শহরে পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ শেষ হয়ে এলেও শুরুই হয়নি জল তোলার প্রকল্পের কাজ।
তৃণমূল পরিচালিত বালুরঘাট পুরসভা শহরের কংগ্রেসঘাটে ‘ইনটেক পয়েন্ট’ করে আত্রেয়ী নদী থেকে জল তুলে ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পাঠানো হবে বলে ঠিক করেছে। সম্প্রতি পুর দফতরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ইঞ্জিনিয়রেরা বালুরঘাট এসে প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখেন। দফতরের অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়র অসীম সরকার বলেন, “শহরের হোসেনপুরে জল শোধনের জন্য ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ প্রায় শেষ। তবে ইনটেক পয়েন্টের কাজ শুরু হয়নি। ৪টি জলাধারের মধ্যে দুটির কাজে অগ্রগতি ভাল। দ্রুত কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।” চলতি বছরের অগস্টের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে বিরোধী কাউন্সিলরেরা প্রশ্ন তুলেছেন।
পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রাজেন শীল বলেন, “ওই ইনটেক পয়েন্ট তৈরি প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। কয়েকটি আগে টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু একজন ১০ কোটি, আরেক জন ৭ কোটি বরাত প্রস্তাব দেন। দরপত্রে অস্বাভাবিক রকম ফারাক থাকায় টেন্ডারটি বাতিল হয়ে যায়। ফের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে।” তিনি জানান, ইনটেক পয়েন্ট থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে আত্রেয়ী নদীর জল পৌঁছবে হোসেনপুরের ট্রিটমেন্ট প্লান্টে। জল শোধন করে বাড়ি বাড়ি পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ হবে। ভাইস চেয়ারম্যানের দাবি, “ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ মার্চের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। অগস্ট মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।”
কিন্তু শহরের ২৫টি ওয়ার্ডে পাইপ লাইন বসানোর কাজ শুরু না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে ওই প্রকল্পটি শেষ করা যাবে কী না, তা নিয়ে বিরোধীরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। পুরসভার আরএসপির প্রাক্তন চেয়ারপার্সন তথা পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সুচেতা বিশ্বাস বলেন, “যে গতিতে কাজ হওয়ার কথা ছিল, তা হচ্ছে না। শহরের এখনও জলাধার তৈরির কাজ শেষ হয়নি। ইনটেক-পয়েন্ট, পাইপ লাইন বসানোর কাজ এখনও শুরুই হয়নি। কবে তা হবে বোঝা যাচ্ছে না।”
২০১০-১১ আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন প্রকল্পে প্রায় ৪২ কোটি টাকা পুরসভাকে দেয়। সে সময় পুরসভার ক্ষমতায় ছিল আরএসপি। তৃণমূলের চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সদস্য দেবজিত রুদ্র জানান, প্রায় ৬০ বছর ধরে পুরসভার ক্ষমতায় ছিল আরএসপি। ক্ষমতায় থাকাকালীন ওই প্রকল্পে কেন্দ্রের আর্থিক বরাদ্দ পেয়েও কাজ করতে পারেনি গত বোর্ড। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরই কাজটি গতি পেয়েছে।
তবে আরএসপি এবং তৃণমূল দুই পক্ষকেই দুষেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায়। তাঁর অভিযোগ, “আরএসপি বোর্ডের পরিকল্পনা রুপায়ণে ব্যর্থতার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। আর বর্তমান তৃণমূল বোর্ড প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।” তিনি জানান, শহরবাসীকে এখনও ট্যাপের ঘোলা জল খেতে হচ্ছে। তাছাড়া ঢিমেতালে কাজের জন্য প্রকল্পের খরচও ফি বছর বেড়েই চলেছে। অগস্ট মাসে যে জল সরবরাহের কথা বলা হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। পুরসভা সূত্রের খবর, ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে ইনটেক পয়েন্ট তৈরি থেকে শহরের মধ্যে দিয়ে প্রায় দু কিলোমিটার মাটির নিচ দিয়ে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পাইপ লাইনের কাজের গতি না বাড়ালে অগস্টে কাজ শেষ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে পুরসভা অফিসারদের অনেকেই স্বীকার করে নিয়েছেন। এর সঙ্গে রয়েছে এলাকা ভিত্তিক পাইু লাইন বসানোর কাজও। যার টেন্ডার এখনও হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy