সাগরদিঘিতে চলছে বোটিং। ময়লা জমেছে দিঘির পাড়ে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
কয়েক বছর আগেও শীতের মরসুমে কোচবিহার শহরের একাধিক জলাশয়ে উপচে পড়ত পরিয়ায়ী পাখিদের ভিড়। সকালে রাজনগরের ঘুম ভাঙত ওই পাখিদের ডাকে। সন্ধেবেলা পাখি দেখতে দিঘি যেতেন বাসিন্দারা। কিন্তু এবার মাঝ জানুয়ারিতেও দেখা মিলছে না শীতের অতিথিদের। এখনও পর্যন্ত ২৫-৩০টি পাখির দেখা মিলেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাসের কর্তারা।
কোচবিহার শহরের সাগরদিঘি, লালদিঘি কিংবা রাজবাড়ি দিঘি প্রায় সুনসান। পাখিরা আসেনি। পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলির অভিযোগ, দূষণ আর নৌকাবিহার চালু হওয়াতেই মুখ ফিরিয়েছে পরিযায়ীরা। প্রশাসনিক উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে সাগরদিঘি চত্বরকে দ্রুত ‘সাইলেন্স জোন’ হিসাবে ঘোষণার দাবি উঠেছে। ওই দিঘিতেই একসময়ে সবচেয়ে বেশি পরিযায়ীর দেখা মিলত।
রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “দূষণ, জলাশয় অপরিচ্ছন্ন রাখার মত সমস্যাগুলি মিটিয়ে কীভাবে আবার পুরনো ছবি ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে দফতরের আধিকারিক ও প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।” কোচবিহার সদরের মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা বলেন, “সাগরদিঘিতে পাখি আসতে শুরু করেছে। শীত জাঁকিয়ে পড়লে পাখির সংখ্যা অনেকটা বাড়বে বলে আশা করছি। অন্য সব জলাশয়েও কিছু দিনের মধ্যে পাখি আসবে। উদাসীনতার অভিযোগ ঠিক নয়।” সাগরদিঘি চত্বরকে ইতিমধ্যে ‘সাইলেন্স জোন’ করার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পরিবেশপ্রেমী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্তত চার দশক আগে কোচবিহার শহরের সাগরদিঘিতে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়। আশির দশকের শুরুতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা অন্তত এক হাজারে দাঁড়ায়। প্রতি বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে লেসার হুইসলিং টেল প্রজাতির ওই পাখিদের আনাগোনা শুরু হত। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ওই পরিযায়ীরা সেখানে থাকত। ভবানীগঞ্জ বাজার লাগোয়া চত্বর লালদিঘি জুড়েও ফি বছর ওই প্রজাতির হাজারখানেক পাখির ভিড় হত। রাজবাড়ির আকর্ষণ বাড়িয়ে সেখানকার ঝিলেও পরিয়ায়ীদের দেখা যেত। কিন্তু এ বছর তিনটি জলাশয়ই সুনসান।
পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাসের কর্তারা জানান, আমাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৮৭ সালে চার হাজারের বেশি পাখি এসেছিল। সাগরদিঘির জলাশয়ের অন্তত ৬৫ শতাংশ পাখিদের ভিড়ে ঢেকে গিয়েছিল। দিঘি চত্বরের রাস্তা জুড়ে ক্রমবর্ধমান যানবাহন, হর্নের শব্দ, মাইক নিয়ে কর্মসূচি, কাপর কাচা থেকে অতিরিক্ত আলোকস্তম্ভ বসানোর মত সমস্যা পাখিদের টেকা মুশকিল করে তুলছিল। এবার নৌকা বিহার, মাছ শিকার ও চাষের কারণে পাখিই আসেনি বলা চলে। এখনও বড়জোর ২৫-৩০টি পাখি দেখা গিয়েছে। পরিচ্ছন্নতার অভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েছে লালদিঘিও। শব্দদূষণে জেরবার রাজবাড়ির দিঘিও। ন্যাসের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “পাখির টানেই কুলিকে পর্যটনের প্রসার ঘটেছে। অথচ কোচবিহার শহরের দিঘিতে সেই পরিয়ায়ী পাখিদের ব্যাপারে কোনও ভাবনাচিন্তা হয়নি। উল্টে দূষণ বেড়েছে। নৌকাবিহারের মত প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।”
তাঁর সংযোজন, দ্রুত সাগরদিঘি চত্বরকে ‘সাইলেন্স জোন’ না করা হলে পরিয়ায়ীরা হয়তো পাকাপাকি ভাবে কোচবিহার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy