Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বকেয়া পেনশন মেটানোর দাবি, দফতরে ক্ষোভ

গত দুমাস পেনশন দেওয়া হয়নি। মেলেনি ফেব্রুয়ারির বেতন। ফলে পেনশন ও বেতন খাতে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমে বকেয়ার পরিমাণ বেড়ে ৫৭ কোটিরও বেশি দাঁড়িয়েছে। বিপাকে পড়েছেন নিগমের বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। বৃহস্পতিবার বকেয়া পেনশন মেটানোর দাবিতে কোচবিহারে সংস্থার সদর দফতরে বিক্ষোভ দেখান অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। মার্চের মধ্যে বকেয়া না পেলে এপ্রিলে ওই দফতরের সামনে অনশনের হুমকিও দিয়েছে অবসরপ্রাপ্তকর্মীদের সংগঠন এনবিএসটিসি রিটায়ার্ড স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন।

পরিবহণ দফতরে বিক্ষোভকারীরা। —নিজস্ব চিত্র।

পরিবহণ দফতরে বিক্ষোভকারীরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০২:২৯
Share: Save:

গত দুমাস পেনশন দেওয়া হয়নি। মেলেনি ফেব্রুয়ারির বেতন। ফলে পেনশন ও বেতন খাতে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমে বকেয়ার পরিমাণ বেড়ে ৫৭ কোটিরও বেশি দাঁড়িয়েছে। বিপাকে পড়েছেন নিগমের বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। বৃহস্পতিবার বকেয়া পেনশন মেটানোর দাবিতে কোচবিহারে সংস্থার সদর দফতরে বিক্ষোভ দেখান অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। মার্চের মধ্যে বকেয়া না পেলে এপ্রিলে ওই দফতরের সামনে অনশনের হুমকিও দিয়েছে অবসরপ্রাপ্তকর্মীদের সংগঠন এনবিএসটিসি রিটায়ার্ড স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন।

একই ভাবে বকেয়া বেতন মেটানোর দাবিতে সরব হয়েছেন সংস্থার ডান-বাম বিভিন্ন কর্মী সংগঠনের নেতারা। যৌথ মঞ্চ গড়ে আন্দোলনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তাঁরা। গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন নিগম কর্তারা। নিগমের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সুবলচন্দ্র রায় বলেন, “সমস্ত বকেয়া মেটানর চেষ্টা হচ্ছে।” নিগমের পরিচালন বোর্ডের সদস্য আবদুল জলিল আহমেদ বলেন, “আংশিকভাবে কিছু বকেয়া মেটানো হচ্ছে। তার পরেও বড় অঙ্ক টাকা বকেয়া রয়েছে। আমরাও ওই ব্যাপারে সহানূভূতিশীল। দ্রুত ওই সব বকেয়া মেটানোর ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে।”

নিগম কর্তৃপক্ষের ওই আশ্বাসে অবশ্য খুশি নন অবসরপ্রাপ্ত কিংবা বর্তমান কর্মীরা। এনবিএসটিসি রিটায়ার্ড স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হতে চললেও সংস্থার আড়াই হাজারের বেশি অবসরপ্রাপ্ত কর্মী এখনও জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের পেনশন পাননি। কবে ওই বকেয়া মিলবে সে ব্যাপারেও স্পষ্ট করে নিগম কর্তারা কিছু জানাচ্ছেন না। শুধু রাজ্য সরকারের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে কিংবা অর্থ দফতরে ফাইল পাঠান হয়েছে জানিয়ে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।

জানুয়ারির বকেয়া পেনশনের দাবির সময় থেকে একই কথা বলা হলেও এখনও উল্টে বকেয়ার অঙ্ক বেড়েছে। তার ওপর আগের ১১ মাসের বকেয়া পঞ্চাশ শতাংশ টাকাও মেচানো হয়নি। ফলে পেনশন খাতে এনবিএসটিসির বকেয়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির পেনশন বাবদ বকেয়া রয়েছে ৭ কোটি টাকার বেশি।

২০১১ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১১ মাস অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের মাত্র পঞ্চাশ শতাংশ টাকা পেনশন দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে বকেয়া রয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। সংসার চালাতে বিপাকে পড়ছেন অবসরপ্রাপ্তরা। এমনকি আর্থিক সঙ্কটে ভাল চিকিত্‌সার সুযোগ পাচ্ছেন না অনেকে। ৮ মার্চ বিমল দেব নামে অসুস্থ এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তার পরেও বকেয়া মেটানো ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোন রকম হেলদোল নেই বলে অভিযোগ।

এনবিএসটিসি রিটায়ার্ড স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গুণেন্দ্র মিত্র বলেন, “জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও আগের সাড়ে ৫ মাস মিলিয়ে মোট সাড়ে ৭ মাসের পেনশন বকেয়া পড়েছে। টাকার অঙ্কে ওই বকেয়ার পরিমাণ ১৯ কোটি টাকার বেশি। নিয়মত পেনশন পেলে দুশ্চিন্তামুক্ত ও ভাল চিকিত্‌সার সুযোগ পাওয়া যেত। সেক্ষেত্রে বিমল দেবের মত অবসরপ্রাপ্তরা হয়ত আরও কিছুদিন বেঁচে থাকতেন।”

নিগমের কর্মী সংগঠনগুলির অভিযোগ, ফি মাসে নিগমের স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক মিলিয়ে চার হাজার কর্মীর বেতন দিতে প্রায় ৬ কোটি টাকা দরকার। ওই কর্মীদের এখনও ফেব্রুয়ারির বেতন দেওয়া যায়নি। তার ওপর ২০১২ সালের অগস্ট মাস থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত ফি মাসে বিভিন্ন ডিপোয় গড়ে ৭০-৮০ শতাংশ টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে। ওই খাতে বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি টাকা। বারবার দাবি জানিয়েও ওই বকেয়া মিলছে না। তার ওপর শেষ মাসের বেতনও দেওয়া হয়নি। এতে বকেয়া বেতনের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। এনবিএসটিসি ওয়াকার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি সুজিত সরকার জানান, দ্রুত বকেয়া মেটানোর দাবি জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pension agitation cooch behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE