Advertisement
E-Paper

দাঁড়িয়ে থেকে আবাসিকের বিয়ে দিচ্ছেন হোম কর্তৃপক্ষ

রাত পোহালেই বিয়ে। পাত্রী বিকি ছেত্রী। আবাস জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন দেবনগরের আশ্রয় শর্ট স্টে হোম। রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে পাত্র খুঁজে, হচ্ছে বই। হোমের তরফে কার্ড ছাপিয়ে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে দেড়শো জনকে। উত্‌সবের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। বিয়ে আগামীকাল, সোমবার। পাত্র জলপাইগুড়ি মোহিতনগরের বাসিন্দা বরুণ সরকার। পেশায় কোতোয়ালি থানার জিপচালক।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৬
আবাসিকদের সঙ্গে বিকি (ডান দিক থেকে তৃতীয়)। ছবি: সন্দীপ পাল।

আবাসিকদের সঙ্গে বিকি (ডান দিক থেকে তৃতীয়)। ছবি: সন্দীপ পাল।

রাত পোহালেই বিয়ে।

পাত্রী বিকি ছেত্রী। আবাস জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন দেবনগরের আশ্রয় শর্ট স্টে হোম।

রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে পাত্র খুঁজে, হচ্ছে বই। হোমের তরফে কার্ড ছাপিয়ে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে দেড়শো জনকে। উত্‌সবের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। বিয়ে আগামীকাল, সোমবার। পাত্র জলপাইগুড়ি মোহিতনগরের বাসিন্দা বরুণ সরকার। পেশায় কোতোয়ালি থানার জিপচালক।

হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিম্পংয়ের মেয়ে বিকি ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারান। পরিচিত এক দম্পতির বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে পরিচারিকার কাজ করতেন। বছর কুড়ির মেয়েটি বলেন, “হঠাত্‌ কী হল জানি না, গত বছর আচমকা আমায় চোর অপবাদ দিয়ে মারধর করেন বাড়ির মালিক। ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাই।” পাহাড় থেকে শিলিগুড়িতে নেমে দিশেহারা হয়ে পড়েন। তারপরে অচেনা রাস্তা ধরে পৌঁছে যান ভক্তিনগরে। সেখানে থাকার জায়গা খুঁজতে গিয়ে ঢুকে পড়েন থানায়। পুলিশ তাঁকে সে দিনের মতো থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। পরের দিন পাঠিয়ে দেয় আশ্রয় হোমে। সেই থেকে শুরু হয় নতুন জীবন।

হোম সুপার দীপ্তি ঘোষ বলেন, “কয়েক দিন কাউন্সেলিং করার পরে মেয়েটি জানায়, তার আত্মীয় বলতে কেউ নেই। আমরা জানতে চাই, সে বিয়ে করতে চায় কি না? জানায়, ভাল পাত্র পেলে করবে। বিকির সম্মতি নিয়ে সহৃদয় পাত্রের খোঁজ শুরু হয়। ২১ জানুয়ারি খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বিভিন্ন পেশার পাত্ররা যোগাযোগ শুরু করে। হোম সুপার বলেন, “আমরা শহরের আশপাশে পাত্র চেয়েছিলাম। বরুণ যোগাযোগ করতে সেই সমস্যা মিটে যায়।”

মোহিতনগরের নিরঞ্জন সরকার এবং সন্ধ্যারাণি সরকারের একমাত্র ছেলে বরুণ। চার বোনের বিয়ে হয়েছে। বরুণ বলেন, “ছোট থেকে জেদ ছিল পণ নেব না। দেবও না। বোনদের সেভাবেই বিয়ে দিয়েছি। আমি বিকির মতো মেয়েকেই খুঁজছিলাম।”

বিকিকে বরুণ পছন্দ করার পরে হোমে এসে তাকে দেখে যান তার বাবা-মা। হবু বৌমার নম্র স্বভাব দেখে তাঁরা খুশি। এ দিকে হোমের তরফেও বরুণ সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নেওয়া হয়। দিন ঠিক হয়ে যায় বিয়ের।

বিয়ের প্রস্তুতিতে হোম চত্বর জুড়ে এখন উত্‌সবের আবহ। জামাই বরণের প্রস্তুতি চলছে। প্যান্ডেল ও গেট তৈরির কাজ চলছে। বলা হয়েছে ব্যান্ডপার্টিকেও। মন্ত্রোচ্চারণের জন্য থাকবেন পুরোহিতও। খাবারের মেনুতে রাখা হয়েছে ভাত, ডাল, বেগুনি, মাছ, মাংস, মিষ্টি। সাহায্য করেছেন অনেকেই। দেড়শো বিয়ের কার্ড ছেপে বিলি করা হয়েছে।

ঘুম নেই পাত্র পক্ষেরও। দিনভর থানার কাজে ব্যস্ত থাকার ফাঁকে বিয়ের কেনাকাটা সারছেন বরুণ। প্রায় দু’শোজনকে নিমন্ত্রণ করেছেন তিনি।

এমন বিয়ের খবরে খুশি পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “এই উদ্যোগ সমাজ জীবনে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।” জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “অভিনব ঘটনা। বরুণ-বিকির বিয়েতে থাকব।” জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের প্রোজেক্ট অফিসার বিজয় রায় বলেন, “এখনও যে মানবিকতা হারিয়ে যায়নি, আশ্রয় হোমের বিয়ে তাঁর নিদর্শন। আমাদের দফতরের অফিসাররা বিয়েতে থাকবেন।”

খুশি বিকিও। কেমন লাগছে প্রশ্ন করতেই তাঁর সলজ্জ উত্তর, “কী বলব ভেবে পাচ্ছি না।”

biswajyoti bhattacharya jalpaiguri marriage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy