ছ’মাস ফেরার ছিল ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত। অভিযোগ, এক তৃণমূল নেতার ভাই বলেই তাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। মঙ্গলবার টহলদারি পুলিশকে ডেকে অভিযুক্তকে দেখিয়ে দেন অভিযোগকারিণী নিজেই। পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করে। তার পরেও পুলিশের উপরে হামলা চালিয়ে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
মঙ্গলবার কোচবিহারের শীতলখুচির পঞ্চারহাট এলাকায় এই হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় শালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের কার্যকরি সভাপতি উত্তম বর্মনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত প্রকাশ বর্মন তাঁর ভাই।
গত এপ্রিল মাসে তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করেন এক মহিলা ব্যবসায়ী। স্থানীয় বাজারে তাঁর একটি হোটেল চালিয়েই তাঁর সংসার চলে। তাঁর অভিযোগ, গত এপ্রিল মাসে তাঁর প্রতিবেশী প্রকাশচারজনকে নিয়ে তাঁর হোটেলে ভাত খায়। অভিযোগ, টাকা চাইলে তাঁকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেয় প্রকাশ।
এর পরই পরপর দলবল নিয়ে তিন দিন তাঁর দোকানে হামলা করে মারধর করা হয়। এক দিন দোকান ফাঁকা পেয়ে মারধর করে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশে অভিযোগ জানানো হলেও এতদিন প্রকাশ ছিল ‘ফেরার’।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, উত্তমবাবুর ভাই বলেই পুলিশ তাকে ছুঁতে সাহস পায়নি। তাঁর পিছনে ব্লক নেতাদেরও অনেকে আছেন বলে জানান বাসিন্দারা। এ দিন টহলদারি পুলিশের একটি দল ওই বাজারে ঘোরাঘুরি করছিল। সে সময় প্রকাশকে দেখিয়ে দেন অভিযোগকারিণী নিজেই। পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করে।
ঘটনাচক্রে, সেই সময় মাথাভাঙায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। প্রকাশবাবুকে ধরার খবর পেয়েই তৃণমূল সমর্থকেরা তাঁর দাদা উত্তমবাবুর নেতৃত্বে পুলিশের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ।
ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ কর্মীদের মারধর করা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় পুলিশ জিপের কাচ। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ভাঙা জিপেই থানায় চলে যান পুলিশকর্মীরা। পালিয়ে যায় অভিযুক্তও। পুলিশের উপরে পাল্টা দোষারোপ করে উত্তমবাবু অবশ্য দাবি করেন, “দিন কয়েক আগেই হাইকোর্টে আমার ভাইয়ের জামিন হয়েছে। তা নিম্ন আদালতে জানানো হয়নি।” হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “জামিন নেওয়ার পর থেকে প্রকাশ বাড়িতেই রয়েছে। আইনের কাজে আমরা বাধা দিতে চাই না। যে কোনও সময় তাঁকে ধরা যেত। আজকের সভায় যাচ্ছিলাম। সেই সময় পুলিশ প্রকাশকে আটক করায় কিছু সমর্থক খেপে গিয়ে এই ঘটনা ঘটায়। তবে মারধর বা গাড়ি ভাঙচুর হয়নি।”
তবে হামলার কথা স্বীকার করেছে পুলিশ। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় তিন জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করা হয়েছে।”
ঘটনার খবর পেয়ে পঞ্চারহাটে আরও পুলিশবাহিনী পৌঁছলেও, রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমে ঘটনাটি নিয়ে কোনও মামলা করা হবে কি না তা নিয়েও সন্ধে পর্যন্ত জেলা পুলিশ ধন্দে ছিল।
তবে পুলিশের উপরে হামলায় ফের দলের নেতাদের নাম জড়ানোয় অস্বস্তিতে শাসক দল। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “কলকাতায় রয়েছি। ঠিক কী হয়েছে জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।” ঘটনার কথা জানেন না বলে জানান, শীতলখুচির তৃণমূল বিধায়ক প্রাক্তন মন্ত্রী হিতেন বর্মনও। তিনি বলেন, “বিশদে খোঁজ নিয়ে বক্তব্য জানাব।”তবে ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন শীতলখুচি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি আবেদ আলি মিঁয়া। তবে তাতে দলের যোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “প্রকাশবাবু একটি মামলায় অভিযুক্ত আমি জানি। তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করলে তাঁর আত্মীয়স্বজন-সহ কয়েকজন ছিনিয়ে নেয় বলে শুনেছি। এখানে তৃণমূল দলের কোনও ব্যাপার নেই। পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিক।”
তবে অভিযুক্ত এখনও অধরা থাকলেও হাল ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অভিযোগকারিণী। তিনি স্পষ্টই জানান, “আমাকে এ দিনও আবার দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে ওঁরা। আমি ভয় পাই না। শেষ দেখে ছাড়ব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy