Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভোটে ব্রাত্য খালপাড়ার ২৫০ মানুষ

এ বারও ভোট দিতে পারবেন না শিলিগুড়ির খালপাড়ার বিবেকানন্দ রোডের আড়াইশো বাসিন্দা। কোনও দিনই দিতে পারেননি। কারণ তাঁদের ভারত সরকার প্রদত্ত ভোটার কার্ডই নেই। দুই-একবার বিক্ষিপ্ত ভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল সরকারি ও বেসরকারি তরফে।

সংগ্রাম সিংহরায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৪ ০১:৩৫
Share: Save:

এ বারও ভোট দিতে পারবেন না শিলিগুড়ির খালপাড়ার বিবেকানন্দ রোডের আড়াইশো বাসিন্দা। কোনও দিনই দিতে পারেননি। কারণ তাঁদের ভারত সরকার প্রদত্ত ভোটার কার্ডই নেই। দুই-একবার বিক্ষিপ্ত ভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল সরকারি ও বেসরকারি তরফে। শেষ পর্যন্ত সরকারি প্রক্রিয়া মেনে, কাউন্সিলরের শংসাপত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বা নাম নথিভুক্তকরণ, কিছুই হয়নি। ফলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও ভোটের বুথের সামনে দেখা যাবে না এঁদের বেশির ভাগকেই। আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মত হয়েও, এঁদের পরিচয় স্বতন্ত্র। এঁরা সকলেই শিলিগুড়ির নিষিদ্ধ পল্লির বাসিন্দা। তবে তাঁদের পরিচয়পত্র তৈরির জন্য চেষ্টা করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন এলাকার কাউন্সিলর থেকে এঁদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। উদ্যোগ নিয়েছিলেন মহকুমা শাসকও। কিন্তু কেন তা কার্যকর করা গেল না তার সদুত্তর পাওয়া যায়নি কারও কাছেই। সকলেই দায় এড়িয়েছেন। আর যাঁদের নিয়ে এত আলোচনা, পরিচয়পত্র না পেয়ে প্রতি পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক দীপাপ প্রিয়া বলেন, “মার্চ মাসে নতুন ভোটার পরিচয়পত্র তৈরি করার জন্য শিবির করা হয়েছিল। তাতে হাজির ছিলেন না তাঁরা। ফলে এখন কিছুই করার নেই।” এ বিষয়ে প্রশাসনের আরও একটু যত্নবান হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট তথা সেই সময়ে মহকুমা শাসকের দায়িত্বে থাকা শুভাশিস ঘোষ। তিনি বলেন, “যৌনকর্মীরা নিজের এলাকার বাইরে গিয়ে খুব একটা স্বচ্ছন্দ থাকেন না। তাঁদের আগের পরিচয়ও প্রকাশ করতে চান না। তাই তাঁদের জন্য আরও যত্নবান হওয়া উচিত ছিল।”

প্রায় ৮০ বছরের বেশি সময় ধরে খালপাড়ায় তাঁদের বসতি। প্রায় পাঁচশো বাসিন্দা রয়েছেন, যাঁরা বিভিন্ন ভাবে এই যৌন পেশায় যুক্ত। সরাসরি এই পেশায় আছেন ৩০০ মহিলা। এর মধ্যে প্রায় ৫০ জনের ভোটার পরিচয় পত্র রয়েছে। বাকিদের নেই। এ কারণে কয়েক মাস আগে শিলিগুড়িতে মানবাধিকার কমিশনের একটি শিবিরে গিয়ে পরিচয় পত্র তৈরি করে দেওয়ার দাবি করেন যৌন কর্মী কয়েক জন। তাঁদের অনুরোধ শুনে কমিশনের পক্ষ থেকে তত্‌কালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মহকুমা শাসককে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। এই নিষিদ্ধপল্লি এলাকাটি শিলিগুড়ি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। এলাকার কাউন্সিলর রামেশ্বর প্রসাদ গুপ্ত বলেন, “আমরা অনেক বার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাবা বা মায়ের পরিচয় পত্র না থাকায়, কিংবা অনেক সময় পরিবারের পরিচয় দিতে না চাওয়ায় এঁদের পরিচয় পত্র তৈরি করানো সম্ভব হয়নি।” যদিও কাউন্সিলর এলাকাতেই আসেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন নিষিদ্ধপল্লি নিয়ে কাজ করা সংস্থা দূর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি মিঠু চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “কাউন্সিলর এলাকাতেই আসেন না। এই মহিলাদের পরিচয়পত্র তৈরির জন্য অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফেও কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি।” রাজনৈতিক স্বার্থেও যদি কেউ এগিয়ে আসত, তাহলে এই মহিলাদের কিছুটা সাহায্য হত বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE