একাধিকবার হুমকির মুখেও ধর্ষণের মামলা প্রত্যাহার করতে চাননি দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। তার জেরেই তাঁকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল।
অভিযোগ, ধর্ষণের মামলায় মূল অভিযুক্ত, এক পরিচিতের মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে ছাত্রীটিকে একটি সুনসান রাস্তায় নিয়ে যায়। সেখানে ওই তিন যুবক সেই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করে ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে খুনের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। শ্বাসরোধ হয়ে যাওয়ায় ছাত্রীটি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। তখন তাঁকে মৃত ভেবে ওই যুবকেরা পালিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ থানার কাশিমপুর বাঁধরোড এলাকায়। ওই দিন রাত ১১টা নাগাদ ওই তরুণী হেমতাবাদ থানায় গিয়ে ওই কিশোর সহ তার দুই সঙ্গীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সদ্য তরুণী ওই ছাত্রীর বাড়ি হেমতাবাদ সংলগ্ন রায়গঞ্জ থানার বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়লাডাঙ্গি এলাকায়। তিনি স্থানীয় একটি হাইমাদ্রাসায় দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন। অভিযুক্তদের নাম মোদাস্সর মহম্মদ, দুলাল হোসেন ও কুরবান আলি। দক্ষিণ হেমতাবাদ এলাকার বাসিন্দা নাবালক মোদাস্সর স্থানীয় একটি হাইস্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। দুলাল ও কুরবানের বাড়ি হেমতাবাদের ঠুকঠুকিমোড় এলাকায়। ওই তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, শুক্রবার সকালে পুলিশ অভিযুক্ত মোদাস্সর ও তার মা হাসিনা বিবিকে গাড়িতে চাপিয়ে হেমতাবাদ থানায় নিয়ে আসে। কিন্তু হাসিনা বিবি থানায় গিয়ে ছেলে নির্দোষ বলে দাবি করেন। তিনি জানান, ঘটনা যে সময়ে ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে সে সময়ে তাঁর ছেলে এক শিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়েছিল বলেও দাবি করেন। এরপর হাসিনা বিবি ওই তরুণীর বিরুদ্ধে তাঁর ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ দায়ের করবেন বলে পুলিশের সামনে থেকেই ছেলেকে নিয়ে চলে যান। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি। কিন্তু পুলিশ এই ঘটনা অস্বীকার করে জানিয়েছে, মোদাস্সর পলাতক। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, “ওই তরুণীকে খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত তিন জন পালিয়ে গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। অভিযুক্তদের থানায় নিয়ে এসে গ্রেফতার না করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই তরুণী ও অভিযুক্তদের পরিবারের লোকজন সকলেই দিনমজুরির কাজ করেন। অনেকে সেই কাজে ভিন রাজ্যেও যান। গত ২০ অগস্ট ওই তরুণী হেমতাবাদের কান্তোর ঠুকঠুকিবাড়ি এলাকায় দূর সম্পর্কের এক দিদির বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। মোদাস্সরও ওই অনুষ্ঠানে যায়। সেই সময় মোদাস্সরের সঙ্গে ওই তরুণীর আলাপ হয়। অভিযোগ, ওই দিন রাতে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মোদাস্সর ওই তরুণীকে স্থানীয় একটি তেজপাতা বাগানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। পরদিন ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে মোদাস্সরকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সে নাবালক হওয়ায় আদালত তাকে হোমে পাঠায়। কয়েকদিন পরে তার জামিন হয়ে যায়।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত দুলাল ওই তরুণীর দাদার বন্ধু। ওই তরুণীর দাবি, বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি ব্যক্তিগত কাজে রায়গঞ্জে যান। ফেরার পথে দুলাল তাঁকে ফোন করে জরুরি দরকারে হেমতাবাদের ঠাকুরবাড়ি এলাকায় দেখা করতে বলেন। ঠাকুরবাড়ি হয়েই বিন্দোলে বিভিন্ন যাত্রীবাহী গাড়ি যাতায়াত করে। ওই তরুণী রায়গঞ্জ থেকে একটি ট্রেকারে উঠে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ঠাকুরবাড়ি এলাকায় যান। ওই তরুণীর অভিযোগ, ঠাকুরবাড়িতে নামার পর দুলাল তাঁকে মোটরবাইকে চাপিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের কাশিমপুর বাঁধরোড এলাকার একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই মোদাস্সর ও কুরবান দাঁড়িয়ে ছিল। ওই তরুণীকে দেখা মাত্রই মোদাস্সর তাঁকে ধর্ষণের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
কিন্তু তিনি সেই মামলা তুলবেন না বলে জানিয়ে দেওয়ায় এরপর মোদাস্সর, কুরবান ও দুলাল তাঁকে চেপে ধরে শ্লীলতাহানি করার পর গলায় ওড়না জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপরেই তিনি জ্ঞান হারান। ওই তরুণীর দাবি, জ্ঞান ফেরার পর তিনি বুঝতে পারেন তিনি একটি জঙ্গলে পড়ে রয়েছেন। এরপরেই সেখান থেকে হেঁটে রাত ১১টা নাগাদ হেমতাবাদ থানায় গিয়ে তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিন সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করলে বাসিন্দাদের একাংশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে প্রায় আধ ঘন্টা পুলিশকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। পরে পুলিশ অভিযুক্ত মোদাস্সরের বাড়িতে গেলে বাসিন্দারা দাবি করেন, মোদাস্সর সহ তার দুই সঙ্গীকে ওই তরুণী মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy