দল ভাঙানোর চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতম দেবকে কটাক্ষ করলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। রবিবার শিলিগুড়িতে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানান, সিপিএমের জনপ্রতিনিধিদের প্রলোভন দেখিয়ে, চাপ দিয়ে দল ভাঙানোর খেলায় নেমেছে তৃণমূল। এ নিয়ে অতীতেও সমালোচনা করেছেন তিনি। এ দিন সমালোচনা করতে গিয়ে অশোকবাবু টেনে আনেন তাঁর বাড়িতে গৌতমবাবুর যাওয়ার প্রসঙ্গ।
অশোকবাবু বলেন, “আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম সে সময় গৌতমবাবু নানা সুযোগসুবিধা চাইতে প্রায়ই আমার বাড়িতে আসতেন। ববারান্দায় দীর্ঘক্ষণ বসেও থাকতেন। অনেকেই তা জানেন। কিন্তু বিরোধী দল করেন বলে কখনও তাঁকে সিপিএমে যোগ দিতে বলিনি। অথচ গৌতমবাবু ওই সংকীর্ণ রাজনীতি করছেন। আমাদের নেতাদের প্রলোভন দেখিয়ে দলে টানতে চেষ্টা করছেন।” অশোকবাবুর এই মন্তব্য ঘিরে তৃণমূলে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তাদের একাংশের বক্তব্য, গৌতমবাবু যদি গিয়েও থাকেন সৌজন্যের খাতিরে তা প্রকাশ্যে আনা ঠিক হয়নি। আর একাংশের দাবি, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী নিজেকে প্রাসঙ্গিক করতে এ ধরনের কথা বলেছেন। গৌতমবাবু বলেন “অশোকবাবু মিথ্যে কথা বলছেন। তাঁর কথার জবাব দিতে চাই না। তাঁরা নিজেদের দল বাঁচান। তাঁদের নেতা-নেত্রী, জন প্রতিনিধিরা বর্তমান রাজ্য সরকারের উন্নয়ন কাজে সামিল হতে দলে দলে আমাদের দলে আসছেন। ভবিষ্যতে অশোকবাবুরা দলের ঝান্ডা ধরার মতো লোকও পাবেন না।”
গৌতমবাবুর নির্বাচনী ক্ষেত্রে থাকা ডাবগ্রাম-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় দখল করে বামেরা। গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ টি আসনের মধ্যে ৮টিতে জিতেছে সিপিএম। তৃণমূল ২টিতে। সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্যদের তৃণমূল দলে সামিল করে গ্রাম পঞ্চায়েত, রাজগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি দখল করতে চাইছে বলে অভিযোগ তোলেন অশোকবাবু, দলের জেলা কমিটির কার্যনির্বাহী সম্পাদক জীবেশ সরকার। জীবেশবাবুর অভিযোগ, ইতিমধ্যেই একাধিক ক্ষেত্রে বামেদের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের দলে সামিল করে বিভিন্ন পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে তৃণমূল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে একটি আসন না পেলেও সিপিএম এবং কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্যদের দলে সামিল করে মহকুমা পরিষদ দখলে নেয় তৃণমূল। জীবেশ বলেন, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে কী ভাবে ক্ষমতা দখল করা যায় সেই চেষ্টা করছেন গৌতমবাবুরা। বিষয়টি নিন্দনীয়।” তবে ডাবগ্রাম-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে তাদের ৭ জন সদস্য তৃণমূলের চাপ, শাসক দলের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে দলেই রয়েছেন বলে দাবি করেন।
এ দিন সমরনগর বউবাজারে তৃণমূলের দলীয় অনুষ্ঠানে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের হাত থেকে পতাকা নেন ডাবগ্রাম ১ পঞ্চায়েতের সদস্য সুরেন রায় এবং ওই এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য লতিকা দাস রায়। অনুগামী-সহ তৃণমূলে যোগ দেন কৃষ্ণ বর্মন নামেন সিপিএমের ডাবগ্রাম জোনাল কমিটির এক সদস্য। এ দিন এই সব খবর পেয়ে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দল ভাঙানোর অভিযোগ তোলেন অশোকবাবু।