Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মহিলা কমিশন কি মৃত, প্রশ্ন প্রাক্তন চেয়ারপার্সনের

“পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশন কি মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছে?”, সোমবার ইংরেজ বাজারের নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এই প্রশ্ন তুললেন রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন মালিনী ভট্টাচার্য। কেন না, ওই মহিলার পাশে দাঁড়াতে এখনও কমিশনের তরফে কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বলে তিনি মনে করেন। মালিনী দেবী এ দিন বলেন, “বর্তমানে রাজ্য মহিলা কমিশন বেঁচে রয়েছে কি না তা বোঝা যাচ্ছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

“পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশন কি মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছে?”, সোমবার ইংরেজ বাজারের নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এই প্রশ্ন তুললেন রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন মালিনী ভট্টাচার্য।

কেন না, ওই মহিলার পাশে দাঁড়াতে এখনও কমিশনের তরফে কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বলে তিনি মনে করেন। মালিনী দেবী এ দিন বলেন, “বর্তমানে রাজ্য মহিলা কমিশন বেঁচে রয়েছে কি না তা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ রাজ্য মহিলাদের উপর একের পর এক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অথচ নির্যাতিতার পাশে দাঁড়ানো দূর অস্ত্‌, তাঁদের হয়ে সামান্য বিবৃতি দিতে এগিয়ে আসছে না তারা। মালদহে যে ঘটনা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। অথচ তা নিয়ে মহিলা কমিশনের সদস্যরা চুপ রয়েছেন।” তাঁরা যখন পদে ছিলেন তখনকার সঙ্গে বর্তমানে কমিশনের ভূমিকার ‘আকাশ-পাতাল’ ফারাক বলে দাবি করেন। তাঁর দাবি, সে সময় সামান্য কিছু ঘটলেই মহিলা কমিশনের তরফে প্রতিনিধি দল পাঠানো হত। এখন কমিশনের সেই ভূমিকা নজরে পড়ছে না। রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “বামফ্রন্টের আমলে মহিলাদের নিরাপত্তা কী ছিল মানুষ তা জানেন। প্রশাসন দ্রুত ওই মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছে।”

মালিনী দেবীর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন উত্তর মালদহের সাংসদ তথা জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌসম বেনজির নূর। তবে সেই কথা মানতে নারাজ মহিলা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য শেহনাজ কাদরি। তিনি বলেন, “আমি যখন পদে ছিলাম খুব দ্রুততার সঙ্গে নির্যাতিতা মহিলাদের পাশে দাঁড়াতাম। এখনও সেই কাজের ধারা বজায় রাখা হয়েছে। আমাদের সরকার এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সব সময়ই উদ্যোগী।”

প্রসঙ্গত, ইংরেজবাজারের নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষীঘাটের এক বিধবা মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা এবং বাধা দিতে গেলে তাঁর বাবাকে লোহার রড দিয়ে মারধরের ঘটনায় পুলিশ এবং শাসক দলের ভূমিকা নিয়ে রাজ্য জুড়েই হইচই পড়েছে। রাজ্যের দুই মন্ত্রীর মন্তব্যে চাপে পড়ে যায় শাসক দল। শুরুতে ওই মহিলার পাশে কেউ না দাঁড়ালেও বর্তমানে শাসক বিরোধী একাধিক রাজনৈতিক দল পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছে। জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে পথে নেমেছে। গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদস্যরাও মহিলা এবং তাঁর পরিবারে পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা সহযোগিতা করলে মহিলা থানায় ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে মামলাও রুজু করেন।

এ দিন দুপুরে ওই নির্যাতিতা মহিলার বাড়িতে যান রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন তথা গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সভানেত্রী মালিনী ভট্টাচার্য, সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মিনতি ঘোষ-সহ অন্যান্য নেতানেত্রীরা। তাঁরা গ্রামে পৌঁছলে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু সমর্থক বিক্ষোভ দেখান বলে অভিযোগ।

মালিনীদেবী বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিছু মহিলা আমাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা আগে থেকেই সেখানে জমায়েত হয়েছিলেন। যাতে আমরা অনুরোধ করার পর তারা বিক্ষোভ তুলে নেন।” গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদক রত্না ভট্টাচার্যর ্ভিযোগ, তৃণমূল নেতৃত্বের মদতে ওই মহিলারা এসেছিলেন। তারা নির্যাতিতা ‘খারাপ’ প্রমাণ করতে মরিয়া চেষ্টা করছেন। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য অনিতা শীল চৌধুরীর স্বামী কৃষ্ণবাবু বলেন, “এখানে দলের কোন ব্যাপার নেই।”

এ দিন নির্যাতিতা বলেন, “আমি দিন মজুরি করে সংসার চালাতাম। বর্তমানে বাবা হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন রয়েছে। আমি কাজ করতে যেতে পারছি না। সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি চাই।” এ দিন গণতান্ত্রিক মহিলা সংগঠনের তরফে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে পুলিশ সুপারের কাছে যাওয়া হয়। পুলিশষ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দবির বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

women commission chairperson malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE