Advertisement
E-Paper

ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু, অবরোধ জাতীয় সড়ক

এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক কিশোরীর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ডুয়ার্সের বানারহাট থানা এলাকার বিন্নাগুড়ি এলাকায়। ওই কিশোরীর বাবা তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে বলে দাবি করে তাঁর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শুক্রবার সকালে টানা এক ঘণ্টা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখেন ছাত্র ছাত্রী-সহ এলাকার কয়েকশো বাসিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০১
মৃতার বাড়ির সামনে উপচে পড়েছে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

মৃতার বাড়ির সামনে উপচে পড়েছে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক কিশোরীর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ডুয়ার্সের বানারহাট থানা এলাকার বিন্নাগুড়ি এলাকায়।

ওই কিশোরীর বাবা তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে বলে দাবি করে তাঁর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শুক্রবার সকালে টানা এক ঘণ্টা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখেন ছাত্র ছাত্রী-সহ এলাকার কয়েকশো বাসিন্দা। পুলিশ মৃতার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। তবে তার মা-বাবা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিষয়টি নিছক আত্মহত্যা বলে দাবি করেছেন। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “দেহটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। কেউ কোনও খুনের অভিযোগ দায়ের করেনি। আমরা তদন্ত চালাচ্ছি।”

বিন্নাগুড়ি হিন্দি হাই স্কুলের পড়ুয়া মৃতা ওই ছাত্রীর নাম প্রীতি কুমারী তেওয়ারি (১৬)। তাঁর এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। পরিবারে বাবা মা ছাড়া চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রীতি বড়।

তার সহপাঠী ও বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় সন্দেহের বশে মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করে তার বাবা দেবেন্দ্র তিওয়ারি দেহটি বাড়ির একটি গুদামঘরে লুকিয়ে রেখেছিলেন। দেবেন্দ্রবাবু ভ্যানরিক্সা ভাড়া দিয়ে সংসার চালান।

বৃহস্পতিবার স্কুলে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের ফেয়ারওয়েল ছিল। বেলা বারোটা নাগাদ প্রীতি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। স্কুলের অনুষ্ঠান ও খাওয়া দাওয়া শেষ হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। ৬টা নাগাদ বাড়ি ফিরে তার এক ভাইকে সাইকেলে চড়িয়ে টিউশন থেকে বাড়ি নিয়ে আসে প্রীতি। রাত ৯টা নাগাদ প্রীতির বাবা প্রতিবেশীদের জানান, তার বড় মেয়ে অসুস্থ হয়ে বীরপাড়া হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। কয়েকজন প্রতিবেশী তার খোঁজ নিতে বাড়ি আসেন। লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা চলার কিছুক্ষণ পরে তাঁর বাবা জানিয়ে দেন, তাঁর মেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার দেহ হাসপাতালে রয়েছে।

দেবেন্দ্রবাবুর অসংলগ্ন কথায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ লাগোয়া গুদামে উঁকি দিলে প্রীতির দেহ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন বলে দাবি। মৃতদেহের পাশে একটি ওড়না পড়ে ছিল বলে দাবি তাদের। প্রতিবেশীদের দাবি, বাড়ির পাশে মাটি খোঁড়ার চিহ্ন ছিল। যা দেখে তাঁদের সন্দেহ, মেয়ের দেহ মাটিতে পুঁতে দেওয়ার জন্যই দেবেন্দ্রবাবু মাটি খুঁড়েছিলেন।

খবর পেয়ে বানারহাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দেবেন্দ্রবাবুকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হতেই স্কুলের পড়ুয়া ও বাসিন্দারা সকাল ১০টা থেকে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশের আশ্বাসে পরে অবরোধ ওঠে।

মৃতার মা ঊষাদেবীর কথায়, “ও যখন বাড়ি ফেরে, তখন আমি আর আমার স্বামী বাড়ির বাইরে ছিলাম। ছেলেমেয়েরা একটি ঘরে পড়াশোনা করছিল। বাইরে যাওয়ার নাম করে সে পাশের ঘরে গিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। আমরা দেহটি নামাই। ওর বাবার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।”

দেবেন্দ্রবাবুর কথায়, “আমার মেয়ে কে কেন মারতে যাব? ও আত্মহত্যা করেছে। কোনওরকম ঝগড়া হয়নি।” তাঁর দাবি, পুলিশ তদন্ত করলেই সত্য প্রমাণিত হবে।

এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য উমেশ প্রসাদ বলেন, “দেহটি মেলার আগে পর্যন্ত দেবেন্দ্রবাবু এক রকম কথা বলেছিলেন। দেহ মেলার পরে তাঁর বয়ান পাল্টে গিয়েছে। সম্ভবত স্কুল থেকে দেরি করে বাড়ি ফেরায় বাবার সঙ্গে প্রীতির ঝগড়া হয়েছিল। ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছুই পরিস্কার নয়।”

banarhat unnatural death death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy