Advertisement
E-Paper

দিনভর নৌকায় ভেসে ব্যতিক্রমী বর্ষবরণ

তারস্বরে মাইক বাজিয়ে নাচ নয়। শান্ত নদী পাড়ে বসে কলাপাতায় গরম ভাত। সঙ্গে নদীয়ালি মাছের ঝোল। আলু-ফুলকপি, মটর-পনির। এলাকার শান্তিভঙ্গ করে দলবেঁধে চেঁচামেচি করে দাপাদাপি নয়। বরং দিনভর হইহইয়ের ফাঁকে নৌকায় ভেসে বেড়ানো।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৪
ময়নাগুড়ির পানবাড়িতে নৌকাবিহার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

ময়নাগুড়ির পানবাড়িতে নৌকাবিহার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

তারস্বরে মাইক বাজিয়ে নাচ নয়। শান্ত নদী পাড়ে বসে কলাপাতায় গরম ভাত। সঙ্গে নদীয়ালি মাছের ঝোল। আলু-ফুলকপি, মটর-পনির।

এলাকার শান্তিভঙ্গ করে দলবেঁধে চেঁচামেচি করে দাপাদাপি নয়। বরং দিনভর হইহইয়ের ফাঁকে নৌকায় ভেসে বেড়ানো।

বছরের প্রথম দিনে খানিকটা ব্যতিক্রমী ঢঙেই চড়ুইভাতিতে মাতলেন জলপাইগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই। ছিল, লোকসঙ্গীতের আয়োজনও। ইংরেজি নতুন বছরের শুরুতে বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ির তিস্তায় তো ছিলই, এ বার লাগোয়া ময়নাগুড়ির পানবাড়ি লাগোয়া জলঢাকা, মূর্তি ও ডায়না নদী সঙ্গমেও আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকাবিহার-এর ব্যবস্থা হয়েছে।

তবে বর্ষবরণের আয়োজনে ছিল না শব্দাসুরের তাণ্ডব। মাঝিদের অনুরোধ মেনে পর্যটকরা পরিযায়ী পাখিদের সমস্যা হয় এমন কিছু করার চেষ্টা করেনি। পাখির ঝাক দেখে কচিকাঁচারা হইচই করলে উল্টে তাদের চুপ করে রাখার চেষ্টা করেছেন। পর্যটকেরা বলেছেন, “তারস্বরে মাইক না বাজিয়েও যে উত্‌সব হয়, বছরের প্রথম দিন পানবাড়িতে তা স্পষ্ট হল।”

মরশুমের প্রথম দিন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটক তো বটেই গত বছর গরুমারা জঙ্গলে বেড়াতে এসে কলকাতার যে পর্যটকেরা নৌকাবিহার করেন, তাঁদের কয়েকটি দলকেও এ দিন দেখা গিয়েছে। নদীর পাড়ে কদম জঙ্গলে পৌঁছে নদীয়ালি মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়ানোর অনুরোধ রাখেন। খুশি হয়ে মাঝিরা জলঢাকা নদীর বোরোলি মাছ ধরে কলাপাতায় খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। আয়োজকদের পক্ষে পরিমল মণ্ডল জানান, গত সোমবার থেকে পর্যটকরা ফোনে বছরের প্রথম দিন নৌকা নিয়ে পরিযায়ী পাখি দেখার জন্য তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে নদীর ঘাটে পৌঁছতে শুরু করেন তাঁরা। লাটাগুড়ির বিভিন্ন রিসর্ট থেকে বাটানগর, রিষড়া ও বিরাটির তিনটি দল সকাল সাড়ে নটা নাগাদ পৌঁছে যায়। বেলা বাড়তে উত্‌সবের আনন্দে মেতে ওঠে গোটা এলাকা। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে নৌকাবিহারে অভিনব বর্ষবরণ।

শিলিগুড়ির প্রধাননগরের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী অলোক দত্ত ক্যামেরাবন্দি করলেন নদীর চরে হেলেদুলে ঘুরে বেড়ানো পাখিদের। দূরবীনে চোখ রেখে আত্মহারা মেখলিগঞ্জের কলেজ ছাত্রী তমালিকা সেন। পর্যটকদের তৃপ্তি দেখে খুশি উপেন রায়, জিতেন রায়, পরিমল রায়, শ্যামল সরকারের মতো মাঝিরা।

রোজগারের ব্যবস্থা করতে গত বছর মাঝিরা নিজেদের উদ্যোগেই ওই নৌকাবিহার শুরু করেন। ক্রমশ ভিড় বেড়ে চলে। সাহায্যের হাত বাড়ায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি। মাঝি উপেন রায় বলেন, “১৩ জনের দল করে নদীতে বেড়ানোর ব্যবস্থা করি। শুরুতে ভয় ছিল। কিন্তু ভিড় বাড়তে দিনে মাথাপিছু পাঁচশো টাকা রোজগারের সমস্যা হয়নি।” পর্যটকদের অনেকে মাথাপিছু ৫০ টাকা দিয়ে তিন ঘণ্টা নৌকায় ভেসেছেন। নৌকাবিহার এবং নদীয়ালি মাছের ঝোল দিয়ে কলাপাতায় ভাত খেতে দিতে হবে ৩০০ টাকা।

এমন আয়োজন দেখে পর্যটকদের অনেকে এ দিন সামান্য হলেও দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। মাঝি শ্যামল সরকার বলেন, শিলিগুড়ির একটি দল দিনভর ঘুরে ভাত খেয়ে এত খুশি হয়েছেন যে, ওঁরা সাড়ে তিনশো থেকে চারশো টাকা প্যাকেজ করার জন্য পরামর্শ দেন।

new year celebration biswajyoti bhattacharya jalpaiguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy