Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জমি রাখতে স্ট্রবেরি চাষ ময়নাগুড়িতে

চা বাগান বাড়ছে। কৃষি জমি দখল করে নিচ্ছে বাগান। সেই আগ্রাসন থেকে কৃষি জমি রক্ষা করতে স্ট্রবেরি চাষকে গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি দফতর। ইতিমধ্যে ময়নাগুড়ির এক চাষি বিকল্প হিসেবে স্ট্রবেরি চাষ শুরুও করে দিয়েছেন। তাঁর সাফল্যকে প্রচারে এনে অন্য চাষিদের উত্‌সাহিত করার কাজে নেমেছেন কৃষি কর্তারা। স্ট্রবেরি চাষ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আলোচনাচক্রের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চলছে স্ট্রবেরি চাষ। দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।

চলছে স্ট্রবেরি চাষ। দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৮
Share: Save:

চা বাগান বাড়ছে। কৃষি জমি দখল করে নিচ্ছে বাগান। সেই আগ্রাসন থেকে কৃষি জমি রক্ষা করতে স্ট্রবেরি চাষকে গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি দফতর।

ইতিমধ্যে ময়নাগুড়ির এক চাষি বিকল্প হিসেবে স্ট্রবেরি চাষ শুরুও করে দিয়েছেন। তাঁর সাফল্যকে প্রচারে এনে অন্য চাষিদের উত্‌সাহিত করার কাজে নেমেছেন কৃষি কর্তারা। স্ট্রবেরি চাষ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আলোচনাচক্রের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ময়নাগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব দাস বলেন, “চাষের জমি ক্রমশ চা বাগানের দখলে চলে যাচ্ছে। চাষিরা অভিযোগ করছেন, উত্‌পাদিত সবজির দাম মিলছে না। তাই চাষের মাঠে চা বাগান করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত লাভজনক স্ট্রবেরিই বেছে নেওয়া হয়েছে।”

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাগুড়ি ব্লকের ৬৪ হাজার ৩৮৪ হেক্টর এলাকার মধ্যে প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টর এলাকায় ছিল শস্য এবং সবজি চাষের মাঠ। তার মধ্যে ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর উঁচু জমির আয়তন কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার হেক্টরে। উঁচু জমির খুব সামান্য টিকেই আছে। ২০০৫ সাল থেকে চা বাগানের দখলে চলে গিয়েছে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর চাষের জমি। সেখানে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ছোট বাগান গড়ে উঠেছে। প্রায় প্রতি দিনই কৃষি জমিতে চা বাগান তৈরির কাজ চলছে।

কৃষি আধিকারিকদের আশঙ্কা, চাষিদের দ্রুত বিকল্প লাভজনক চাষের দিকে টেনে আনা সম্ভব না হলে ব্লকের ২৪ হাজার ৭৫২ হেক্টর মাঝারি উঁচু ফসলের মাঠ রক্ষা করা সম্ভব হবে না। সবজি এবং শস্য উত্‌পাদন উদ্বেগজনক ভাবে মার খাবে। এক কৃষি আধিকারিক জানান, এই কারণেই স্ট্রবেরি চাষ বেছে নেওয়া হয়েছে। মাত্র ছ’মাসের শীতকালীন ফসল। বাড়তি শ্রমিকের প্রয়োজন নেই। পরিশ্রমও কম। পাইকারি বাজারে চারশো টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে। এই চাষ করে চাষিকে আর বাজারে ঘুরে বেড়াতে হয় না। পাইকাররা মাঠে এসে ফল নিয়ে যায়। এক বিঘা জমি চাষ করে আড়াই লক্ষ টাকা উপার্জন সম্ভব।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাগুড়ি ব্লকের দোমহনি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বর্মনপাড়ার চাষি বিক্রম দাস এক বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন। মাটিতে বিছানো খড়ে গাছ বাড়তেই ফুল এসেছে। খবর পেয়ে শুরু হয়েছে পাইকারদের আনাগোনা। ওই চাষি জানান, রানাঘাট থেকে চার হাজার চারা কিনে এনেছেন। কৃষি দফতরের কর্তাদের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে ৮ হাজার চারা তৈরি করে গত অক্টোবর মাসে খেতে বুনেছেন। খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার টাকা।

বিক্রমবাবু বলেন, “সবজি, ধান চাষ করে চলছিল না। ভাবছিলাম চা বাগান করব। এমন সময়ে খবরের কাগজে স্ট্রবেরি চাষ নিয়ে পড়ে কৃষি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওঁরা উত্‌সাহ দিলে আর অপেক্ষা করিনি।”

ময়নাগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক জানান, একটি গাছ থেকে প্রায় এক কেজি স্ট্রবেরি মিলবে। ফলের আকর্ষণীয় রং আনতে জৈব সারে চাষ করতে হবে। বিভিন্ন এলাকার চাষিদের বর্মনপাড়ায় নিয়ে গিয়ে স্ট্রবেরি খেত দেখানো হচ্ছে। অনেকে চাষের পদ্ধতি জানতে খোঁজ নিতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, “চাষিদের উত্‌সাহ দেখে স্ট্রবেরি চাষ নিয়ে আলোচনাচক্রেরও আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসেই আলোচনাচক্র করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

biswajyoti bhattacharya mayanaguri strawberry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE