পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছুড়ছেন টিএমসিপি সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল কোচবিহার। তবে জেলায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই ঘটনায় তাঁদের দলের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন।
সংগঠন সূত্রের খবর, বিটি অ্যান্ড ইভনিং কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত দু’মাস ধরে কলেজে উত্তেজনা অব্যাহত। নির্বাচনের আগেই টিএমসিপির দুই গোষ্ঠীর মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা হয়। পরিস্থিতি সামলাতে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি কোচবিহারে এসে দুই গোষ্ঠীকে সতর্ক করেন। তাঁরা চলে যাওয়ার পরে ফের দুই গোষ্ঠী গোলমালে জড়ায়।
বৃহস্পতিবার শহরের বিটি অ্যান্ড ইভনিং কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। সকাল থেকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বোমাবাজির অভিযোগ উঠে। অভিযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করেও বোমা ছোড়া হয়। চলতে থাকে ইট বৃষ্টি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্তের সামনেও বোমা পড়ে বলে অভিযোগ। পুলিশ লাঠিচার্জ করার পর দুই রাউন্ড কাঁদানো গ্যাসের শেল ফাটায়। ঘটনায় ৩ জন জখম হয়েছে। গণ্ডগোলের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।
কলেজ সূত্রের খবর, গণনার শেষে সংগঠনের অভিজিৎ দে ভৌমিকের গোষ্ঠী ২১টি আসনে জয়ী হয়ে ছাত্র সংসদ দখল করে। ছাত্র সংসদের ২১ টি আসনে দুই পক্ষ মিলিয়ে ৩২ জন প্রার্থী দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় অভিজিৎবাবুর গোষ্ঠীর সদস্যরা। এদিন ১৭টি আসনে ভোট হয়। সবগুলি আসন দখল করে ওই গোষ্ঠীর সদস্যরা। অভিজিৎবাবুর পক্ষে রয়েছেন যুব তৃণমূলের সহ সভাপতি রানা বসু, টিএমসিপির রাজ্য সহ সভাপতি রাহুল রায়রা। অন্য পক্ষে রয়েছে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি শুভজিৎ কুন্ডু ও তাঁর অনুগামীরা। অভিজিৎবাবুর গোষ্ঠীর নেতা রাকেশ চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনে হার বুঝতে পেরে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালায় শুভজিৎবাবুর লোকজন।” পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “দুই-এক জায়গায় গোলমালের চেষ্টা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গণ্ডগোলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমাদের কেউ ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।”
দলের তরফে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হলেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অভিজিৎ দে ভৌমিক গোষ্ঠীর তরফে সোজাসুজিভাবে অন্য গোষ্ঠীর দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, “স্টেশন মোড়ের পার্টি অফিস লক্ষ করে বোমা ছোড়ে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি শুভজিৎ কুন্ডুর অনুগামীরা।” অভিজিৎবাবুর দাবি, সকাল ১০টা নাগাদ ওই গোষ্ঠীর দু’জন সদস্য বাইকে এসে বোমা ছুড়ে চলে যায়। পরে ওই সদস্যরাই কলেজ গেটের সামনে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভয় দেখানোর জন্য পুলিশের সামনেই বোমা ছোড়ে। বোমা দুটি অবশ্য ফাটেনি।”
শুভজিবাবু অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘নিউ কদমতলায় পার্টি অফিসের সামনে একটি বোমা ছোড়া হয়। এখন মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। আমাকে বদনাম করার এই চেষ্টা দলীয় নেতৃত্বকে সব জানাব।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সাবির সাহা চৌধুরী শুভজিৎবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের সংগঠনের কেউ বোমাবাজির সঙ্গে যুক্ত নয়।”
এদিন সকাল থেকেই দুই পক্ষ দুই জায়গায় জমায়েত করে। অভিজিৎবাবু তাঁর সমর্থকদের নিয়ে স্টেশন মোড়ের পার্টি অফিসে বসেন। সেখান থেকেই তাঁদের সমর্থক ছাত্রছাত্রীদের বাসে করে কলেজে ভোট দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। শুভজিৎবাবুর সমর্থকরা জড়ো হন রাজমাতা দিঘির পাড়ে। অভিযোগ, সকাল ১০ টা নাগাদ দুই জন বাইকে চেপে এসে স্টেশন মোড়ের পার্টি অফিস লক্ষ করে বোমা ছোড়ে। বেলা ১২ টা নাগাদ ভোটের সময় শেষ হওয়ার পরে কলেজের সামনে ফের বাইকে চেপে দুই জন ২টি বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। পুলিশ বাইকের পিছনে তাড়া করে রাজমাতা দিঘির সামনে পৌঁছায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে সেখানে জমায়েত থাকা টিএমসিপি সমর্থকদের তাড়া করা হয়। অভিযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট ছোড়ে টিএমসিপির একাংশ কর্মী। সে সময়ও একটি বোমা ছোড়া হয়। পুলিশ কাঁদানো গ্যাসের সেল ফাটায়। সেখান থেকে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। কলেজের সামনে থেকে আরও ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। খাগরাবাড়ি এলাকা থেকে আরও একটি বোমা উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy