মালদহের মহাদেবপুরে গঙ্গা ও ভাগীরথীর সংযোগস্থলে স্লুইস গেটের উদ্বোধনে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পাশে জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। সেখানেই পাশাপাশি হাসিমুখে দেখা গেল জেলার দুই মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র ও কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীকে। বুধবার।—নিজস্ব চিত্র।
গঙ্গার ভাঙন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার মালদহের মহাদেবপুরে গঙ্গা ও ভাগীরথী নদীর সংযোগ স্থলে তৈরি স্লুইস গেটের উদ্বোধন করতে এসেছিলেন তিনি। লঞ্চে চেপে মানিকচক থেকে খাসকোল পর্যন্ত গঙ্গা ভাঙন পরিদর্শনও করেন। তারপরেই ভাঙন রুখতে গঙ্গার পাড় বাঁধাইয়ের কাজের মান নিয়ে অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন রাজীববাবু।
সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে মানিকচক পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এবং ব্যারাজ থেকে জলঙ্গি পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার মিলিয়ে মোট ১২০ কিলোমিটার এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে ভাঙন রোধের কাজ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। চলতি বছরেই অন্তত ১০ কোটি টাকা দিয়ে নদীর দু’পাশে কংক্রিটের পিলার বসিয়ে পাড় বাঁধাইয়ের কাজ করেছে কেন্দ্র।
এ দিন লঞ্চে চেপে যাওয়ার সময় ওই জায়গারই মধ্যে ডোমঘাট এলাকার কাজ দেখে সেচমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজীববাবু জানান, লঞ্চে চেপে মনিকচক থেকে খাসকোল পর্যন্ত গঙ্গা ভাঙন দেখেছেন। ভাঙন পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগের। তাঁর অভিযোগ, “তবে কেন্দ্র অতীতে এবং চলতি বছরে ভাঙন ঠেকানোর যে কাজ করেছে, তা মোটেই ভাল নয়। সেই কাজের যা হাল, তাতে ফের ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করতে হবে।” সেচমন্ত্রী জানান, দ্রুত নতুন করে কাজ করার জন্য তিনি নিজেই কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দাবি জানাবেন। কাজ শুরু করতে কেন্দ্রের উপর চাপ তৈরি করা হবে বলেও তিনি জানান।
সেচ দফতরের সূত্রে খবর, গঙ্গা-ভাগীরথীর মোহনায় স্লুইস গেট তৈরি করতে ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। শিলান্যাসের ৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে বলে সেচ দফতরের দাবি। মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতা না পেলে এত তাড়াতাড়ি এই স্লুইস গেটের কাজ শেষ করা যেত না।” তাঁর দাবি, আগে পরিকল্পনার অভাব ছিল, পরিচালনার অভাব ছিল। এখন সে অভাব নেই। এই স্লুইস গেটের ফলে সারা বছর ভাগীরথীতে জল থাকবে বলে সেচ দফতর জানিয়েছে। যার ফলে ওই এলাকায় সেচের কাজে যেমন সুবিধে হবে, তেমনই বিভিন্ন প্রয়োজনে বাসিন্দারাও জল ব্যবহার করতে পারবেন। এ দিনের সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে সেচমন্ত্রী ছাড়াও জেলার দুই মন্ত্রী এবং সেচ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি চিকিত্সক মোয়াজ্জেম হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। আর তা নিয়ে বির্তকও শুরু হয়েছে। সরকারি কোনও পদ ছাড়াই কেন জেলা তৃণমূল সভাপতি মঞ্চে থাকলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রের অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই তৃণমূল সরকারি মঞ্চকে রাজনৈতিক মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি মৌসম বেনজির নূর বলেন, “সরকারি অনুষ্ঠানে এলাকার সাংসদকে ডাকা হয় না। অথচ তৃণমূল নেতারা থাকেন। এটাই দলতন্ত্রের নমুনা।”
তবে সেচমন্ত্রী জানান, সরকারি অনুষ্ঠানে সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত শিক্ষক, চিকিত্সক-সহ অনেককেই সামিল করা হয়। তাঁর কথায়, মালদহে মোয়াজ্জেম হোসেন সমাজসেবী হিসাবে পরিচিত। তাই তিনিও অনুষ্ঠানে আসেন। তাঁর দাবি, “এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।” মোয়াজ্জেমের বক্তব্য, “আমাদের সরকারের অনুষ্ঠান, তাই এসেছি। আমি মালদহের বাসিন্দা, সেটাও আসার কারণ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy