জখম বঙ্কিম মণ্ডল। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
ভরদুপুরে মোটর বাইক থামিয়ে একটি সিমেন্ট ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থার কর্মী তৃণমূল নেতাকে গুলি করে তিন লক্ষ টাকা লুঠ করে পালাল তিন দুষ্কৃতী। মঙ্গলবার মালদহের চাঁচল মোবারকপুর কালীতলা বাজার এলাকায় এই ঘটনার পরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। হয় পথ অবরোধ। পুলিশ জানায়, গুলিবিদ্ধ বঙ্কিম মণ্ডল চাঁচলের অলিহন্ডা অঞ্চল তৃণমূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
ঘটনার পরে পুলিশের বিরুদ্ধে দেরিতে পৌঁছনোর অভিযোগ তুলে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ পৌঁছলে বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুলিশ অফিসারদের। চাঁচলের আইসি তুলসীদাস ভট্টাচার্য এলাকায় গিয়ে দুষ্কৃতীদের ধরা হবে বলে আশ্বাস দেওয়ার পর ৩ ঘণ্টা বাদে অবরোধ ওঠে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই তৃণমূল নেতাকে চাঁচল থেকে মালদহ ও সেখান থেকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। তাঁর পিঠের বাঁ দিকে গুলি লেগেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী হলেও এক ভোটে হেরে যান বঙ্কিমবাবু। পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক জন দুষ্কৃতী গুলি করে টাকা নিয়ে পালায়। পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরতে তল্লাশি শুরু করেছে।” পুলিশের নামে অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, “কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।”
ঘটনার পর অবরোধ স্থানীয় বাসিন্দাদের। ছবি: বাপি মজুমদার।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বঙ্কিমবাবু ‘ন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন’ নামে চাঁচলের একটি সিমেন্ট ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থার কর্মী। এ দিন বকেয়া আদায় করে তিনি চাঁচল ফিরছিলেন। সওয়া ১২টা নাগাদ মোবারকপুর কালীতলা বাজার পার হয়ে কিছুটা এগোতেই তাঁর মোটরবাইক থামায় তিন দুষ্কৃতী। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তাকে টাকার ব্যাগ দিতে বলে দুষ্কৃতীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই সময় রাস্তায় গাড়ি খুব একটা ছিল না। কিছু লোকজন থাকলেও দুষ্কৃতীরা বন্দুক উঁচিয়ে তাঁদের গুলি করার হুমকি দেওয়ায় কেউ সামনে যাননি। ব্যাগ নিয়ে ধ্বস্তাধ্বস্তির সময় হঠাৎ এক দুষ্কৃতী তাঁর পিঠে গুলি চালায়। গুলি খেয়ে বঙ্কিমবাবু লুটিয়ে পড়তেই দুষ্কৃতীরা তাঁর ব্যাগ কেড়ে নিয়ে একটি মোটর বাইকে সকলে চেপে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে বিহারের দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার। দুষ্কৃতীরা বিহারের দিকে পালিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ পুলিশের।
যে বাড়ির সামনে বঙ্কিমবাবুকে গুলি করা হয় সেই আজিজুর রহমানের বাড়িতে ছিলেন তাঁর পুত্রবধূ মিলি বিবি। পাশেই রাস্তায় খড় শুকোচ্ছিলেন আশরিফা বিবি। দু’জনেই জানান, গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ার পরও ওই যুবক মোবাইলে ফোন করে কাউকে কিছু বলছিলেন। ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরছিল। পরে ওই যুবক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কালীতলা বাজার থেকে দুই সিমেন্ট ব্যবসায়ী বিক্রম ও চারু সাহা তাঁকে চাঁচল হাসপাতালে নিয়ে যান।
এরপর পথ অবরোধ করে শুরু হয় বিক্ষোভ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে খবর দেওয়া হলেও মাত্র আট কিলোমিটার দূরে পৌঁছতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। এই অভিযোগে পুলিশকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু হয়। ঊর্ধ্বতনদের আসার দাবি তুলে পাঁচ পুলিশকর্মীকে ঘেরাও করে রাখা হয়। চাঁচল ১ ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, “পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে গেলে দুষ্কৃতীদের ধড়া পড়ার সম্ভাবনা ছিল।” বঙ্কিমবাবু যে সংস্থায় কাজ করেন, সেই সংস্থার মালিক আসফাক আলম বলেন, “প্রকাশ্যে দিনের বেলা এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতেই পারছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy