Advertisement
E-Paper

পাশের কামরায় ডাকাত, চুপ রেলপুলিশ

বন্দুক, হাঁসুয়া দেখিয়ে চলন্ত ট্রেনের মধ্যে লুঠপাট চালাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। আতঙ্কে যাত্রীরা চিত্‌কার করছিলেন। কিন্তু পাশের কামরায় থাকা রেল পুলিশের দেখা মেলেনি। লুঠ শেষে চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে পালাল দুষ্কৃতীরা। তখনও পুলিশ দর্শক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩৬

বন্দুক, হাঁসুয়া দেখিয়ে চলন্ত ট্রেনের মধ্যে লুঠপাট চালাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। আতঙ্কে যাত্রীরা চিত্‌কার করছিলেন। কিন্তু পাশের কামরায় থাকা রেল পুলিশের দেখা মেলেনি। লুঠ শেষে চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে পালাল দুষ্কৃতীরা। তখনও পুলিশ দর্শক।

শুক্রবার গভীর রাতে মালদহের চামাগ্রাম স্টেশন লাগোয়া এলাকায়, বিহারের কাটিহারগামী হাটেবাজারে এক্সপ্রেসে ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রেল পুলিশকর্মীরা পাশের কামরা থেকে টর্চ জ্বেলে দুষ্কৃতীদের পালাতে দেখলেও ধাওয়া করেনি। তাই নিশ্চিন্তে ওরা পালাতে পারল। পরে মালদহে জিআরপি থানায় ওই কামরার যাত্রী মুর্শিদাবাদের কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে প্রায় ছ’লক্ষ টাকা লুঠের অভিযোগ দায়ের করেন।

শিলিগুড়ির রেল পুলিশ সুপার দেবাশিস সরকার বলেন, “ব্যবসায়ীদের গতিবিধি আগে থেকেই দুষ্কৃতীরা নজরে রাখছিল বলে মনে হচ্ছে। ট্রেন থেকে নামার জন্য তারা চেনও টেনেছিল। কারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল তা-ও দেখা হচ্ছে। পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। কারও গাফিলতি প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পরে দু’জন রেল কর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও ওই রেল পুলিশ কর্মীরা কেন দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করেনি তার সদুত্তর মেলেনি। তবে পুলিশ কর্মীদের একাংশের মতে, রাজ্যে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় যে ভাবে পুলিশ-নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে, তার পর দুষ্কৃতীদের মোকাবিলা করার সাহস কমে গিয়েছে। আর যাই হোক প্রাণের মায়া তো সবারই রয়েছে।

রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশন থেকে পাঁচ ব্যবসায়ী বিহারের কাটিহারগামী হাটেবাজারে এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন। তাঁরা সবাই মুর্শিদাবাদের সূতি লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা। বিহারের মানসি গ্রামের হাট থেকে গরু কিনতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, ট্রেন মালদহের চামাগ্রাম স্টেশনের কাছে পৌঁছতেই ওই কামরাতে থাকা অন্তত সাত দুষ্কৃতী বন্দুক ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে ওই ব্যবসায়ীদের উপর চড়াও হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, লাগোয়া একটি কামরায় রেল পুলিশের কর্মীরা ছিলেন। লুঠের সময় চেঁচামেচি শুনে এবং হঠাত্‌ করে ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়লেও রেল পুলিশের দেখা মেলেনি।

মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা ব্যবসায়ী নাসিরুদ্দিন শেখ, সিরাজুল হক, এনামুল হক, আমিনূর হক জানান, রাত ৩টা নাগাদ হাটেবাজারে এক্সপ্রেসে তাঁরা ওঠেন। নাসিরুদ্দিন শেখের কাছে ৮৭ হাজার টাকা, সিরাজুল হকের ১ লক্ষ ৯০ হাজার, এনানুল হকের কাছে ১ লক্ষ ৩২ হাজার এবং আমিনূরের কাছে ২ লক্ষ টাকা ছিল। নাসিরুদ্দিনের অভিযোগ, “ট্রেনে ঝিমুনি লেগে গিয়েছিল। হঠাত্‌ দেখি কয়েকজন যুবক বন্দুক, হাঁসুয়া হাতে আমাদের ঘিরে ধরেছে। খুন করার হুমকি দিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ওরা নেমে যায়।” প্রাথমিক তদন্তের পরে রেল পুলিশ মনে করছে, ব্যবসায়ীরা যে স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন সেখান থেকেই ওই দুষ্কৃতীরাও যাত্রী সেজে ট্রেনে ওঠে।

মাস খানেক আগে মালদহের কালিয়াচকের খালতিপুর এলাকায় সিগন্যালের তার কেটে সবুজ আলো লাল করে ট্রেন থামায় দুষ্কৃতীরা। এরপর ট্রেনে উঠে তারা এক অলঙ্কার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নগদ টাকা ও গয়না লুঠ করে পালায়। তারপর ফের এই এলাকাতে ডাকাতির অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে রেল পুলিশ। মালদহের রেল পুলিশের ইন্সপেক্টরকে শনিবার ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে শিলিগুড়ি থেকে রেল পুলিশের ডেপুটি সুপারও মালদহ স্টেশনে আসেন। যদিও রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি।

malda rail police robbers in next compartment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy