Advertisement
১১ মে ২০২৪

বিধায়কের গাড়ি আটকে হামলার চেষ্টা, অভিযোগ

ভোটের ফল প্রকাশের পরেও বিক্ষিপ্ত রাজনৈতিক গণ্ডগোল অব্যাহত উত্তরবঙ্গে। সোমবার রাস্তায় ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহের গাড়ি আটকে হামলার চেষ্টার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএমের পার্টি অফিস দখলের অভিযোগ ওঠে। মোর্চা তৃণমূল-সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে কালিম্পঙে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০১:৩৮
Share: Save:

ভোটের ফল প্রকাশের পরেও বিক্ষিপ্ত রাজনৈতিক গণ্ডগোল অব্যাহত উত্তরবঙ্গে। সোমবার রাস্তায় ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহের গাড়ি আটকে হামলার চেষ্টার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএমের পার্টি অফিস দখলের অভিযোগ ওঠে। মোর্চা তৃণমূল-সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে কালিম্পঙে।

সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার ঘুঘুমারি এলাকা দিয়ে জেলা পার্টি অফিসের দিকে যাচ্ছিলেন দিনহাটার বিধায়ক উদয়নবাবু। অভিযোগ, রাস্তায় তৃণমূল সমর্থকেরা তাঁর গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেন। গাড়ি আটকাতে না পেরে গাড়িতে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। এর পরেই সেখানে থাকা ফরওয়ার্ড ব্লকের শ্রমিক সংগঠনের একটি অফিসে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়। ওই অফিসে থাকা একটি ফ্যান খুলে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে। উদয়নবাবু বলেন, “পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। আমার গাড়ির উপরে লাঠি দিয়ে আঘাত করে শাসক দলের কর্মীরা।”

লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ার পর গত কয়েকদিন ধরে কোচবিহার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বাম ও বিজেপি নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে বামেদের এক প্রতিনিধি দল এ দিন কোচবিহারের পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তাঁরা আক্রান্তদের নিয়ে পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে বসে থাকার হুমকি দিয়েছেন। আগামী, শুক্রবার পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে অবস্থানের হুমকিও দিয়েছেন তাঁরা। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “যে সব ক্ষেত্রে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ কিছু করছে না এ কথা ঠিক নয়।”

এ দিন জেলা প্রশাসনে স্মারকলিপি দিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে বিজেপিও। কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বাজার লাগোয়া দু’টি বুথে তৃণমূল ও বামেদের থেকে বিজেপি বেশি ভোট পায়। বিজেপির অভিযোগ, তা নিয়ে শাসকদলের একটি অংশ ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিল। ঘুঘুমারির বারুইপাড়া এলাকায় এক বিজেপি সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ। সেখান থেকে ফিরে ঘুঘুমারি বাজারে তিনটি দোকানে হামলা চালানো হয়। ওই এলাকার বুথগুলিতে বামেদের হয়ে প্রচারে নেমেছিলেন কয়েকজন বাসিন্দা। অভিযোগ, এ দিন সকালে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের কদমতলা এলাকায় জড়ো হয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা সুবল করের একটি গুদাম ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কোচবিহার ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি খোকন মিয়াঁ অবশ্য দাবি করেন, সবই মিথ্যে অভিযোগ। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কটাক্ষ, “মিথ্যে অভিযোগ তুলে প্রচারে থাকার চেষ্টা করছেন উদয়নবাবুরা।”

শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে পাশের জেলা জলপাইগুড়িতেও। কিছুদিন আগে পর্যন্ত সিপিএম-এর শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ডুয়ার্সের ধূপগুড়ির গাদং ১ পঞ্চায়েতের ভোটপাড়া গ্রামে রবিবার সন্ধ্যায় বিজয় মিছিল বের করে তৃণমূল। মিছিল শেষ হবার পর গ্রামের সিপিএম-এর ব্রাঞ্চ অফিস তৃণমূল কর্মীরা দখল করে করে নেন বলে অভিযোগ। সোমবার ধূপগুড়ি জোনাল সিপিএম-এর তরফে পুলিশকে মৌখিক ভাবে ঘটনাটি জানানো হয়। সোমবার সকালে পুলিশ ঘটনা স্থলে করতে যায়। ধূপগুড়ি ধানার আইসি যুগলচন্দ্র বিশ্বাস বলেছেন, “সেখানে যে সিপিএম এর পার্টি অফিস ছিল সে বিষয়ে গ্রামের কোনও বাসিন্দা দাবি করেননি। তা ছাড়া লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় আমরা কোনও মামলা করিনি।”

সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সদস্য সুভাষ রায়ের বক্তব্য, “পুলিশ এখন তৃণমূলের কথায় চলে। থানায় লিখিত অভিযোগ করে লাভ হবে না জেনে মৌখিকভাবে জানিয়েছি।” ঘটনা অস্বীকার করে ধূপগুড়ির তৃণমূল নেতা গুড্ডু সিংহ বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। তবে এ ভাবে পার্টি অফিস কেউ যদি দখল করে তা আমাদের দলবিরোধী ঘটনা সত্য হলে আমরা দলীয় ভাবে ব্যবস্থা নেব।”

সোমবার সকালে কালিম্পঙের মংপু এলাকায় তৃণমূল ও মোর্চার দু-দলের কয়েকজন নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। মোর্চার অভিযোগ, তৃণমূলের হামলায় তাদের দলের এক সমর্থকের পা ভেঙেছে ও অফিসে থাকা লক্ষাধিক টাকাও লুঠ হয়। তৃণমূলের পাহাড় শাখার তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, মংপুতে তাদের দলের পতাকা পুড়িয়ে গোলমাল পাকিয়েছে মোর্চা। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। অভিযোগ পেয়েই তদন্ত শুরু করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kalimpong attack tmc udayan guha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE