Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডাইনি অপবাদে মহিলাকে পিটিয়ে খুন কালিয়াগঞ্জে

ডাইনি অপবাদে এক মহিলাকে তাঁরই কয়েক জন প্রতিবেশী পিটিয়ে খুন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই মহিলার নাম পার্বতী পাহান (৪২)। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার বালাবন্ত আদিবাসীপাড়া এলাকায় তাঁর বাড়ি থেকে দেড়শো মিটার দূরে পার্বতীদেবীর দেহ উদ্ধার করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৪
Share: Save:

ডাইনি অপবাদে এক মহিলাকে তাঁরই কয়েক জন প্রতিবেশী পিটিয়ে খুন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই মহিলার নাম পার্বতী পাহান (৪২)। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার বালাবন্ত আদিবাসীপাড়া এলাকায় তাঁর বাড়ি থেকে দেড়শো মিটার দূরে পার্বতীদেবীর দেহ উদ্ধার করা হয়। দেহের পাশেই পড়েছিল কয়েকটি ইটের টুকরো, বাঁশ, লাঠি ও ঝাঁটা। পুলিশের দাবি, সেগুলি দিয়েই পার্বতীদেবীকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। পার্বতীদেবীর স্বামী নরেশ পাহানের অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিন বিকেলে ওই পাড়া থেকে ৩১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতেরা সকলেই মহিলা। প্রত্যেকেই মৃতার প্রতিবেশী ও আত্মীয় বলে জানা গিয়েছে প্রাথমিক তদন্তে।

পুলিশ সূত্রের দাবি, ধৃতেরা নিজেরাই পুলিশের কাছে গিয়ে পার্বতীদেবীকে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে জানা গিয়েছে, ডাইনি সন্দেহেই ওই মহিলাকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে।” মৃতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃতদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। আট ও নয়ের দশকেও ডাইনি অপবাদে মালদহ ও তার আশপাশ অঞ্চলের কিছু মহিলাকেও এ ভাবে খুনের অভিযোগ উঠেছিল।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, নিজের তিন বিঘা জমিতে চাষা-আবাদ করে সংসার চালান পার্বতীদেবীর স্বামী নরেশবাবু। তার আগে ভ্যানরিকশাও চালাতেন তিনি। তাঁদের দুই মেয়ে। দু’জনেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট ছেলে কালিয়াগঞ্জ কলেজে স্নাতক স্তরে কলা বিভাগে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রায় এক বছর আগে পার্বতীদেবীর কয়েক জন প্রতিবেশী অসুস্থ হন। তখন থেকেই এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা পার্বতীদেবীকে ডাইনি বলে সন্দেহ করতে শুরু করেন।

সেই সময় থেকেই গত এক বছর ধরে ডাইনি অপবাদে পার্বতীদেবীকে প্রতিবেশীদের একাংশের নানা গঞ্জনা ও কটাক্ষ সহ্য করতে হয়েছে বলে অভিযোগ। গত মঙ্গলবার প্রতিবেশী সুনীল পাহান বাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছু পরে মারাও যান। তিনি সম্পর্কে নরেশবাবুর খুড়তুতো ভাই ছিলেন। এই ঘটনার পরেই পার্বতীদেবীকে ফের ডাইনি বলে অপবাদ দেন তাঁর আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের কয়েক জন। পার্বতীদেবী তখন বারবার এই অপবাদের বিরোধিতা করলেও প্রতিবেশীরা তাতে কর্ণপাত করেননি।

কালিয়াগঞ্জ শহর থেকে ৫ কিলোমিটার মতো দূরের এই গ্রাম শিক্ষাগত ভাবে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। স্থানীয় আদিবাসীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ২০ শতাংশ। এলাকায় একটিই স্কুল আছে। তবে গ্রামে অবশ্য বিদ্যুৎ এসে পৌঁছেছে বছর বারো আগেই। রাস্তাঘাটও পাকা হয়েছে।

এ দিন সকালে পার্বতীদেবী স্থানীয় একটি সোনার দোকানে পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেখান থেকে ফেরার সময়ে বাড়ির অদূরে তাঁর ওই প্রতিবেশীরা তাঁকে ধরে জানগুরু ও ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি যেতে না চাইলে অভিযুক্তরা তাঁকে বেধড়ক মারধরও করেন বলে অভিযোগ। তাঁকে মারতে মারতে আদিবাসীদের একটি ধর্মীয় বেদির কাছে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মার খেয়ে তিনি রাস্তার ধারে পড়ে যান। তার কিছু ক্ষণ পর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। বেগতিক বুঝে অভিযুক্তরা পালিয়ে যান।

ঘটনার খবর পেয়ে নরেশবাবু ও তাঁদের ছেলে সজলবাবু আতঙ্কে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। পুলিশ গিয়ে তাঁদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। নরেশবাবুর বক্তব্য, “বিনা দোষে আমার স্ত্রীকে যারা পিটিয়ে খুন করল, পুলিশের কাছে তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

witch raiganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE