Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লক্ষ্য জলপাইগুড়ি, পুরসভা জয়ে ঘর গোছাচ্ছে বিজেপি

চার বছর আগেও সব ওয়ার্ডে প্রার্থী মিলছিল না। এখন সেই দলই পুরসভা জয়ের স্বপ্ন দেখছে। বিজেপি-হাওয়ার রেশ জিইয়ে রেখে আগামী বছর জলপাইগুড়ি পুরসভা দখলে জোরকদমে নেমেছে দল। চার বছর আগেও অবশ্য ছবিটা ছিল একদম আলাদা। পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টির বেশি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। অথচ এ বারের লোকসভা ভোটের নিরিখে শহরের দু’টি ওয়ার্ডে সব দলের থেকে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। আটটি ওয়ার্ডে তারা পিছনে ফেলে দিয়েছে টানা ১১ বছর পুরসভায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০১:৩৬
Share: Save:

চার বছর আগেও সব ওয়ার্ডে প্রার্থী মিলছিল না। এখন সেই দলই পুরসভা জয়ের স্বপ্ন দেখছে। বিজেপি-হাওয়ার রেশ জিইয়ে রেখে আগামী বছর জলপাইগুড়ি পুরসভা দখলে জোরকদমে নেমেছে দল।

চার বছর আগেও অবশ্য ছবিটা ছিল একদম আলাদা। পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টির বেশি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। অথচ এ বারের লোকসভা ভোটের নিরিখে শহরের দু’টি ওয়ার্ডে সব দলের থেকে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। আটটি ওয়ার্ডে তারা পিছনে ফেলে দিয়েছে টানা ১১ বছর পুরসভায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে। তার মধ্যে ৬টি ওয়ার্ডে কংগ্রেস রয়েছে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। প্রাপ্ত ভোটের নিরিখেও বিজেপি কার্যত কংগ্রেসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডে কংগ্রেস এবং বিজেপির মোট ভোটের ব্যবধান মাত্র সাতশোর কাছাকাছি। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা তাই বলছেন, “লোকসভার পরে আমাদের লক্ষ্য আগামী বছরের পুরসভা ভোট।”

জলপাইগুড়ি পুরসভায় বর্তমানে ১৬টি আসন কংগ্রেসের দখলে। আটটি বামেদের ও একটি তৃণমূলের দখলে। লোকসভা ভোটের নিরিখে জলপাইগুড়ি পুর এলাকা থেকে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। দ্বিতীয় স্থানে বামফ্রন্ট, তৃতীয়তে কংগ্রেস ও সামান্য ভোটের ব্যবধানে চতুর্থ স্থানে রয়েছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের প্রাথমিক হিসেবের নিরিখে ১৫টি ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে। বামফ্রন্ট ছ’টি ওয়ার্ডে এবং কংগ্রেস, বিজেপি দু’টি ওয়ার্ডে শীর্ষে রয়েছে। কংগ্রেস সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, লোকসভা ভোটের ধারা পুরভোটে পড়বে না। কারণ পুরভোটের প্রেক্ষিত ভিন্ন। তবে শহর এলাকায় বিজেপির উত্থান ও আটটি ওয়ার্ডে কংগ্রেসের থেকেও বিজেপির এগিয়ে থাকার ঘটনায় উদ্বিগ্ন কংগ্রেস নেতারা। লোকসভা ভোটে বিজেপি এই ভোট ধরে রাখতে পারলে পুরবোর্ডে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসেরই আশঙ্কাই সবচেয়ে বেশি বলে মানছেন দলের নেতারাও।

এই পরিস্থিতি কাজে লাগাতে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছে বিজেপি। জলপাইগুড়ি শহর ও লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকায় জোরকদমে সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করেছে তারা। ইতিমধ্যেই শহর লাগোয়া অন্তত পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ডের ক্ষমতাসীন সদস্য-সদস্যেরা বিজেপিতে যোগ দিতে চলছেন বলে দলের সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই তালিকায় বাম শরিক দলের এক শীর্ষ নেতাও রয়েছেন। সেই নেতা এবং গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে গত সোমবার সন্ধ্যায় বিজেপি নেতাদের বৈঠকও হয়েছে বলে সূত্রের খবর। একই ভাবে শহরের বাম কাউন্সিলরদের একাংশও বিজেপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও, বিজেপির তরফে অবশ্য বাম কাউন্সিলরদের থেকেও পুরসভায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস কাউন্সিলরদের নিয়ে আগ্রহ বেশি।

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর জলপাইগুড়িতে পুরসভা ভোট হওয়ার কথা। লোকসভা ফল প্রকাশের পরেই বিজেপির তরফে কংগ্রেসের তিন কাউন্সিলরকে দলে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। দলত্যাগ বিরোধী আইন এড়াতে একসঙ্গে কমপক্ষে ছ’জন কাউন্সিলরকে দল ছাড়তে হবে। যদিও, বিজেপি সূত্রের খবর পুরভোটের ৬ মাস আগে বা কাছাকাছি সময়ে কংগ্রেস কাউন্সিলররা দল ছেড়ে এলে আইন কার্যকর করার প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হবে না। একটি ওয়ার্ডে তো কাউন্সিলরকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ফের ভোট লড়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দল সূত্রের খবর প্রতিটি ওয়ার্ডেই দলের কমিটি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রতিটি কমিটির শীর্ষে দু’জন করে পদাধিকারী থাকতে পারেন বলে খবর। তারমধ্যে এক জন দলের সংগঠন অন্য জন এলাকায় পরিচিত কোনও বিদ্বজনকে রাখা হতে পারে। দলের সাধারণ সম্পাদক বাপি গোস্বামী বলেন, “বাসিন্দারা বিজেপির প্রতি যে আস্থা প্রকাশ করেছেন তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজ শুরু হয়েছে। অনেকেই দলে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।”

জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা পর্যবেক্ষক মোহন বসু বলেন, “লোকসভা ভোট আর পুরভোটের প্রেক্ষিত এক নয়। এই ফলাফলে কোনও কিছু বিচার হয় না। বাসিন্দাদের পুর পরিষেবা পৌঁছে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।” এ দিকে, ২০১০ সালের পুরভোটে একা লড়ে ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল মাত্র একটি আসন। লোকসভা ভোটের ফলে ১৫টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকার ঘটনায় স্বভাবতই উৎসাহিত তৃণমূল। দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা লোকসভা ভোটের দায়িত্বে থাকা সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দারা লোকসভা ভোটেই আগামী দিনের দিশা দেখিয়েছেন। পুরসভায় ক্ষমতাসীনদের প্রতি বাসিন্দাদের অনাস্থা প্রকাশ পেয়েছে। বাসিন্দারাই চাইছেন আগামী বছরে পুরসভায় বোর্ড গঠন করুক তৃণমূল।” পুরসভায় বামেদের বিরোধী দলনেতা সিপিএম কাউন্সিলর প্রমোদ মণ্ডল বলেন, “আমরা ফলাফল পর্যালোচনা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jalpaiguri municipality bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE