জখম অঙ্কুর বর্মন। ফালাকাটা হাসপাতালে। রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।
মৃত মায়ের আঁচলই বাঁচিয়ে দিল তিন বছরের এক শিশুপুত্রকে।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে একটা নাগাদ কোচবিহারের ঘোকসাডাঙায় দোলং চা বাগানের কাছে ট্রেন লাইনের মাঝখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অঙ্কুর বর্মন নামে বছর তিনেকের ওই শিশুপুত্রকে। সেখানেই পড়ে ছিল তার মা প্রণতি বর্মনের (২৭) দেহ। ট্রেনের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছেন তিনি। পুলিশের ধারণা, আত্মহত্যা করতেই প্রণতিদেবী তাঁর ছোট ছেলেকে আঁচলে বেঁধে ঝাঁপ দিয়েছিলেন ট্রেনের সামনে। তিনি মারা যান। কিন্তু অঙ্কুর গিয়ে পড়ে লাইনের মাঝখানে পাথরকুচির উপরে। তারপরে এক ঘণ্টা সেখানেই পড়েছিল অঙ্কুরও। সেই সময়ের মধ্যে ওই লাইন দিয়ে দু’টি মালবাহী ট্রেন গিয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর। ট্রেনের তলায় পড়ে থেকেও অঙ্কুর বেঁচে গিয়েছে। সে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু আঁচলের শক্ত বাঁধনের জন্যই তাকে মায়ের দেহের পাশে শুয়ে থাকতে হয়েছিল। ট্রেনের আঘাত লাগেনি তার গায়ে।
তবে প্রণতিদেবী তাকে নিয়ে ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ায় কিছুক্ষণের জন্য অঙ্কুর অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। পরে জ্ঞান ফিরে পেয়েও সে অবশ্য মায়ের শাড়ির বাঁধনের জন্যই উঠতে পারেনি। তার কপালে চোট লেগেছে। সেলাইও করতে হয়েছে। সকালে বাবাকে দেখার পর থেকে একবারের জন্যও আর তাঁকে কাছ ছাড়া করতে চাইছে না। ফালাকাটা গ্রামীণ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার আতঙ্ক কাটেনি। কথা বলছে খুব সামান্য।
প্রণতিদেবীর বাড়ি ঘোকসাডাঙার বড়শোলমারি এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, পেশায় রাজমিস্ত্রি অরুণ বর্মনের সঙ্গে বছর নয়েক আগে লাগোয়া রামঠেঙা গ্রামের বাসিন্দা প্রণতিদেবীর বিয়ে হয়। তাদের দুই ছেলে। বড় ছেলে মিহিরের বয়স সাত। ছোট অঙ্কুর। বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে দশটা নাগাদ অন্য দিনের মতো পরিবারের সবাই খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমোতে যান। অরুণবাবু জানান, রাত একটা নাগাদ তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে দেখতে না পেয়ে খোঁঁজ শুরু করেন। প্রতিবেশীদের কয়েকজনকেও ডেকে তোলেন। কিন্তু কেউ কোনও খবর জানাতে পারেননি। তাঁর দাবি, “আমার স্ত্রীর মানসিক অসুস্থতা ছিল, চিকিৎসাও করিয়েছিলাম। তাই বলে এমন কাণ্ড ঘটাবে ভাবতে পারিনি।” প্রণতিদেবীর কাকা রবীন্দ্র বর্মন অবশ্য বলেন, “প্রণতির মানসিক অসুস্থতার কথা কখনও শুনিনি। নিজেরা পছন্দ করেই ওরা বিয়ে করেছিল। কখনও পারিবারিক অশান্তির কথাও শুনিনি।”
তিনি জানান, কেন বাচ্চাটিকে নিয়ে প্রণতিদেবী আত্মহত্যা করতে গেলেন, তা নিয়ে তাঁরাও ধন্দে রয়েছেন।
প্রণতিদেবীর দেহ পাওয়া গিয়েছে ফালাকাটা ও গুমানিহাট স্টেশনের মাঝখানে। জিআরপি-র এক আধিকারিক বলেন, সাধারণত দুর্ঘটনা হলে চালকেরা তা নিকটবর্তী স্টেশনে জানিয়ে দেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও রিপোর্ট ওই দুই স্টেশনের কোনওটিতেই করা হয়নি। তবে তাঁদের অনুমান, রাত পৌনে বারোটার সময়ে কোনও মালবাহী ট্রেনের সামনেই ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ওই মহিলা।
রেললাইনের কাছেই বাড়ি সুশীল বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির। তিনিই রাতে নির্জন লাইনের দিক থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পান। সেখানে গিয়ে দেখেন, অঙ্কুর পড়ে রয়েছে মায়ের দেহের পাশে। সুশীলবাবু দ্রুত পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে পৌনে একটা নাগাদ অঙ্কুরকে উদ্ধার করে।
এ দিন সকালে পুলিশের কাছ থেকেই খবর পেয়েছেন অরুণবাবু।
এ দিনই সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের তরফ থেকে সুশীলবাবুকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy