Advertisement
২৩ মে ২০২৪

পুকুরে ছাত্রের দেহ, অগ্নিগর্ভ চোপড়ার স্কুল

তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে বুধবার সকালে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া থানার কালাগছ এলাকা। ওই এলাকার একটি আবাসিক মিশনারি স্কুলের পুকুরে এই দিন সকালে ভেসে ওঠে নির্মল রায় (৯) নামে ওই ছাত্রের দেহ। তার বাড়ি চোপড়ার দেবীঝোরা এলাকায়।

ভাঙচুর হওয়া স্কুলের ঘর।

ভাঙচুর হওয়া স্কুলের ঘর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইসলামপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০১:৫৯
Share: Save:

তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে বুধবার সকালে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া থানার কালাগছ এলাকা।

ওই এলাকার একটি আবাসিক মিশনারি স্কুলের পুকুরে এই দিন সকালে ভেসে ওঠে নির্মল রায় (৯) নামে ওই ছাত্রের দেহ। তার বাড়ি চোপড়ার দেবীঝোরা এলাকায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই ছাত্র নিখোঁজ হয়। এ দিন তার দেহ ভেসে ওঠার পরে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রশ্নে ক্ষোভ দানা বাঁধে। মৃতের বাবা চা শ্রমিক নবেন রায়ের অভিযোগ, তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে। তিনি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। নবেনবাবু বলেন, “ছেলেটা নিখোঁজ হওয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষ তৎপর হতে পারত। তা ছাড়া ছেলের দেহে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। আমাদের দৃঢ় সন্দেহ, ওকে খুন করা হয়েছে।” এর পরে ক্ষিপ্ত জনতা স্কুলে ঢুকে হামলা চালায়। স্কুলের আসবাব, অধ্যক্ষের গাড়ি ভাঙচুর করে জনতা। অধ্যক্ষের ঘরে ও গাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলেও অভিযোগ।

পুলিশও গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়ে। পুলিশের গাড়িতে ঢিল পড়ে। লাঠি চালিয়ে, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েও পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারেনি পুলিশ। পরে রবার বুলেট ছুড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। ইতিমধ্যে দমকলের গাড়ি গিয়ে স্কুলের আগুন নেভায়। দুপুরেই স্কুলে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। ইসলামপুরের এসডিপিও সুবিমল পাল বলেন, “ওই ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। স্কুলে হামলা, আগুন লাগানোর ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে।”

স্কুল ছাড়ছে পড়ুয়ারা।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে চতুর্থ শ্রেণির পর্যন্ত পড়ানো হয়। তবে হস্টেলে ৩৫০ জন পড়ুয়ার থাকার ব্যবস্থা আছে। সেখানে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারাও থাকে। মঙ্গলবার দুপুরে স্কুল শেষে খাওয়ার পর স্কুল চত্বরে পুকুরে মাছ ধরছিল আবাসিক কিছু ছাত্র। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, যে ছাত্ররা সাঁতার জানে, তারা নিজেরা জাল নিয়ে পুকুরে মাছ ধরে থাকে। প্রাথমিক ভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষের ধারণা, মাছ ধরা নিয়ে হুটোপুটির সময়ে সকলের নজর এড়িয়ে নির্মল পুকুরে চলে যায়। সন্ধ্যার মুখে অন্যরা হস্টেলের ঘরে ফেরে। কিন্তু নির্মলের খোঁজ পাওয়া যায়নি। সঙ্গে সঙ্গে স্কুলের পক্ষ থেকে পুলিশ ও নির্মলের বাড়িতে সব জানিয়ে দেওয়া হয়। এদিন সকালে দেহটি ওই পুকুরে ভেসে ওঠে। এর পরে সেখানে উপস্থিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তখনই হস্টেলের ছাত্রদের রান্নাঘরে নিয়ে আটকে রাখেন কর্তৃপক্ষ। পরে পরিস্থিতি ঠিক হলে খুদে পড়ুয়াদের মধ্যে ছাত্রীদের হস্টেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলের অধ্যক্ষা তথা মেয়েদের হস্টেলের ভারপ্রাপ্ত সিস্টার নির্মলা তিরকি জানান, যে পড়ুয়ারা সাঁতার শেখেনি, তাদের পুকুরের ধারে যাওয়া নিষেধ। স্কুলের পক্ষ থেকে বারেবারেই তা আবাসিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়। অধ্যক্ষা বলেন, “নির্মল কোনও ভাবে সকলের নজর এড়িয়ে পুকুরের কাছে চলে গিয়েছিল। সন্ধ্যায় খাবার দেওয়ার সময়ে ওকে না দেখে খোঁজখবর শুরু হয়। যে হেতু নির্মল আগেও হস্টেল থেকে পালিয়ে বাড়িতে চলে গিয়েছিল, তাই আগে সেখানে জানানো হয়। পরে থানাতেও সব জানানো হয়। তার পরে ওর দেহ মেলে। যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।” হামলা, ভাঙচুরের জেরে আপাতত দু’দিনের জন্য স্কুল বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে বলে অধ্যক্ষা জানান।

বুধবার অভিজিৎ পালের তোলা ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

islampur chopra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE