Advertisement
E-Paper

নদী চুরি করে তেজপাতা চাষ

দাবদাহে সেচের অভাবে যখন ফসলের মাঠ পুড়ছে, তখন অভিযোগ উঠল নদী ‘চুরি’র। অভিযোগ শুধু মাটি ফেলে নদীখাত ভরাট করা নয়, কংক্রিটের খুঁটি পুঁতে এলাকা ঘিরে চলছে তেজ পাতা বাগান তৈরির কাজ। ময়নাগুড়ির ধরলা নদী এ ভাবে লোপাট হলেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪৪
কংক্রিটের খুঁটিতে নদী দখল। ধরলা নদীতে তেজপাতা বাগান তৈরির কাজ চলছে। দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।

কংক্রিটের খুঁটিতে নদী দখল। ধরলা নদীতে তেজপাতা বাগান তৈরির কাজ চলছে। দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।

দাবদাহে সেচের অভাবে যখন ফসলের মাঠ পুড়ছে, তখন অভিযোগ উঠল নদী ‘চুরি’র। অভিযোগ শুধু মাটি ফেলে নদীখাত ভরাট করা নয়, কংক্রিটের খুঁটি পুঁতে এলাকা ঘিরে চলছে তেজ পাতা বাগান তৈরির কাজ। ময়নাগুড়ির ধরলা নদী এ ভাবে লোপাট হলেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, আগামী বর্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা বিপন্ন হতে পারে। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়েই ওই নদী দখলের ছবির দেখা মিলছে বলে অভিযোগ। নদী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক বছর থেকে চাষিদের একাংশ নদীতে বাঁধ দিয়ে বোরো ধান চাষ শুরু করেন। এর পরে ধীরে ধীরে মাটি ফেলে নদী খাত ভরাট করে এলাকা দখল শুরু হয়। ময়নাগুড়ি রোড বাজারের কাছে জাতীয় সড়কের ধরলা সেতু সংলগ্ন এলাকায় এখন চলছে মাটি ফেলে, কংক্রিটের খুঁটি পুঁতে নদী এলাকা দখল। তাতে তেজপাতা বাগান তৈরি চলছে। ইতিমধ্যে একটি বাগানে গাছের চারা বোনা হয়েছে। দক্ষিণ মৌয়ামারি ও উল্লাডাবরি লাগোয়া কিছু এলাকায় একই ভাবে নদী ভরাট করে চা বাগান, ঘরবাড়ি তৈরির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ। চাষিদের অভিযোগ, বার্নিশ গ্রাম পঞ্চায়েতের উল্লাডাবরির রেল সেতু থেকে পদমতি-১ পঞ্চায়েতের বালাসন পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ওই পরিস্থিতির জন্য নদী নালার চেহারা নিয়েছে। এর ফলে এক দিকে যেমন প্রায় ১৫ হাজার মস্যজীবী বিপন্ন হয়ে পেশা পাল্টে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্য দিকে, প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল সেচের জল না পেয়ে ধুঁকছে। অথচ দেড় দশক আগেও ঠিক উল্টো ছবি ছিল। বছরভর নদীতে নৌকা ভাসিয়ে মাছ ধরতে দেখা যেত বাসিন্দাদের। সারা ভারত মৎস্যজীবী ও মৎস্য শ্রমিক ফেডারেশন জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক শিবেন পৈত জানান, ময়নাগুড়ি শহর সহ আশপাশের বিভিন্ন বাজারে নদীয়ালি মাছের বড় অংশ ধরলা থেকে আসত। এখন আর তা নেই।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকে যে ৫৬টি নদী থেকে সেচের জল উত্তোলন প্রকল্প বসানো হয় তার ১২টি রয়েছে ধরলায়। কিন্তু উল্লাডাবরি ও সংলগ্ন এলাকায় নদীর উপরি অংশে মাটি ফেলে ভরাট করে দখল শুরু হতে নিচের অংশ শুকিয়ে যায়। ফলে আরএলআই প্রকল্পগুলি অকেজো হয়ে সেচের জল সরবরাহ বন্ধ। কৃষক সভার জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সদস্য নির্মল চৌধুরী বলেন, “দীর্ঘদিন থেকে ধরলা নদী দখলের প্রতিবাদ করছি। অনেক চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কেউ শুনছে না। নদীতে জল না থাকায় এখন পরিস্থিতি এমন যে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে সেচের জল মিলছে না।” গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কমল দাস জানান, শহরের বড় অংশের নিকাশি ধরলা নির্ভরশীল। নদী দখল মুক্ত না হলে বর্ষায় শহর জলমগ্ন হবে।

ময়নাগুড়ি ব্লকের যুগ্ম বিডিও সমর রায় বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুভাষ বসু বলেন, “খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরে রিপোর্ট পাঠাব।” প্রশাসনের কর্তাদের এ মনোভাবে ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এমন চললে নদীর বাকি অংশও দখল হয়ে যাবে।

moynaguri dhorola bay leaf
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy