ঘরোয়া বিবাদেও এ বার তৃণমূল নেতারা মাথা গলাতে শুরু করলেন বলে অভিযোগ উঠল শিলিগুড়িতে। একটি আবাসনের দুই মহিলার মধ্যে জামা কাপড় শোকানো নিয়ে বিবাদে এক পক্ষের হয়ে একাধিক তৃণমূল নেতা আসরে নেমেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি গড়িয়েছে থানা পর্যন্ত। শিলিগুড়ি থানায় দুই মহিলাই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের নাম সোমা রায় এবং প্রতিমা মজুমদার। দু’টি পরিবারই তৃণমূলের সমর্থক। তাঁদের মধ্যে প্রতিমাদেবী এবং তাঁর স্বামীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে তাঁরা অভিযোগ করলেও অপর পক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার খবর পৌঁছেছে তৃণমূলের জেলা দফতরেও। তৃণমূলের জেলা সভাপতি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “পুলিশ কেন পক্ষপাতিত্ব করবে? পুলিশ কমিশনারকে বলে দিয়েছি সব ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।”
শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসি অংমু গ্যামসো পাল বলেন, “পক্ষপাতিত্বের ব্যাপার নেই। সব পক্ষের বক্তব্য শুনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নাম ওই ঘটনা প্রসঙ্গে সামনে এসেছে তাঁরা হলেন মলয় সরকার ওরফে বনা এবং সোমা দেবীর দাদা সনৎ সাহা। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতিমাদেবীর অভিযোগে ‘বনা’ বলে এক জনের নাম রয়েছে। তবে মলয়বাবু বলেন, “দলের কোনও ব্যাপার নেই। গোলমালের খবর পেয়েই গিয়েছিলাম। যাতে বড় ধরনের কিছু না ঘটে সে জন্য পুলিশকে বলাও হয়।” সনৎবাবু বলেন, “তৃণমূল করি বলে প্রভাব খাটানোর ব্যাপার নেই। দলকে টেনে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। প্রতিমাদেবী আমার বোনের উপর চড়াও হয়ে মারধর করেন। জামা-কাপড় টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে দেন। মারধর করতে থাকলে বোন ওই অবস্থায় দৌড়ে বার হয়। পাড়ার মহিলারা তাঁকে উদ্ধার করেন। বোন পুলিশকে সমস্তই জানিয়েছে।”
প্রতিমাদেবীর অভিযোগ, সোমাদেবীর দাদা সনৎবাবু এলাকার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। সেই সুবাদে স্থানীয় তৃণমূল নেতা মলয়বাবু এবং কাউন্সিলরের সঙ্গেও সনৎবাবুর পরিচিতি রয়েছে। অন্য দিকে আড়াই মাস আগে ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেছেন প্রতিমাদেবীরা। এলাকায় তাঁদের তেমন পরিচিতি নেই। তৃণমূলের কিছু নেতা মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে তাঁদের ফ্ল্যাট থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছেন বলে অভিযোগ।
বুধবার ঘটনার পর এ দিন জামিনে ছাড়া পান প্রতিমাদেবী এবং তাঁর স্বামী। অথচ বাড়িতে ফেরার পর সনৎবাবুরা তাদের গালিগালাজ, হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের ফ্ল্যাটে ঢোকার ব্যবস্থা করে। এ দিন সমস্যা নিয়ে ফের পুলিশের দ্বারস্থ হন প্রতিমাদেবীরা।
ওই আবাসনের এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরেই নানা কারণে সমস্যা চলছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে তৃণমূলের জেলা কমিটির একাদিক নেতা এই ঘটনার পরে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ঘরোয়া বিবাদে পক্ষপাতিত্ব করে তা আরও জটিল করা কখনও উচিত নয়। বরং দুই পক্ষকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটিয়ে দেওয়াই সুস্থতার পরিচয় বলে ওই তৃণমূল নেতারা মনে করেন।