Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

রায়গঞ্জে হোমের শৌচাগার থেকে উদ্ধার ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ

হোমের শৌচাগার থেকে এক কিশোরীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জের সূর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমে। ওই হোম সমাজকল্যাণ দফতরের অধীন। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম পলি গগই (১৬)। বাড়ি অসমের ধামচি এলাকায়। শৌচাগারের জলের পাইপে ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় পলির মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৮
Share: Save:

হোমের শৌচাগার থেকে এক কিশোরীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জের সূর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমে। ওই হোম সমাজকল্যাণ দফতরের অধীন। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম পলি গগই (১৬)। বাড়ি অসমের ধামচি এলাকায়। শৌচাগারের জলের পাইপে ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় পলির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। গত ২২ মে চোপড়া থানা এলাকায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরির সময়ে পলিকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির হাতে তুলে দেয়। সেখান থেকে সরকারি হোমে পাঠান হয় তাকে। সমিতির দাবি, পলির দেওয়া ঠিকানা ও ফোন নম্বরের সূত্রে বহু চেষ্টা করেও কারও হদিস মেলেনি।

এই হোমে মূক ও বধিরদের সঙ্গে স্বাভাবিক কিশোর-কিশোরীরাও থাকে। গত ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর সূর্যোদয়ের ওই হস্টেলের ওই শৌচাগার থেকেই রায়গঞ্জের ভাটোল জিনাতপুর এলাকার বাসিন্দা তালমনি কিস্কু (১৫) নামে তেমনই এক কিশোরীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। গত জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত হোমের পাঁচিল টপকে ও গ্রিল কেটে ৯ জন আবাসিক কিশোরের পালানোর ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে অবশ্য ৫ জনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

তাই হোম কর্তৃপক্ষের নজরদারি নিয়ে প্রশাসনিক মহলেই প্রশ্ন উঠেছে। কেন শৌচাগারে দীর্ঘ সময় থাকলেও হোমের পাহারায় থাকা কর্মীরা খেয়াল করেননি, তা নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে। ওই কিশোরীর উপরে শারীরিক কিংবা মানসিক কোনও নির্যাতন হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখারও দাবি তুলেছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক স্মিতা পান্ডে বলেন, “ওই কিশোরীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হয়েছে।” তিনি জানান, হোমের কোনও কর্মী বা আধিকারিকের গাফিলতি প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর কথায়, “স্থানান্তরের কাজে সমস্যায় নতুন হোমে পাঠাতে দেরি হচ্ছে।”

সূর্যোদয়ের কিশোর ও কিশোরীদের পৃথক দু’টি হস্টেলে বর্তমানে ৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী মূক ও বধির ৪২ জন ছেলে ও ৩৯ জন মেয়ে রয়েছে। তাদের সঙ্গেই রয়েছে ৫ জন স্বাভাবিক কিশোর ও ১৬ জন স্বাভাবিক কিশোরী। ওই হোমে ২৫ জন করে মূক ও বধির কিশোর-কিশোরীদের রাখার পরিকাঠামো রয়েছে। সেখানে স্বাভাবিক কিশোর কিশোরীদের রাখার কোনও সরকারি নির্দেশিকা নেই। হোমের অধ্যক্ষ পার্থসারথি দাস বলেন, “হোমে কর্মী আধিকারিক ও পরিকাঠামোর অভাব থাকায় রাজ্য সরকারের কাছে একাধিকবার স্বাভাবিক কিশোর কিশোরীদের জন্য একটি হোম তৈরির দাবি জানানো হয়েছে। বাড়তি আবাসিকদের চাপ ও পরিকাঠামোর অভাবে আবাসিকদের উপর সব সময় ঠিক মতো নজরদারি রাখা সম্ভব হয় না।” জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সুনীলকুমার ভৌমিক জানান, “যেহেতু ওই কিশোরী হোম কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে ছিলেন, তাই সমিতির তরফে হোম কর্তৃপক্ষের ভূমিকা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”

জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ ও বিজেপি-র জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী একই সুরে হোম কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন। তাঁদের সন্দেহ, “নিশ্চয়ই ওই হোমে গোলমাল হচ্ছে। না হলে বারবার ঘটনা ঘটছে কেন?” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অনিরুদ্ধ ভৌমিক উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চেয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

girl suicide toilet raiganj home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE