Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চাষিদের কৃতিত্বেই বাড়ছে আমের চাষ

কথিত রয়েছে, সম্রাট হুমায়ুন গৌড়বঙ্গের নাম দিয়েছিলেন জন্নতাবাদ। আমের প্রতি মুগ্ধ হয়েই গৌড়বঙ্গের এই নাম দিয়েছিলেন তিনি। কথিত আছে, শেরশাহের সঙ্গে যুদ্ধের সময় হুমায়ুন গৌড়বঙ্গের একটি আম বাগানে আস্তানা গেড়েছিলেন। সেই সময় ছিল আমের। মরসুমি আম খেয়ে তিনি এতই মুগ্ধ হন যে ৬ মাস থেকে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় নাম দিয়ে গিয়েছিলেন জানাতাবাদ।

গাছ ভরে রয়েছে আমের মুকুলে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

গাছ ভরে রয়েছে আমের মুকুলে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৪
Share: Save:

কথিত রয়েছে, সম্রাট হুমায়ুন গৌড়বঙ্গের নাম দিয়েছিলেন জন্নতাবাদ। আমের প্রতি মুগ্ধ হয়েই গৌড়বঙ্গের এই নাম দিয়েছিলেন তিনি। কথিত আছে, শেরশাহের সঙ্গে যুদ্ধের সময় হুমায়ুন গৌড়বঙ্গের একটি আম বাগানে আস্তানা গেড়েছিলেন। সেই সময় ছিল আমের। মরসুমি আম খেয়ে তিনি এতই মুগ্ধ হন যে ৬ মাস থেকে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় নাম দিয়ে গিয়েছিলেন জানাতাবাদ। আকবর গৌড়বঙ্গ থেকে আমের চারা নিয়ে গিয়ে দিল্লিতে রোপণ করেছিলেন। গৌড়বঙ্গ তথা মালদহ জেলায় আম চাষের ইতিহাস কতটা প্রাচীন তা বোঝাই যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ হলেও ফজলি, লক্ষ্মণভোগ এবং হিমসাগর আমের উৎস কিন্তু মালদহ।

কথিত রয়েছে, ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন মালদহের কালেক্টর র্যাভেনশ সাহেব ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে গৌড়ে গিয়েছিলেন। তেষ্টা মেটাতে ফজলু বিবি নামে এক মহিলার কাছে জল খেতে চেয়েছিলেন তিনি। ওই মহিলা তাঁকে একটি আম খেতে দিয়েছিলেন। সাহেব তাঁর কাছে ইংরেজিতে আমটির নাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন। মহিলা বুঝতে না পেরে নিজের নাম বলে ফেলেছিলেন। সেই থেকে ফজলি আমের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন। তেমনই শোনা যায়, লক্ষ্মণ ভোগ আমের নাম হয়েছিল ইংরেজবাজারের চন্ডীপুরের এক ব্যক্তির নামানুসারে।

এ-ও কথিত আছে, লক্ষ্মণ নামে এক চাষি একটি আমের চারা রোপণ করেছিলেন। সেই গাছটি দ্রুত বেড়ে ওঠে ও প্রচুর ফল হয়। এরপর থেকে লক্ষ্মণভোগ আমের নামকরণ। হিমসাগর আমটি প্রচন্ড মিষ্টি হওয়ায় ওই নাম দেওয়া হয়েছে। জেলার আম বিশেষজ্ঞ কমলকৃষ্ণ দাস বলেন, “মোঘল আমল থেকে মালদহ জেলার আমের সূচনা কাল হিসেবে ধরা হয়। ইতিহাসে রয়েছে, আমের সুনাম সম্রাট বাবরও করেছিলেন। তিনি আমকে হিন্দুস্থানের সেরা ফল বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তাঁর ছেলে হুমায়ুন আমের লোভে মালদহে প্রায় ছয় মাস থেকে গিয়েছিলেন, এমন সব কথা রয়েছে। এখন জেলায় বিভিন্ন প্রজাতির আমের ফলন হচ্ছে। অতীতে ফজলি, আর্সিনা আম চাষের প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল বেশি। কারণ সেই সময় জল পথে ব্যবসা বাণিজ্য হতো। বর্ষার সময় নদী ফুলেফেঁপে উঠলে জলপথে আম রফতানি করতেন ব্যবসায়ীরা।”

উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৯০ সাল থেকে ১৯৩০ পর্যন্ত জেলায় আম বাগানের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার হেক্টর। পরে ২০০০ সাল থেকে ফের জেলায় আমের জমির পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার হেক্টরে। জেলার মধ্যে ইংরেজবাজার, মানিকচক, রতুয়া ১ ও ২ ব্লকেই ৬৫ শতাংশ আম চাষের জমি রয়েছে। ইংরেজবাজারে ৯ হাজার হেক্টর, মানিকচকে ৪ হাজার এবং রতুয়া-১ ও ২ ব্লকে তিন হাজার হেক্টর করে জমিতে আম চাষ হয়।

ওই সব জমিতে প্রচুর ফজলি আম চাষ হচ্ছে। জেলাতে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ফজলি, প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্মণভোগ, সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আর্সিনা এবং ল্যাংড়াও প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। জেলায় আমের উৎপাদন দিনকে দিন বেড়ে চলার জন্য চাষিদের পরিশ্রমকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন জেলার উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিকেরা।

জেলার উদ্যান পালন দফতরের সহ-অধিকর্তা রাহুল চক্রবতী বলেন, “অতীতের রেকর্ডে দেখা গিয়েছে, যে বছর আমের উৎপাদন ভাল হয়েছে, পরের বছর উৎপাদন আবার মার খেয়েছে। একে আমের ‘অফ ইয়ার’ ও ‘অন ইয়ার’ ধরা হয়। তবে সম্প্রতি বছর তিনেক ধরে ফি বছরই সম পরিমাণে আম উৎপাদন হচ্ছে। এর পিছনে চাষিদের পরিশ্রম রয়েছে। তাঁরা যে ভাবে গাছের পরিচর্যা করছেন, তাতে তাতে আমের উৎপাদন ভাল হচ্ছে।”

১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ব্যবসায়ীর পাঁচ বছরের জন্য আম বাগান লিজ নিতেন। সেই সময় ১৪ আনায় মিলত। এক বিঘা জমির লিজ জেলায় আমের উপর মানুষের নির্ভরশীলতা ক্রমশ বাড়ছে। মালদহে প্রায় ২৫০ প্রজাতির আম চাষ হয়। বাজারও বেড়েছে। কিন্তু, মালদহে আম ভিত্তিক শিল্প কেন্দ্র গড়ে তোলার নানা প্রকল্পের কথা শোনা গেলেও বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ চাষিদের। রয়েছে ক্ষোভও। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mango maldaha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE