Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঢোল বাজিয়ে প্রচারে সৌমিত্র

কলকাতার ব্যস্ত জীবন থেকে গ্রামের সবুজের মধ্যে একটু নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নিতে মাঝেমধ্যেই হরিশ্চন্দ্রপুরে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। সপ্তাহ দু’য়েক আগেও এসেছিলেন। তাঁর সেই আসা ছিল একেবারেই একান্ত। মঙ্গলবার দিনও পৌঁছলেন।

ঢোল বাজিয়ে নিজের গ্রামের পথে সৌমিত্র রায়। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

ঢোল বাজিয়ে নিজের গ্রামের পথে সৌমিত্র রায়। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বাপি মজুমদার
চাঁচল শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০২:৩৯
Share: Save:

কলকাতার ব্যস্ত জীবন থেকে গ্রামের সবুজের মধ্যে একটু নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নিতে মাঝেমধ্যেই হরিশ্চন্দ্রপুরে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। সপ্তাহ দু’য়েক আগেও এসেছিলেন। তাঁর সেই আসা ছিল একেবারেই একান্ত। মঙ্গলবার দিনও পৌঁছলেন। তবে এ বার বাংলা ব্যান্ড ‘ভূমি’-খ্যাত সৌমিত্র রায় নিজের গ্রামে ঢুকলেন নিজেই ঢোল বাজিয়ে। এক কিলোমিটার রাস্তা ঢোল বাজাতে বাজাতে বাড়িতে ঢুকে প্রণাম করলেন পারিবারিক রামকানাইয়ের মন্দিরে। প্রণাম করলেন জ্যাঠামশাই অরুণবাবুকে। তার পর বাড়ির চাতালের মেঝেতে বসে গেয়ে উঠলেন, ‘ধীরে চল রে মাঝি ভাই, আর তো তাড়া নাই....! আর এ ভাবেই বাড়ি ফিরে গানের মধ্যে দিয়েই প্রচার শুরু করলেন উত্তর মালদহের তৃণমূল প্রার্থী তথা বাংলা ব্যান্ডের নামী গায়ক সৌমিত্র রায়।

প্রার্থী হওয়ার পর এ দিনই প্রথম মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে নিজের বাড়িতে ফিরলেন তিনি। এ দিন তিনি আসছেন জেনে সকাল থেকেই হরিশ্চন্দ্রপুরে ছিল খুশির সঙ্গে উত্তেজনাও। তৃণমূল নেতা-সমর্থকেরা তো বটেই, হাজির ছিলেন এলাকার সাধারণ বাসিন্দারাও। নামী গায়ক তথা ভূমিপুত্রকে নতুন রূপে বরণ করতে তাসা পার্টিরও ব্যবস্থা করেছিল দল। সকাল সাড়ে ১১টায় হরিশ্চন্দ্রপুরে ঢোকার আগেই নিজের বিলাসবহুল গাড়ি ছেড়ে নামতে হল তাঁকে। ততক্ষণে তাসা পার্টি বাজনায় বোল ধরেছে, ‘তোমার দেখা নাই রে...!’ গাড়ি থেকে নেমেই তাসা পার্টির একজনের কাছ থেকে ঢোল নিয়ে নিজের গলায় ঝুলিয়ে নিলেন। তার পর তৃণমূলের পার্টি অফিসে ঢোকার আগে পর্যন্ত ঢোল বাজিয়ে গেলেন। সৌমিত্রবাবু বললেন, “নিজের গ্রামে কোনওদিন ঢোল বাজিয়ে ঢুকব স্বপ্নেও ভাবিনি। গাড়ি থেকে নেমেই মনে হল, আরে এটা তো আমার বাজানোর কথা। তাই আর দেরি করিনি। একজনের কাছ থেকে ঢোল নিয়ে বাজাতে শুরু করলাম।”

এ বার গ্রামে ফেরার সঙ্গে অন্যবার আসার পার্থক্য কোথায়? সৌমিত্র বললেন, “হরিশ্চন্দ্রপুরের দিকে যত এগিয়েছি ততই হৃত্‌স্পন্দন বেড়েছে। অন্য বার এমন হয় না। আমি মাঝেমধ্যেই বাড়িতে আসি। প্রকৃতির মাঝে, সবুজের মাঝে একটু বিশ্রাম নিতে। এ বার ফিরে এলাম মানুষের মাঝে।” রাস্তা দিয়ে ঢোল বাজিয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় দলীয় কর্মীরা তাঁকে নিয়ে যান পার্টি অফিসে। সেখানে গলায় মালা পরে রসিকতাও করেন সৌমিত্রবাবু। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “নিজের গ্রামে কখনও তৃণমূলের অফিসে এভাবে মালা পরে বসতে হবে ভাবিনি।” সেখান থেকে বেরিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়িতে ঢুকে সোজা যান রামকানাইয়ের মন্দিরে। প্রণাম সেরে পুরোহিতের দেওয়া চরণামৃত নিয়ে জ্যাঠামশাইকে প্রণাম করেন। জ্যাঠামশাই অরুণবাবু বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, “গানের জগতের মতো রাজনীতির জগতেও সফল হও। রামকানাইয়ের কাছে এটাই প্রার্থনা করি।” সৌমিত্রবাবু বলেন, “রামকানাইয়ের আশীর্বাদ ছাড়া আমাদের পরিবারের কেউ কোনও কাজ শুরু করি না। তাই এ বার আর কোনও তাড়া নেই। রামকানাইয়ের আশীর্বাদে অনায়াসে ভোটযুদ্ধ সামলে নেব।”

এর পরে বসলেন বাড়ির বারান্দার চাতালে। তখন যেন অনেকটা নিশ্চিন্ত। সেখানে বসেই গেয়ে উঠলেন, “ধীরে চল রে মাঝি ভাই...!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE