উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীকে মারধরের অভিযোগে বিধায়ক এবং তাঁর কয়েকজন সঙ্গীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। গত শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মী নেপাল চন্দ্র দেবকে মারধরের অভিযোগ ওঠে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার এবং তাঁর লোকজনদের বিরুদ্ধে। ঘটনার দু দিন পর সোমবার পুলশে অভিযোগ জানানো হয়। এর পরেই এ দিন পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে।
জখম ওই নিরাপত্তা কর্মী উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালেই শল্য বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। বুধবার মাটিগাড়া পুলিশের একটি তদন্তকারী দল হাসপাতালে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। তারা নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বে থাকা সুপার ভাইজার এবং কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নেন। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়া এবং মারধরের অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। অপর একটি মামলা হয়েছে ওই কর্মীকে জখম করার নিয়ে।
বিধায়ক শঙ্করবাবু তাঁর বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ নিয়ে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “মদ্যপ অবস্থায় ওই কর্মী আমাকে হেনস্থা করেছিল বলে পুলিশকে আমিই ফোন করেছিলাম। পুলিশ গিয়ে তাকে ধরেও নিয়ে যায়। অথচ সে ব্যাপারটি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না কেন বুঝতে পারছি না।”
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ওই নিরাপত্তারক্ষীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হাসপাতালের ওই বিভাগের কর্মীরা। ঘটনার নিন্দা করে তাঁরা অবিলম্বে দোষীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন। এমনকী শুরুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তোলেন। কেন ঘটনার দিনই হাসপাতালের তরফে অভিযোগ জানানো হয়নি সেই প্রশ্ন ওঠে। এর পরেই নেপালবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ পুলিশে সব জানান।
বিধায়ক শঙ্করবাবুর দাবি করেছিলেন, ওই কর্মীকে তিনি বা তাঁর লোকজন কোনও রকম মারধর করেননি। তবে তিনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি দলের এক জখম কর্মীকে দেখতে গেলে ওই রক্ষী মদ্যপ অবস্থায় তাঁদের হেনস্থা করতে সচেষ্ট হন বলে অভিযোগ। অভিযোগকারী নিরাপত্তারক্ষীর দাবি, একজন রোগীকে ঢোকার জন্য জায়গা করে দিতে তিনি শঙ্করবাবু এবং তাঁর লোকদের দাঁড়াতে বলেছিলেন। নেপালবাবু বলেন, ‘‘বিধায়ককে তিনি চিনতেন না। এক রোগীকে ঢোকার জন্য শঙ্করবাবুদের দাঁড়াতে বলেছিলেন। শঙ্করবাবু পরিচয় দেওয়ার পর তিনি তাদের ঢোকার ব্যবস্থা করেও দিচ্ছিলেন। অথচ কেন তাদের দাঁড়াতে বলা হয়েছে সেই অপরাধে শঙ্করবাবু এবং তাঁর লোকজন আমাকে মারধর করেছে। আমি মদ্যপ ছিলাম না। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের তরফে সুপার ভাইজার কার্তিক চন্দ্র দে-এর অভিযোগ বলেন, “ঘটনা নিন্দনীয়। বিধায়কের সামনে ওই কর্মীকে মারা হয়েছে। বিধায়কও তাতে সামিল ছিলেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে এ ধরনের অন্যায়ের প্রবণতা বাড়বে। কর্মীদের কাজ করতে সমস্যা হবে। আমরা চাই অবিলম্বে দোষীদের শাস্তি হোক।”
ঘটনার নিন্দা করেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু। অশোকবাবু বলেন, “একজন বিধায়ক হিসাবে শঙ্করবাবুর ওই কাজ করা উচিত হয়নি। নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তিনি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানাতেই পারতেন।” রথীন্দ্রবাবু আলাদা ভাবে জানিয়েছেন, এক জন বিধায়কের কাছ থেকে মানুষ ভাল কিছু আশা করেন। রাজনীতি মানুষের জন্য। রথীন্দ্রবাবুর কথায়, “শঙ্করবাবু যা করেছেন তা অনভিপ্রেত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy