চাঁচল শহরের বেহাল ব্লক রোড। নিজস্ব চিত্র।
মহকুমার বয়স দেড় দশক হতে চললেও পুরসভা হয়নি চাঁচল। ফলে মহকুমা সদর রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। একবার বাম আমলে ও পরে সম্প্রতি তৃণমূল সরকারের তরফেও চাঁচলকে পুরসভা করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তা থমকে রয়েছে ঘোষণাতেই। ফলে মহকুমা সদরের নাগরিক পরিষেবার ভার সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েতকে।
আর পঞ্চায়েতের আওতায় থাকা সদরবাসীও তাই নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে জেরবার। যার অন্যতম শহরের রাস্তাঘাট। গোটা পঞ্চায়েত এলাকাকে বাদ দিয়ে শুধু মহকুমা সদরকে পৃথক গুরুত্ব দেওয়া যে সম্ভব নয়, তা অস্বীকার করেননি পঞ্চায়েত কর্তারা। কিন্তু দু’বার ঘোষণার পরেও কবে চাঁচল পুরসভা বাস্তবায়িত হবে সেই প্রশ্ন উঠেছে। মালদহের জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, “পুরসভা যখন ঘোষণা হয়েছে, নিশ্চয়ই তা হবে। তবে কবে হবে সেটা রাজ্য সরকারের বিষয়। রাজ্য সরকারের নির্দেশ পেলেই প্রশাসনকরতে উদ্যোগী হবে।”
সদরের গুরুত্বপূর্ণ বেহাল রাস্তাগুলির দিকে একবার চোখ ফেরানো যাক। বেহাল রাস্তাগুলির মধ্যে অন্যতম ব্লক প্রশাসনের সামনের রাস্তা, যা ব্লক রোড বলে পরিচিত, সেই রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। প্রদীপের নীচে অন্ধকার বুঝি একেই বলে। ওই রাস্তা থেকে পিচের চাদর উবে গিয়েছে কয়েক বছর আগেই। বর্ষায় হাঁটুজল জমে থাকে রাস্তায়। অন্য সময় ধুলো মেখে যাতায়াত করতে হয়। ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য একাধিকবার পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু রাস্তার হাল ফেরেনি।
একই অবস্থা থানা রোডেরও। থানা পেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার পাকা রাস্তা রয়েছে। কিন্তু বাসস্ট্যান্ড থেকে সদরের মধ্যে দিয়ে ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে গ্রামে যাওয়ার পাকা রাস্তায় উঠতে হয়। একই অবস্থা চাঁচল হাটগামী সুজাগঞ্জ রোডেরও। থাহাঘাটি থেকে জগন্নাথপুর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় পাকা রাস্তা রয়েছে। কিন্তু সদর থেকে থাহাঘাটি পৌঁছতে বাসিন্দাদের নাভিশ্বাস ওঠে।
সিনেমা হল রোড ধরে প্রতিদিন বাংলো থেকে তাঁর দফতরে যাতায়াত করেন মহকুমাশাসক। সেই রাস্তা দেখলে সদরের রাস্তা বলে মনে হয় না। রাস্তা ভেঙেচুরে একাকার। ওই রাস্তায় একটি কালভার্টেরও বেহাল অবস্থা। বেহাল দৈনিক বাজারগামী রাস্তাটিও। ওই রাস্তাটির নাম নেতাজি রোড। নেতাজি রোডকে চাঁচলের প্রাণ বলা হয়। চাঁচলের বাণিজ্যিক এলাকা ওই রাস্তা ঘিরেই গড়ে উঠেছে। অথচ ওই রাস্তা শুধু বেহালই নয়, নোংরা-আবর্জনায় ভর্তি ওই রাস্তা ধরে চলা দায়। বড় রাস্তাগুলির পাশাপাশি ভারতীনগর, বারগাছিয়ায় ডাকবাংলোর পিছনের পাড়া, আদর্শপল্লি, ট্যান্ডেলপাড়া, আমলাপাড়া-সহ একাধিক পাড়ার ভিতরের মাটির রাস্তা আজও পাকা হয়নি।
কিন্তু পুরসভা প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে কী প্রশাসনের কিছু করার নেই?
কেন শহরের রাস্তাঘাট বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে বেহাল হয়ে থাকবে, সেই প্রশ্ন বাসিন্দাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। চাঁচলের মহকুমাশাসক পোন্নমবলম এস স্পষ্টই বলেন, “পুরসভা খুব জরুরি। তা হলেই সমস্যা মিটবে। না হলে পঞ্চায়েতের পক্ষে সদরের রাস্তা তৈরি বা সংস্কার সম্ভব নয়।” চাঁচল পঞ্চায়েতের প্রধান নরেশ দাস বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে থাকলেও চাঁচল এক জনবহুল শহরের চেহারা নিয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষে সেই শহরের নাগরিক পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। পাকা রাস্তা তৈরি তো পঞ্চায়েতের পক্ষে সম্ভব নয়। একমাত্র পুরসভা হলেই তা সম্ভব।”
সিপিএমের চাঁচল জোনাল কমিটির সম্পাদক হামেদুর রহমান মনে করেন, চাঁচলকে পুরসভা হিসেবে গড়ে তোলার কাজ আগেই শুরু হওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, “চাঁচলকে ফের পুরসভা ঘোষণা না করে তা রূপায়ণে ব্যবস্থা নিলেই কাজের কাজ হতো।”
চাঁচলের কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মেহবুব অবশ্য সামগ্রিক পরিস্থিতিতে হতাশ। তাঁর অভিযোগ, চাঁচলের উন্নয়ন নিয়ে বামেদের মতো বর্তমান সরকারেরও বিশেষ হেলদোল নেই। তৃণমূল নেতা মজিবর রহমান অবশ্য দুষেছেন সিপিএম-কংগ্রেসকে। তাঁর যুক্তি, “চাঁচলের উন্নয়ন নিয়ে ভাবলে, এমন দশা হতো না।”
মহকুমার পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো, পুরসভা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা, ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যেও বাসিন্দাদের মনে মাঝে মধ্যে আশার ঝলক উঁকি দেয়। পুরসভা যখন ঘোষণা হয়েছে তা নিশ্চয়ই বাস্তবায়িত হবে। শহর হবে চাঁচল। শহরে সুন্দর রাস্তা, দু’পাশে পথবাতি সব হবে। মিলবে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য। তবে কবে, কতদিনে মিলবে, সেই আশায় দিন গুনছে চাঁচল।
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার
থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’। অথবা চিঠি পাঠান,
‘আমার শহর-শহরের নাম’, আনন্দবাজার পত্রিকা,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড, শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১।
প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও:
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy