সদর দফতর চলে যায় কলকাতায়, কোনটা আবার শিলিগুড়িতে। রাজনৈতিক কারণে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের শিলান্যাসও জলপাইগুড়িতে করার পরিকল্পনা বাতিল হয়। চা নিলাম কেন্দ্র শিলিগুড়িতে প্রতিষ্ঠার পরে চা-কেন্দ্রিক অর্থনীতির ভরকেন্দ্র জলপাইগুড়ি থেকে সরে শিলিগুড়ির দিকে ঘেঁষতে শুরু করে। যে চা অর্থনীতিকে হাতিয়ার করে শহরের উন্নতি হয়েছিল, তার হাত ধরেই শুরু হয় অর্থনৈতিক সঙ্কট। কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে আসে বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে পরিকাঠামোগত অভাবের কারণে শিল্পক্ষেত্রেও বিনিয়োগ আসেনি তিস্তাপাড়ের এই শহরে।

গবেষক তথা সাহিত্যিক উমেশ শর্মার কথায়, “সত্তরের দশকে নামী একটি চা সংস্থা জলপাইগুড়ি থেকে সদর অফিস নিয়ে কলকাতায় চলে যায়। সে দিন থেকেই শহরের অর্থনীতির অবক্ষয় শুরু।” স্কুল, কলেজের অভাব না থাকলেও বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের যথাযথ সুযোগ শহরে নেই বলেই বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। কিছুদিন আগেও সরকারি চাকরির বিকল্প হিসেবে যুবক-যুবতীদের কাছে অন্য কোনও সুযোগ ছিল না বলেই অভিযোগ। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রে এমনটা কিন্তু হওয়ার কথা ছিল না। তাঁদের মতে, শহরের মধ্যেই ছিল অর্থনৈতিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ। শহরের দুই নদী-ই বদলে দিতে পারত শহরকে।

(চলবে)

গুরুঙ্গের নাম করে তোলাবাজি, নালিশ

জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গের নাম করে শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীদের কাছে তোলা চেয়ে ফোন আসার অভিযোগ ওঠায় উদ্বিগ্ন মোর্চা নেতৃত্ব। ক্ষুব্ধ গুরুঙ্গের নির্দেশে মঙ্গলবার মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারকে বিষয়টি জানিয়েছেন। কমিশনার বলেন, “যে নম্বর থেকে ফোন করে টাকা চাওয়া হয়েছে, তার মালিককে ধরার চেষ্টা হচ্ছে।”

tea estate loss economy anirban roy jalpaiguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy