Advertisement
E-Paper

বালুরঘাটে ফের প্রকাশ্যে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে থানা-পুলিশ আগেই হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ২টো নাগাদ তৃণমূলের এক কর্মীকে লোহার রড, সাইকেলের চেন দিয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে দলেরই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। বালুরঘাট পুরবোর্ডের রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়েই শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দল বেশ কিছুদিন ধরেই প্রকাশ্যে এসেছে। সেই ঘটনায় এবার রক্তপাতেরও ঘটনা ঘটল। জখম তৃণমূল কর্মী পুরসভার চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহার অনুগামী বলে পরিচিত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৯
হাসপাতালে আহত তৃণমূল কর্মী দুলাল সিংহ।—নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে আহত তৃণমূল কর্মী দুলাল সিংহ।—নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে থানা-পুলিশ আগেই হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ২টো নাগাদ তৃণমূলের এক কর্মীকে লোহার রড, সাইকেলের চেন দিয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে দলেরই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। বালুরঘাট পুরবোর্ডের রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়েই শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দল বেশ কিছুদিন ধরেই প্রকাশ্যে এসেছে। সেই ঘটনায় এবার রক্তপাতেরও ঘটনা ঘটল। জখম তৃণমূল কর্মী পুরসভার চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহার অনুগামী বলে পরিচিত।

এদিন দুপুরে বালুরঘাটের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দবাগানপাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রাথমিক শিক্ষক দুলাল সিংহের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, তিনজন দুষ্কৃতী পিছন থেকে হামলা চালায়। লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করলে দুলালবাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এর পর সাইকেলের চেন দিয়ে তাঁকে মারা হয় বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত দুলালবাবুকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চেনের আঘাতে তার পিঠে আঘাত লেগেছে বলে চিকিত্‌সকেরা জানিয়েছেন। মারধর করে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায় বলে পুলিশকে জানানো হয়েছে।

গত শনিবার এলাকায় সরকারি ফ্লেক্স ছেঁড়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল তৃণমূলেরই কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। পুরসভা এবং জেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আগামী ১৯ অক্টোবর বিজয়া সম্মিলনীর প্রচারে টাঙানো ফ্লেক্সে মুখ্যমন্ত্রী এবং পরিষদীয় সচিব তথা দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের ছবি ছিল। ওই ঘটনায় তৃণমূল কাউন্সিলর ব্রতময় সরকারের দায়ের করা অভিযোগে দলেরই কয়েকজন কর্মীর নাম ছিল বলে জানা যায়। সেই অভিযোগে নাম ছিল দুলালবাবুরও। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পল্লব মালাকারের দাবি, পুরপ্রধান ও তাঁর স্বামীকে মোবাইলে হুমকির ঘটনায় থানায় অভিযোগ ও একজনকে গ্রেফতার করার পর থেকেই, মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, “টাকা ও সোনার চেন সহ ব্যানার ছেঁড়ার মতো মনগড়া অভিযোগ দায়ের করে আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।” এ দিন হামলার ঘটনার পরে বালুরঘাট পুরসভার তৃণমূল চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহা পাল্টা দাবি করে বলেন, “দুলালের বিরুদ্ধে ফ্লেক্স ব্যানার ছেঁড়ার মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। এবার তার উপর প্রাণঘাতী হামলা হল। কারা এ ঘটনার যুক্ত তাদের খুঁজে বের করে পুলিশকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।”

দক্ষিণ জিনাজপুর জেলা রাজনীতিতে চয়নিকাদেবী পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর অনুগামী হিসেবে পরিচিত। মন্ত্রী বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা কাউন্সিলর ব্রতময়বাবু পুরপ্রধানের স্বামী ও ওয়ার্ড সভপতির বিরুদ্ধে তাঁর টাকা ও সোনার চেন ছিনতাইয়ের অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। এ দিন হামলার অভিযোগের পরে ব্রতময়বাবু বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কারা ওই যুবকের উপর হামলা করেছে বলতে পারব না।”

জখম দুলালবাবু কোনও ফ্লেক্স, ব্যানার ছেঁড়ার ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। দুলালবাবু দাবি করে বলেন, “ক্রিকেট খেলতে মালদহের চাঁচলে গিয়েছিলাম। গত সোমবার ফিরেছি। তারমধ্যে পুরসভা নিয়ে কী হয়েছে, জানি না।” জখম দুলালবাবুর মা কাজলীদেবী বলেন, “ছেলেকে নিয়ে একা থাকি। আতঙ্কে রয়েছি।” এই ঘটনায় দুলালবাবুর পরিবারের তরফে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের কথা উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে বালুরঘাট থানার আইসি বিপুল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাত পর্যন্ত থানায় কোনও অভিযোগ হয়নি।

পুরসভার কর্তৃত্ব নিয়ে দলের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু এবং মন্ত্রী শঙ্করবাবুর অনুগামীদের মধ্যে এবার হামলার অভিযোগ ওঠায় বালুরঘাট শহরেও চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এ দিন সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে, যা বলার পরে বলব।” অন্যদিকে, বিপ্লববাবু বলেন, “কী হয়েছে জানি না। তবে দলের মধ্যে এ সব ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। ঘটনার সঙ্গে দলের কেউ জড়িত থাকলে তাদের চিহ্নিত করে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।” বিপ্লববাবু জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে কলকাতার তৃণমূল ভবনে বর্ধিত সভা ডেকেছেন দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী। ওই সভায় সমস্ত জেলার বিধায়ক, মন্ত্রী থেকে জেলা পরিষদ ও পুরসভার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন। সেখানে বালুরঘাট পুরসভার বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। দলীয় সূত্রের খবর, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন।

balurghat tmc party conflict injured
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy