Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ডাকযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেন বধূ

থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে গ্রেফতার হতে পারেন। এই আশঙ্কায় ডাকযোগেই মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ভালুকা ফাঁড়ির প্রাক্তন ওসির বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করলন পুলিশকে চটিপেটায় অভিযুক্ত বধূ। ওই ফাঁড়িতে গেলে ওসি তাঁকে কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ করে ওই বধূ তাঁকে জুতোপেটা করেন। তার জেরেই পুলিশ ওই বধূ-সহ ১৩ জনের নামে মামলা রুজু করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৭
Share: Save:

থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে গ্রেফতার হতে পারেন। এই আশঙ্কায় ডাকযোগেই মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ভালুকা ফাঁড়ির প্রাক্তন ওসির বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করলন পুলিশকে চটিপেটায় অভিযুক্ত বধূ। ওই ফাঁড়িতে গেলে ওসি তাঁকে কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ করে ওই বধূ তাঁকে জুতোপেটা করেন। তার জেরেই পুলিশ ওই বধূ-সহ ১৩ জনের নামে মামলা রুজু করে।

সোমবার ওই বধূ গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দাকে নিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির মালদহ শাখায় যোগাযোগ করেন। এর পরে আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে ডাক মারফত্‌ ভালুকা ফাঁড়িতে প্রাক্তন ওসি সনত্‌ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগপত্র পাঠান। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে ওই বধূ বলেন, “ওই অফিসার আমাকে কুপ্রস্তাব দেন। গ্রামের বাসিন্দারা দল বেঁধে থানায় গিয়ে কেন কুপ্রস্তাব দেওয়া হল তা জানতে চাইলে উনি অস্বীকার করেন। তখন আমি উত্তেজিত হয়ে চটি খুলে ওঁকে মারি।” এই ঘটনায় ওই বধূ সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। সকলেই ঘরছাড়া।

গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির মালদহ জেলা সম্পাদক জিষ্ণু রায়চৌধুরী বলেন, “একজন মহিলা কতটা অপমানিত হলে এমন কান্ড ঘটাতে পারেন সেটা বুঝতে হবে। পুলিশ এই বধূ সহ গ্রামের বেশ কয়েকজনকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ। আমরা তাদের পাশে রয়েছি। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না করলে আমরা আদালতে যাব।”

ভালুকা ফাঁড়ির প্রাক্তন ওসি সনত্‌ বিশ্বাস ওই বধূকে কুপ্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত ওসিকে রাতেই ওই ফাঁড়ি থেকে সরিয়ে কালিয়াচকে পাঠানো হয়। সেখানে আইসির অধীনে কাজ করবেন এসআই সনত্‌বাবু। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বধূ সহ ১৩ জন গ্রামবাসীর নামে পুলিশ একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ৩৫৩, ১৮৬, ৩৫২, ৫০৬ এবং ৪৪৭ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মহিলার তরফের অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশকে মারধর করারও অভিযোগ হয়েছে। দুটি ঘটনারই তদন্ত চলছে।”

এদিকে পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন ভালুকার বাসিন্দারা। ঘটনার তিনদিন পর সোমবারও এলাকায় ছিল কার্যত অঘোষিত বনধ। পথঘাট ছিল সুনসান। রাতে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন বাসিন্দারা। ওসিকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত বধূও বাড়িতে তালা দিয়ে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র।

অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সুদীপ্ত চৌধুরী। তিনি এ দিন বলেন, মহিলাকে কেউ প্ররোচনা দেয়নি। অথচ পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে চাইছে। পুলিশের ভয়ে গ্রামে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অনেকে পালিয়েছেন। পুলিশ নিরীহ কাউকে গ্রেফতার করলে আমরাও চুপ করে থাকব না।”

ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার এসআই কাজল চট্টোপাধ্যায়। জেলা পুলিশ সুপারকে রিপোর্ট দেওয়ার কথা চাঁচলের এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আর্চাযের। তিনি বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। সব খতিয়ে দেখেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE