Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পোস্তর চাষ রুখতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ

বেআইনি পোস্ত খেতে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ল পুলিশ। শনিবার সকালে মালদহের কালিয়াচকে ওই ঘটনায় পুলিশের এক এএসআই এবং র্যাফের এক জওয়ান জখম হয়েছেন। পুলিশের রিভলবার ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীর দাবি, পুলিশ শূন্যে পাঁচ রাউন্ড রবার বুলেট ছোড়ে।

জনতার মারে আহত র্যাফের কর্মী ঈশ্বর হাঁসদা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

জনতার মারে আহত র্যাফের কর্মী ঈশ্বর হাঁসদা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০২:২১
Share: Save:

বেআইনি পোস্ত খেতে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ল পুলিশ। শনিবার সকালে মালদহের কালিয়াচকে ওই ঘটনায় পুলিশের এক এএসআই এবং র্যাফের এক জওয়ান জখম হয়েছেন। পুলিশের রিভলবার ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীর দাবি, পুলিশ শূন্যে পাঁচ রাউন্ড রবার বুলেট ছোড়ে।

মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আফিম গাছের আঠার চালান হচ্ছে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে কিছু দুষ্কৃতী হামলা চালায়। কয়েক জন পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন। পুলিশের গুলি চালানোর অভিযোগ ঠিক নয়। কারও সার্ভিস রিভলভারও ছিনতাই হয়নি।” রাত পর্যন্ত দু’জন গ্রেফতার হয়েছে।

নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) নজরদারিতে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানের কিছু জায়গায় পোস্ত চাষ হয়। নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে আর কোথাও পোস্ত চাষ করা অবৈধ। পোস্তর আঠার সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে মরফিন, ব্রাউন সুগার বা হেরোইনের মতো মাদক তৈরি হয়। ২০০২-০৩ থেকে নদিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের কিছু অংশ এবং মালদায় প্রচুর জমিতে পোস্ত চাষ শুরু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

এ দিন সকালে কালিয়াচক ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সুলতানগঞ্জে সাদা পোশাকে হানা দেয় পুলিশ। দলে ছিলেন কালিয়াচক থানার দুই এএসআই-সহ সাত জন। গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, গ্রামে ঢুকেই এএসআই রামচন্দ্র সাহা এক যুবককে তাড়া করে ধরে বেধড়ক মারতে শুরু করে। গ্রামের কিছু লোক প্রতিবাদ করলেও তিনি নিরস্ত হননি। এর পরেই পুলিশের উপর ইটবৃষ্টি শুরু হয়। ইটে র্যাফের এক জওয়ান জখম হন। রামচন্দ্রকে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। সার্ভিস রিভলভারও কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অন্য পুলিশকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে কিছু লোক লাঠি হাতে তাঁদের উপরেও চড়াও হন।

খবর পেয়ে কালিয়াচক থানার আইসি শুভব্রত ঘোষ ঘটনাস্থলে গেলে তিনিও হামলার মুখে পড়েন। সেই সময়েই পুলিশ শূন্যে পাঁচ রাউন্ড রবার বুলেট ছোড়ে বলে গ্রামবাসীর একাংশের দাবি। খানিক বাদে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে চলে আসেন ডিএসপি সিদ্ধার্থ দরজি। এর পরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এএসআই-এর রিভলভারও উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি।

তবে এই গোলমালের জন্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করেছেন গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ বেআইনি পোস্ত চাষের বিরুদ্ধে এত দিন কোনও পদক্ষেপ করেনি। কয়েক বার লোক দেখানো অভিযান চালানো হলেও ধৃতদের পরে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। যার ফলে ওই কারবারীরা অতিসক্রিয় হয়ে উঠছে। এ দিন সাদা পোশাকের পুলিশ হঠাৎ এক যুবককে মারধর করছে দেখে কারণ জানতে চাইলে উল্টে গালিগালাজ করা হয় বলেও তাঁদের অভিযোগ।

এনসিবির হিসেব অনুযায়ী, এক একর জমিতে কমবেশি হাজার দশেক টাকা খরচে পোস্ত চাষ করলে ১০ কিলো পর্যন্ত আঠা সংগ্রহ করা সম্ভব। ১০ কিলো আঠায় নিষিদ্ধ রাসায়নিক (নারকোটিক ড্রাগ) মিশিয়ে এক কিলো হেরোইন তৈরি করা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে যার দর অন্তত এক কোটি টাকা। পুলিশের মতে, এই লাভের ব্যবসায় হাত পড়ার কারণেই পোস্ত কারবারীরা খেপে উঠেছে।

কালিয়াচক ১ পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের জামির শেখ বলেন, “পোস্ত চাষ নিয়ে কিছু গ্রামবাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলমাল হয়েছে বলে শুনেছি। পুলিশের উপরে হামলা করা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। গোটা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।” বিকেলে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আগে খুনের মামলাও ছিল।

ঘটনা হল, সম্প্রতি মালদহে বারবারই আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে ইংরেজবাজারের নিয়ামতপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদীর উপরে হামলা হয়। তার আগে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি বাবিন মুখোপাধ্যায়ের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশের দাবি, পোস্ত চাষিরা গ্রামবাসীদের একাংশকে উসকে হামলা চালায়। পুলিশ সুপার বলেন, “গ্রামবাসীরা হামলা করছে, না কি কিছু সমাজবিরোধী এ সব ঘটনা ঘটাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

posto attack on police maldaha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE